হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন
Published: 13th, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার, ভুক্তভোগী ও সংবাদমাধ্যমের একটি দলের বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের মাধ্যমে জনপরিসরে ঘূর্ণয়মান অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলিয়াছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাস অতিক্রান্ত হইলেও এই গোপন বন্দিশালা অন্তরালে থাকিয়া যাইবার বিষয়ে জনমনে ক্ষোভও জমিয়া উঠিতেছিল। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ও বর্তমানে অকার্যকর এই সকল আয়নাঘর বুধবার পরিদর্শনের মাধ্যমে উহার বর্বর কাঠামো উন্মুক্ত হইবার মাধ্যমে এইরূপ বন্দিশালায় সংঘটিত নৃশংসতা কেবল জনসমক্ষে উন্মোচিতই হয় নাই; আয়নাঘরের অস্তিত্ব অস্বীকারকারীদের চাঁদবদনেও চুনকালি পড়িয়াছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত নিদর্শন এহেন আয়নাঘর যাহারা তৈরি করিয়াছিল, তাহাদের বিচারের আওতায় আনা এখন জনদাবি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধীদের উপর কতটা দমন-নিপীড়ন এবং বেআইনিভাবে নাগরিকদের ধরিয়া আনিয়া যেই বীভৎস নির্যাতন চালাইয়াছিল, আয়নাঘরের খণ্ডচিত্রই উহার প্রমাণ। নির্যাতনের প্রকৃত মাত্রা হয়তো ভুক্তভোগী ব্যতীত অন্যেরা কখনোই জানিবে না। এমনকি যাহারা নির্যাতনে প্রাণ হারাইয়াছে; তাহারা অভিজ্ঞতাও জানাইতে পারিবে না। প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেই কোনো নাগরিককে আটক করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করিতে হয়। অথচ অনেক নাগরিকের রাষ্ট্রীয় বাহিনী আটক করিলেও আদালতে হাজির না করিয়া বৎসরের পর বৎসর আয়নাঘরে আটকাইয়া রাখিয়াছিল। বুধবার আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা যথার্থই বলিয়াছেন, গত সরকার দেশে যে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ প্রতিষ্ঠা করিয়া গিয়াছে, আয়নাঘর তাহারই নমুনা।
আমরা জানি, সমকাল গত আগস্টেই গুমের শিকার ছয় ব্যক্তির বিস্তারিত সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোপন বন্দিশালার অস্তিত্বের তথ্য জানাইয়াছিল। বস্তুত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালেই ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রামাণ্যচিত্রে ‘আয়নাঘর’ নামক গোপন কারাগারের প্রমাণ দিয়াছিল, সেখান হইতে মুক্ত হওয়া ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের নিকট প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই জাতিসংঘ জানাইয়াছিল, অন্তত পৌনে একশ মানুষ গুম হইয়াছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংস্থাও বরাবর বাংলাদেশের গুম খুন লইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিল। তৎসত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হইবার পূর্ব পর্যন্ত গুমের ঘটনা বন্ধ হয় নাই। এমনকি জুলাই আন্দোলনের সময়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্রনেতাদের তুলিয়া লইয়া গিয়াছিল। বর্তমান সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ ভূঁইয়াও তাহাদের আয়নাঘর চিহ্নিত করিয়াছেন। এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না, সমগ্র দেশেই ক্ষমতাচ্যুত সরকার বিবিধ প্রকার আয়নাঘর স্থাপনের মাধ্যমে ভীতির রাজত্ব স্থাপন করিতে চাহিয়াছিল।
আমরা জানি, আয়নাঘরের সহিত জড়িতদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার। সেই অনুযায়ী তাহার সরকার গঠনের তিন সপ্তাহের মধ্যেই গুম কমিশন গঠন করিয়াছে। এই সরকার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী কনভেনশনেও স্বাক্ষর করিয়াছে। আমরা প্রত্যাশা করি, গুম কমিশন আয়নাঘর তৈরির সহিত জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনিতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠিয়াছে, ৫ আগস্টের পর গোপন বন্দিশালার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করা হইয়াছে। কুঠুরির দেয়াল ভাঙাসহ বেশ কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসিলেও সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আইনজ্ঞরা জানাইয়াছেন, বিচারের ক্ষেত্রে উহা প্রতিবন্ধক হইবে না। আমরা চাই, আয়নাঘরগুলিকে অবিকৃত ও জাদুঘররূপে রাখা হউক। যাহাতে পরবর্তী শাসকরা এই ধরনের অপকর্ম করিতে না পারে। আয়নাঘরের হোতাদের বিচারও সকলের জন্য দৃষ্টান্ত হইয়া থাকিতে পারে। এই ক্ষেত্রে মামলা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-আইসিটিতে বিচার সেই প্রত্যাশা পূরণ করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
৫ আগস্টের পূর্বে ও পরে গুমের শিকার অনেকেই আয়নাঘর হইতে ফিরিলেও এখনও অনেকে নিরুদ্দেশ। তাহাদের পরিবার যে আজও স্বজনের পথপানে চাহিয়া আছে; সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিবে কিনা, আমরা জানি না। কিন্তু আমরা এই ব্যাপারে নিঃসন্দেহ– বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার আয়নাঘরের হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ব্যতীত অসম্পূর্ণই থাকিয়া যাইবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন দ শ ল সরক র র কর য় ছ ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫