সম্প্রতি মানব পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার পথে মারা যান মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা হৃদয় হাওলাদার। পাচারের  ঘটনায় স্বজনের করা মামলায় মঙ্গলবার রাজধানীর ভাটারা ও ঢাকার দোহার থেকে মানব পাচার চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

তারা হলেন লিপন মাতুব্বর ও আনোয়ার ওরফে আনো মাতুব্বর। লিপন রাজৈর থানায় মিন্টু হাওলাদারের করা মামলার ও আনো মাতুব্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় নাজমিন বেগমের করা মামলার প্রধান আসামি। আজ বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে তোলা হবে।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ র‍্যাব-১০ এর সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, লিপনের ভাই তপন ওরফে মাসুদ মাতুব্বর লিবিয়া প্রবাসী। ভাইয়ের মাধ্যমে লিপন অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে লোক পাঠাতেন। সে জনপ্রতি ১৬ লাখ টাকা নিতেন। তাঁর কাজ ছিল ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আরেকটি চক্রের কাছে ভুক্তভোগীদের পৌঁছে দেওয়া। লিবিয়ায় আটক রেখে অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। টাকা পাওয়ার পর তাদের ভূমধ্যসাগরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তুলে দিতেন লিবিয়ায় থাকা লিপনের সহযোগীরা। লিপন গত ৩ থেকে ৪ মাসে ৬-৭ জনকে ইতালি পাঠানোর উদ্দেশে লিবিয়াতে পাঠিয়েছেন।

র‍্যাব জানায়, হৃদয় হাওলাদার (মৃত্যু হয়েছে) ও আনো মাতুব্বর একই এলাকার বাসিন্দা। হৃদয়কে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে তিনি সাড়ে ১৬ লাখ টাকা চুক্তিতে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় পাঠান।

হৃদয়কে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন করে ১৫ লাখ টাকা আদায় করেন আনো মাতুব্বর। এর পর চক্রটি আরও ১০ লাখ টাকা নেয়। মৃত্যুর আগে হৃদয় পরিবারকে জানান, তাঁকে ইতালি পাঠানোর উদ্দেশে লিবিয়ার সাগরপারে নেওয়া হয়েছে। পরে হৃদয়ের লাশের ছবি শনাক্ত করেন স্বজনরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ত ব বর

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ