চলমান বিশেষ যৌথ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্ট চললেও নিরাপদে আছেন শত কোটি টাকার মালিক ফতুল্লার কাশীপুরের দুই ‘ডেভিল’ রনি ও আরিফ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা ও একাধিক মামলা থাকলেও পতিত আওয়ামী আমলের মতো বেপরোয়া চলাচল দুই সহোদরের।

আরিফ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য ও সাইফুল ইসলাম রনি কাশিপুরের ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের পতনের পরে অনেকে পালিয়ে গেলেও নিজেদের সাম্রাজ নিয়ে বীরদর্পে রয়েছে ফ্যাসিস্টের এই দুই দোসর। 

কাশীপুরের তৃণমূলের বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিগত সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর অমানবিক নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আরিফ ইকবাল ও ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রনি।

এলাকায় এই দুই ভাই মিলে অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিলো। শিল্পপতি আসলামী সানীর আর্শীবাদে এই দুইজন এলাকার জমি দখল, মাদক ব্যবসা, ঝুট ব্যবসা ও জোর করে ইট-বালুর ব্যবসাসহ নানা অপরাধ করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যায়। বিএনপি নেতারা মনে করেছিল পট পরিবর্তনের পরে এরা গা ঢাকা দিবে। কিন্তু তাদের সাম্রাজ্য বহাল দেখে তারা হতবাক।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে দুই ভাই। এমনকি তাদেরকে নানাভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন  সেসব নেতারা। নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। দলের নেতাদের ভুলভাল বুঝিয়ে তলে তলে অপকর্মের ভাগবাটোয়ার করে চলছেন। কিন্তু কর্মীরা এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাদের সান্তনা দেয়-‘আরে সামাজিক বিষয়’। 

দুই ভাইয়ের যেভাবে উত্থান

২০০৮ সালে  আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে কাশীপুরে ঝুট ব্যবসার সূত্র ধরে রনির পরিচয় হয় ব্যবসায়ী আসলাম সানীর সঙ্গে। রনি পরে আরিফকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আসলাম সানী হাটখোলা ও এনায়েতনগরে জমি কেনা ও দেখাশোনার জন্য রনি-আরিফকে দায়িত্ব দেয়। অনেক নিরীহ মানুষের জমি জবর-দখলও করে তারা।

আসলামী সানীর হয়ে কাজ করতে শুরু করে দুই ভাই। এরপর দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম শরু করে। এলাকায় প্রচার রয়েছে, সানীর সুপারিশে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হয় আরিফ। এরপর আর তাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিনে দিনে গড়ে তোলে টাকার পাহাড়। 

দুই ভাইয়ের যতো অপকর্ম

মূলতঃ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও আসলামী সানীর হয়েই অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেয় দুই ভাই। আসলামী সানীর হয়ে জমি দখল, নদী দখল, শ্রমিক নির্যাতন এমনকি শ্রমিক হত্যারও অভিযোগ রয়েছে। 

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ৭ সেপ্টেম্বর শিরিনা বেগম একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাইফুল ইসলাম রনি ২৪নং আসামী। এর আগে ২০০৮ সালে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ ধরা পড়ে। সে বছর ফতুল্লা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা ৫৫(১১)০৮ দায়ের করে পুলিশ।

মামলাটি পরবর্তীতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। ওই মামলাটি নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জেলা জজ আদালতে রায়ের অপেক্ষায় আছে। রনির বিরুদ্ধে পিটিশন মামলা (১৭১/১৭) করেন আমিন নামের এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে তা সিআর-৪৭০/১৭ মামলায় রূপান্তর হয়। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা (২১০/১৮) আত্মসাৎ ও প্রতারণাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে মামলা করে হাটখোলার এলাকার আমিন নামের এক ব্যক্তি।

ওই মামলাটি এক পর্যায়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর রনিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআইর উপ-পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। শাহসুজা সড়কের মৃত শুক্কুর দেওয়ানের ছেলে নাসির উদ্দিন দেওয়ান জমি দখল সংক্রান্ত পিটিশন মামলা (১৯০/২০২১) করেছেন।  ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট জমি দখল সংক্রান্ত বিষয়ে মজনু নামের এক ব্যক্তি ফতুল্লা থানায় জিডি (নং-১২৪৯) দায়ের করেন। 

আরিফের নানা অপকর্ম

২০২২ সালে উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের প্রদীপ কুমার দাস নামের এক ব্যক্তির বালু কাটার ড্রেজার দল করে রাখা ও পরে কেটে বিক্রি করে দেয় আরিফ ইকবাল। এ ঘটনায় প্রদীপ কুমার দাস ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা করে। তাকে গ্রেফতারে র‌্যাব আরিফের বাড়িতে অভিযান চালালে সে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে গ্রেফতার এড়াতে সে দাড়ি কেটে ফেলে ক্লীন সেইভ করে নেয়। নানা অপরাধের সংবাদ প্রকাশ করায় নাবিলা নামের এক সাংবাদিককে হেনস্তা করে সে। পরে ওই নারী সাংবাদিক থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করে।   

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাইফুল ইসলাম রনিকে ফোন দেয়া হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন। অপরদিকে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরে নিজের মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন আরিফ ইকবাল। 

এদিকে এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির আহমেদ জানান, ডেভিল হান্ট অভিযান চলছে। ছোট-বড় কোন ডেভিলকে ছাড়া হবে না।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ দ য় র কর অপকর ম কম ট র আওয় ম আসল ম অপর ধ ব যবস ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার

চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিএনপির দুই নেতাকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

চাঁদাবাজি, দখলদারি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নান লস্কর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। এর মধ্যে মতলব উত্তরের আবদুল মান্নান লস্করকে চাঁদাবাজির মামলায় গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবদুল মান্নান লস্কর ও আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই অভিযোগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইমাম হোসেন গাজীকেও দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।  

এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের (মানিক) মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জেনেছেন। তবে এ ব্যাপারে  চিঠি এখনো পাননি। যেকোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটি অন্যান্য নেতার জন্যও একটি বার্তা ও শিক্ষা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার