দেশীয় সংবাদমাধ্যম আমন্ত্রণ পায়নি, দুঃখ প্রকাশ প্রেস সচিবের
Published: 12th, February 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনে যেতে আমন্ত্রণ পায়নি দেশীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। গুমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসা অনেকেই বাদ পড়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
দেশীয় সংবাদমাধ্যমকে না নেওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, গোপন বন্দিশালাগুলোর (আয়নাঘর নামে পরিচিত) কক্ষ ছোট এবং হাঁটার জায়গা অনেক সরু বলে সেখানে সবাইকে নিয়ে যাওয়া কঠিন।
আজ বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ঢাকার আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরায় তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন। এর দুটি র্যাব ও একটি ডিজিএফআই পরিচালনা করত।
পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন ছয়জন উপদেষ্টা, গুম কমিশনের প্রধানসহ পাঁচজন এবং গুমের শিকার আটজন।
দুপুরে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এর আগে বলা হয়েছিল, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকসহ প্রধান উপদেষ্টা আয়নাঘর পরিদর্শন করবেন। দেশি-বিদেশি মিডিয়ার কারা গিয়েছিলেন?
জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তাঁরা যে জায়গাগুলোতে গিয়েছেন, সেগুলোর ছবি দেওয়া হয়েছে। খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কক্ষ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে ইট ভেঙে যাতায়াতের পথ তৈরি করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি ‘লজিস্টিক্যালি’ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সে জন্য বিটিভি থেকে ক্যামেরাম্যান, পিআইডি থেকে ফটোগ্রাফার নেওয়া হয়েছে। আর প্রেস উইংয়ের একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন।
শফিকুল আলম বলেন, এ ছাড়া বাইরে থেকে নেওয়া হয়েছে আল–জাজিরা ও নেত্র নিউজ। নেত্র নিউজ বাংলাদেশ ফোকাসড (কেন্দ্রিক) একটি ওয়েবসাইট। তারা আয়নাঘরের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। আরেকজন সাংবাদিকও ছিলেন। এর বাইরে নিতে পারেননি, ‘লজিস্টিক্যালি চ্যালেঞ্জিং’ ছিল।
সব সাংবাদিক নিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রেস সচিব।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা
ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।
ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।
ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।
গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে। এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।