অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার, ভুক্তভোগী ও সংবাদমাধ্যমের একটি দলের বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের মাধ্যমে জনপরিসরে ঘূর্ণয়মান অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলিয়াছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাস অতিক্রান্ত হইলেও এই গোপন বন্দিশালা অন্তরালে থাকিয়া যাইবার বিষয়ে জনমনে ক্ষোভও জমিয়া উঠিতেছিল। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ও বর্তমানে অকার্যকর এই সকল আয়নাঘর বুধবার পরিদর্শনের মাধ্যমে উহার বর্বর কাঠামো উন্মুক্ত হইবার মাধ্যমে এইরূপ বন্দিশালায় সংঘটিত নৃশংসতা কেবল জনসমক্ষে উন্মোচিতই হয় নাই; আয়নাঘরের অস্তিত্ব অস্বীকারকারীদের চাঁদবদনেও চুনকালি পড়িয়াছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত নিদর্শন এহেন আয়নাঘর যাহারা তৈরি করিয়াছিল, তাহাদের বিচারের আওতায় আনা এখন জনদাবি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধীদের উপর কতটা দমন-নিপীড়ন এবং বেআইনিভাবে নাগরিকদের ধরিয়া আনিয়া যেই বীভৎস নির্যাতন চালাইয়াছিল, আয়নাঘরের খণ্ডচিত্রই উহার প্রমাণ। নির্যাতনের প্রকৃত মাত্রা হয়তো ভুক্তভোগী ব্যতীত অন্যেরা কখনোই জানিবে না। এমনকি যাহারা নির্যাতনে প্রাণ হারাইয়াছে; তাহারা অভিজ্ঞতাও জানাইতে পারিবে না। প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেই কোনো নাগরিককে আটক করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করিতে হয়। অথচ অনেক নাগরিকের রাষ্ট্রীয় বাহিনী আটক করিলেও আদালতে হাজির না করিয়া বৎসরের পর বৎসর আয়নাঘরে আটকাইয়া রাখিয়াছিল। বুধবার আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা যথার্থই বলিয়াছেন, গত সরকার দেশে যে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ প্রতিষ্ঠা করিয়া গিয়াছে, আয়নাঘর তাহারই নমুনা। 
আমরা জানি, সমকাল গত আগস্টেই গুমের শিকার ছয় ব্যক্তির বিস্তারিত সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোপন বন্দিশালার অস্তিত্বের তথ্য জানাইয়াছিল। বস্তুত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালেই ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রামাণ্যচিত্রে ‘আয়নাঘর’ নামক গোপন কারাগারের প্রমাণ দিয়াছিল, সেখান হইতে মুক্ত হওয়া ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের নিকট প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই জাতিসংঘ জানাইয়াছিল, অন্তত পৌনে একশ মানুষ গুম হইয়াছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংস্থাও বরাবর বাংলাদেশের গুম খুন লইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিল। তৎসত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হইবার পূর্ব পর্যন্ত গুমের ঘটনা বন্ধ হয় নাই। এমনকি জুলাই আন্দোলনের সময়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্রনেতাদের তুলিয়া লইয়া গিয়াছিল। বর্তমান সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ ভূঁইয়াও তাহাদের আয়নাঘর চিহ্নিত করিয়াছেন। এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না, সমগ্র দেশেই ক্ষমতাচ্যুত সরকার বিবিধ প্রকার আয়নাঘর স্থাপনের মাধ্যমে ভীতির রাজত্ব স্থাপন করিতে চাহিয়াছিল।

আমরা জানি, আয়নাঘরের সহিত জড়িতদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার। সেই অনুযায়ী তাহার সরকার গঠনের তিন সপ্তাহের মধ্যেই গুম কমিশন গঠন করিয়াছে। এই সরকার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী কনভেনশনেও স্বাক্ষর করিয়াছে। আমরা প্রত্যাশা করি, গুম কমিশন আয়নাঘর তৈরির সহিত জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনিতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠিয়াছে, ৫ আগস্টের পর গোপন বন্দিশালার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করা হইয়াছে। কুঠুরির দেয়াল ভাঙাসহ বেশ কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসিলেও সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আইনজ্ঞরা জানাইয়াছেন, বিচারের ক্ষেত্রে উহা প্রতিবন্ধক হইবে না। আমরা চাই, আয়নাঘরগুলিকে অবিকৃত ও জাদুঘররূপে রাখা হউক। যাহাতে পরবর্তী শাসকরা এই ধরনের অপকর্ম করিতে না পারে। আয়নাঘরের হোতাদের বিচারও সকলের জন্য দৃষ্টান্ত হইয়া থাকিতে পারে। এই ক্ষেত্রে মামলা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-আইসিটিতে বিচার সেই প্রত্যাশা পূরণ করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 
৫ আগস্টের পূর্বে ও পরে গুমের শিকার অনেকেই আয়নাঘর হইতে ফিরিলেও এখনও অনেকে নিরুদ্দেশ। তাহাদের পরিবার যে আজও স্বজনের পথপানে চাহিয়া আছে; সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিবে কিনা, আমরা জানি না। কিন্তু আমরা এই ব্যাপারে নিঃসন্দেহ– বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার আয়নাঘরের হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ব্যতীত অসম্পূর্ণই থাকিয়া যাইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন দ শ ল সরক র র কর য় ছ ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

চুম্বন দৃশ্যের অভিজ্ঞতা ভয়ংকর ছিল: মধু

বলিউড অভিনেত্রী মধু শাহ। নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী মধু নামেই পরিচিত। মনি রত্নম নির্মিত ‘রোজা’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান। নব্বই দশকে একটি সিনেমায় চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করেন মধু, যা ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

কয়েক দিন আগে নিউজ১৮-কে সাক্ষাৎকার দেন মধু। এ আলাপচারিতা তিনি বলেন, “আজকাল সিনেমায় যে ধরনের চুম্বন দৃশ্য দেখা যায় এটি তেমন ছিল না। এটি ঠোঁটে খোঁচা দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা ছিল। সত্যি এটি আমার খারাপ লেগেছিল।”

চুম্বন দৃশ্যের অভিজ্ঞতা ভয়ংকর ছিল। তা জানিয়ে মধু বলেন, “শুটিং শুরু করার আগে আমাকে চুমু খেতে বলা হয়। কিন্তু তার আগে এ বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি। এ নিয়ে যখন প্রশ্ন করি, তখন তারা আমাকে পাশে নিয়ে গিয়ে কথা বলে। তারা আমাকে ব্যাখ্যা করে, এই দৃশ্যটি কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই কারণেই আমি চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করি। কিন্তু এটা ছিল আমার করা সবচেয়ে ভয়ংকর কাজ।”

চুম্বন দৃশ্যে যখন অভিনয় করেন, তখন মধুর বয়স ছিল ২২ বছর। তা স্মরণ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “সিনেমায় চুম্বন দৃশ্যটির কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সিনেমায় দৃশ্যটি অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য পরিচালকের সঙ্গে কোনো কথাও হয়নি। আমি এটি এড়িয়ে গিয়েছিলাম। কেবল বয়সের দিক দিয়ে নয়, আমি সবদিক থেকেই তখন খুব ছোট ছিলাম। এখনকার ২২-২৪ বছর বয়সি ছেলে-মেয়েরা ভীষণ চালাক। কিন্তু ২২ বছর বয়সে আমি খুব বোকা ছিলাম।”

১৯৯৬ সালে দীপা মেহতা নির্মাণ করেন ‘ফায়ার’ সিনেমা। এতে শাবানা আজমি, নন্দিতা দাস সমকামী চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সিনেমা পর্দার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে মধুর ধারণা বদলে দিতে শুরু করে। এ তথ্য উল্লেখ করে মধু বলেন, “আমি বলছি না, পর্দায় চুম্বন করা খারাপ। ‘ফায়ার’ সিনেমায় যখন শাবানাজির মতো অভিনেত্রীর অভিনয় দেখি, তখন আমার মনে হয়েছিল সত্যি তারা তাদের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে ফেলেছেন, যা আমি তখন করতে পারিনি। আমি সেই সব শিল্পীদের প্রশংসা করি, যারা মাথা ন্যাড়া করতে পারেন বা সিনেমায় সমকামীর ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন।”

১৯৯১ সালে তামিল ভাষার সিনেমার মাধ্যমে রুপালি জগতে পা রাখেন মধু। একই বছর ‘ফুল আউর কাঁটা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন এই অভিনেত্রী। হিন্দি সিনেমায় পা রেখেই নজর কাড়েন। ৫৬ বছরের মধু অভিনয়ে এখন খুব একটা সরব নন। তবে প্রতি বছরে দুই একটা সিনেমায় দেখা যায় তাকে। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ