ফাগুনের রং ধরতে শুরু করেছে অমর একুশে বইমেলায়। গত কয়েক দিন থেকে মেলায় লাল-হলুদরঙা শাড়ি পরে বিভিন্ন বয়সী নারীকে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। তারা মেলায় ঘুরছেন, ছবি তুলছেন ও বই কিনছেন। ঘুরেফিরে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
‘এ বছরের বইমেলা জুলাই ২৪ স্মৃতিতে স্মরণীয় হয়ে থাকলেও হুমায়ূন আহমেদের বই সমান আবেদন ধরে রেখেছে। অনেকে নির্দিষ্ট স্টলে এসে তাঁর বই খুঁজছেন। প্রয়াণের ১২ বছর পরও তাঁর প্রতিটি বই ও চরিত্র নতুন মনে হয়’– এভাবে গতকাল পাঠক আয়েশা ফিরোজ তাঁর হুমায়ূন-ভাবনা প্রকাশ করেন।
অন্যপ্রকাশের স্টলে ‘তেঁতুল বনে জোছনা’ খুঁজছিলেন তরুণ পাঠক শাহমিম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষকে উপহার দেব। সে জন্য খুঁজছি।’ স্টল ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ৪০ শতাংশ অন্যান্য বই, আর ৬০ শতাংশ হুমায়ূনের বই বিক্রি হচ্ছে। গতবারও তাই ছিল। তাঁর বই বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো ছন্দপতন বিগত ১২ বছরে হয়নি। বরং এবার তাঁর বই বেশি চলছে। কারণ, অভ্যুত্থানের সময় স্যারের দেয়াল উপন্যাসটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এবার সেটিও চলছে। এই প্রজন্মের তরুণরা স্যারের নতুন পাঠক হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন, এটা আশার বিষয়।’
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে হুমায়ূন আহমেদের তরুণ পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামীকাল শুক্রবার ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন। প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য হিমু, রূপা ও মিসির আলী সিরিজের বই খুঁজছেন তারা।
অনন্যা প্রকাশনীর উৎপাদন ব্যবস্থাপক প্রীতম আদনান বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ বিক্রি হয় হুমায়ূন আহমেদের বই। নানা বয়সী পাঠক এসে খুঁজে নিচ্ছেন তাঁর বইগুলো। মেলা প্রাঙ্গণ ও পরিস্থিতি ভিন্ন থাকলেও তাঁর বইয়ের কাটতির ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা এবারও পরিলক্ষিত হয়নি।’
তবে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘গত বছর মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই বিক্রি করেছি হাজার কপি, এবার সেখানে এখন পর্যন্ত ৫০ কপি গেছে। সায়েন্স ফিকশন চাইছেন পাঠকরা। জাফর ইকবালের বই দেখালে কেউ নিতে আগ্রহ বোধ করছেন না। কিন্তু তাঁর বড় ভাইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো। মৃত্যুর ১২ বছর পরও সবাই এসে খুঁজে তাঁর বই নিয়ে যাচ্ছেন।’
একটি স্টলে কোন বইয়ের কাটতি কেমন ও পাঠক কোন বই চাচ্ছেন, সে বিষয়ে ভালোভাবে বলতে পারেন একজন বিক্রয় প্রতিনিধি। জানতে চাইলে অনুপম প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আবির বলেন, ‘অয়োময়, চক্ষে আমার তৃষ্ণা, পাখি আমার একলা পাখি বইগুলো আমাদের স্টল থেকে খুব বেশি চলছে। আর হিমু, রূপা ও মিসির আলী সম্পর্কিত সেগুলোর জন্য আলাদাভাবে বলা লাগে না। অন্য বই বিক্রি করতে দেরি হলেও হুমায়ূন আহমেদের বই মেলা শুরুর দিন থেকেই চলছে।’
গতকাল মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অন্যদিন, অনন্যা, অন্বেষা, অনুপমের স্টলগুলোতে হুমায়ূন ভক্তদের ভিড় দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
অসংগতি
১২ দিন পার হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট দিয়ে ঢোকা ও বের হওয়ার পথে দু’পাশে থাকা হকার আবার বেড়েছে। এ ছাড়া নতুন করে শুরু হওয়া খাবার ও ফুলের হকারদের আধিপত্য বেড়েছে মেলা প্রাঙ্গণে।
নতুন বই
গতকাল এসেছে ৮৯টি নতুন বই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– সাইফুল ইসলামের সেলিম আল দীনের নাটক: আধার ও আধেয় (বাংলা একাডেমি), সামছুদ্দীন মাহমুদের টার্ক দ্বীপের সাদা দৈত্য (অন্যপ্রকাশ), মো.
মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্লোগান: বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারাবাহিকতায় বাকশাল গঠন, বাংলা সাহিত্যের দায় ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রাবন্ধিক হাসান রোবায়েত বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সব আন্দোলন-সংগ্রামে আমজনতার মুখের ভাষা থেকে স্লোগানের উদ্ভব। ২৪-এর অভ্যুত্থানেও আমজনতার ভাষায় রচিত স্লোগান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে।
আলোচক মঈন জালাল চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে দীর্ঘদিন আমাদের মনে জমে থাকা ক্রোধ জনমানুষের ভাষা হয়ে ২৪-এর অভ্যুত্থানের স্লোগানগুলোতে উঠে এসেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের দেশে ফ্যাসিবাদী চিন্তা-চেতনা গড়ে ওঠার পেছনে যে মাইলফলক রয়েছে, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যবহৃত স্লোগানগুলোর মধ্য দিয়ে সেগুলো আমরা অনুধাবন করতে পারি।
লেখক বলছি মঞ্চে আলোচনা করেন ফয়েজ আলম এবং সৈয়দ রনো।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিরিন জাহান এবং শাকিলা মতিন মৃদুলা। সংগীত পরিবেশন করেন বর্ণালী সরকার, রাজিয়া সুলতানা, মুন্নি কাদের, নুসরাত জাহান, ড. আফরোজা বেগম ইয়াসমিনসহ অনেকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল বই ব ক র প র ঙ গণ র বই ব আম দ র বইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) বিকেলে চালানো এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন।
রবিবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
ইরানে আবারো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরো জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলের নতুন হামলায় আইআরজিসির তৃতীয় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল ইরান।
রবিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। হতাহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী এবং বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ