Samakal:
2025-08-01@01:45:18 GMT

‘ডেভিল হান্ট’ কেন?

Published: 13th, February 2025 GMT

‘ডেভিল হান্ট’ কেন?

সপ্তাহখানেক ধরে চলছে ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশন। ইতোমধ্যে সারাদেশে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের অমর্যাদাকর শব্দ প্রয়োগ করা উচিত নয়। এ ধরনের শব্দ নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ন করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কিংবা আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক সত্ত্বেও কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রশ্নে যে কোনো নাগরিকের সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। আমাদের রাষ্ট্রকে যেন কোনো পরিস্থিতিতেই কেউ অকার্যকর বলে বিবেচনায় নিতে না পারে, সেদিকটার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রকৃত অর্থে ২০২৪ সালের প্রাক-নির্বাচন পরিস্থিতিতে আমরা ভূরাজনীতিতে গভীর সংকট সৃষ্টি করে রেখেছিলাম। গণতন্ত্র অর্থবহ করে তোলার কোনো ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অবশিষ্ট ছিল না। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই সংকট নিরসনের কোনো ধরনের সুযোগ না থাকলেও পরিস্থিতি বদলে দেয় ছাত্র-জনতার জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান।

অভ্যুত্থান ছিল অবশ্যম্ভাবী। তৎকালীন সরকার সাধারণ মানুষের মনোভাব এবং একই সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিপ্রায় বুঝতে ব্যর্থ ছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিপুল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ তরুণ। তারুণ্যনির্ভর সমাজ যে কোনো কিছু বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তারুণ্যের শক্তি, তারুণ্যের সাহসকে দমিয়ে রাখা যায় না।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস উতরে গেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিজনিত নিরাপত্তাহীনতা, হেফাজতে মৃত্যুর মতো ঘটনাসহ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের শীতলতায় সরকার বিচলিত না হলেও সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এক ধরনের অস্বস্তি সহজে অনুমেয়। এমন পরিস্থিতিতে ৫-৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক ধরনের তাণ্ডব দেখা গেছে। বিশেষত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর দিয়ে শুরু করে সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘরে যে প্রক্রিয়ায় বুলডোজার আর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা এক কথায় অগ্রহণযোগ্য। যদিও তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ; তথাপি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ ব্যতিরেকে এ ধরনের তাণ্ডব চালানোর বিষয় ভালোভাবে নেওয়া যায় না। মনে রাখতে হবে– প্রফেসর ইউনূস শান্তিতে নোবেলজয়ী। তাঁর সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে স্বনামধন্য মানবাধিকার কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত। উদ্বেগের বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘরে হামলার পাশাপাশি আমরা লক্ষ্য করেছি, সুনামগঞ্জে কৃষান চত্বরের ম্যুরালও ভেঙে ফেলা হলো। নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের আচরণকে অগ্রহণযোগ্য বলেই বিবেচনায় নিতে হবে।

আমরা সব অনিয়ম দূর করার পক্ষে। দুর্নীতি নির্মূল করা না গেলেও প্রতিকারের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা সময়ের দাবি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সবার আইনের সমান আশ্রয় লাভ, আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার ও আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের অধিকার রয়েছে। এই অধিকারগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়।
চলমান ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশন নামটা কীভাবে নির্ধারিত হয়েছে, জানি না। তবে যে শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে নাগরিকের মর্যাদার বিষয়টির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে হচ্ছে। আমরা কাউকে এ ধরনের ‘শব্দ’ বিশেষণে নির্ণয় করে দিতে পারি কিনা– বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।

আবু আহমেদ ফয়জুল কবির: মানবাধিকার কর্মী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত ত এ ধরন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮
  • জুলাইয়ে মব তৈরি করে ১৬ জনকে হত্যা, অজ্ঞাতনামা ৫১ লাশ উদ্ধার
  • শৈলকুপায় ইউপি কার্যালয়ে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬
  • ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেয়ায় বিএনপি নেতা আটক
  • গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল, আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে
  • ‘ভূমিকম্পে ছিন্নভিন্ন হওয়া দেশকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার’
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
  • ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন