চাঁদপুরের একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে কয়েক দিন আগে রুবেল সর্দার (২৭) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এর ১৩ দিনের মাথায় তাঁর বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম সর্দারের (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারটি বলছে, ছোট ভাইয়ের এমন মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছে জাহাঙ্গীরও।

জাহাঙ্গীর ও রুবেল মতলব উত্তর উপজেলার আদুরভিটি গ্রামের হাবিল সর্দারের ছেলে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর সবার বড় ও রুবেল ছোট। জাহাঙ্গীরের পরিবারে চার সন্তান আছে। রুবেল অবিবাহিত ও উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁর দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। দেশে তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

রুবেল ও জাহাঙ্গীরের আরেক ভাই চান মিয়া জানান, রুবেলের মৃত্যুর পর জাহাঙ্গীর আলম শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। আগে থেকেই তাঁর হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের রোগসহ নানা শারীরিক সমস্যা ছিল। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে তাঁর অসুস্থতা আরও বাড়তে থাকে। গতকাল রাত ১০টার দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রুবেলের কবরের পাশেই জাহাঙ্গীরের লাশ দাফন করা হয়। ১৩ দিনের মধ্যে দুই ভাইকে হারিয়ে তিনিসহ পরিবারের সবাই শোকে মুহ্যমান। পরপর দুই স্বজনের মৃত্যুর ভার নিতে পারছেন না স্বজনেরা। এ কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রুবেল স্নাতকোত্তর শেষ করার পর একটি ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল নোয়াখালী জেলা সদরে। চাকরির পাশাপাশি তিনি উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) মালয়েশিয়ার উদ্দেশে তাঁর রওনা দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে নোয়াখালীর কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বের হন রুবেল। সেখানে না গিয়ে ওই দিন এক বন্ধুসহ চাঁদপুর শহরের বিপণিবাগ এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। ২ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই হোটেলের এক কর্মচারী রুবেলের কক্ষের দরজা খোলা পান। ভেতরে গিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ দেখতে পান। তবে ওই বন্ধু সেখানে আর ছিলেন না। পরে চাঁদপুর মডেল থানা-পুলিশ সেখান থেকে রুবেলের লাশ উদ্ধার করে।

রুবেল সর্দারের ভাই চান মিয়া দাবি করেন, তাঁর রুবেলকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছেন তাঁর বন্ধু। এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহার মিয়া বলেন, রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। ঘটনাটির আপাতত তদন্ত চলছে। রুবেলের সঙ্গে থাকা ওই ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পরিবারের দুই সদস্যের পর পর মৃত্যুতে গোটা পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রুবেল ও জাহাঙ্গীরের মা ভুলু আক্তার বলেন, ‘১৩ দিনের মাথায় আমার দুইটা বুকের ধন চইলা গেল। আমি অনে বাঁচুম ক্যামনে? দুই পোলার মরণ আমার সব শেষ কইরা দিল। তাঁগো আগে আমি মরলাম না কেন?’

এদিকে মতলব উত্তর থানার ওসি মো.

রবিউল হক বলেন, অল্প দিনের ব্যবধানে এক পরিবারের দুই সদস্যের মৃত্যুর খবরটি তিনি জেনেছেন। এ ঘটনায়  থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ হয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১৩ দ ন র ম পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

‘জামাই-শ্বশুরের’ দোকানে চা–পান করতে আসেন দূরের লোকজনও

কবির হোসেন (৩৬) ও তাঁর শ্বশুর সোলেমান মোল্লা (৫৫) মিলে বছর পাঁচেক আগে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দেন। জামাতা-শ্বশুরের যৌথ অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় চলছে চায়ের দোকানটি। দুজনে মিলে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি করেন প্রায় ৩০০ কাপ দুধ-চা। প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টাকার চা বিক্রি হয় দোকানটিতে।

নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিন এখানে ‘খাঁটি দুধের চা’ পান করতে আসেন। গাভীর দুধ দিয়ে জামাতা-শ্বশুরের হাতের পরম যত্নে বানানো সুস্বাদু ওই দুধ-চা স্থানীয় লোকজনের কাছে বেশ সমাদৃত। দূর থেকেও অনেকে আসেন চা–পান করতে। স্থানীয়ভাবে এটি ‘জামাই-শ্বশুরের’ চায়ের দোকান হিসেবে পরিচিত। দোকান থেকে উপার্জিত আয় দিয়েই চলছে তাঁদের সংসার।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কলেজগেট এলাকায় চায়ের ওই দোকানের অবস্থান। জামাতা কবির হোসেনের বাড়ি উপজেলার পৈলপাড়া গ্রামে। কবিরের শ্বশুর সোলেমান মোল্লার বাড়ি উপজেলার নবকলস গ্রামে।

সম্প্রতি এক সকালে ওই চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়। ছোট্ট পরিসরে সাজানো টুল-টেবিলে বসে চা–পান করতে করতে আড্ডা দিচ্ছেন তাঁরা। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তর্ক চলছে সেখানে। ক্রেতাদের চা পরিবেশনায় ব্যস্ত শ্বশুর-জামাতা।

কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। কবির হোসেন বলেন, তাঁর একমাত্র শ্যালক মানসিক প্রতিবন্ধী। তাঁর শ্বশুরের আর কোনো ছেলে না থাকায় তাঁকেই (কবির) ছেলে মনে করেন তিনি। তাঁর বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। এ জন্য শ্বশুরকেই বাবার আসনে বসিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে দুজনে মিলে ভাড়া করা এই চায়ের দোকানটি দিয়েছেন। নিজে সাতটি গাভী পালনপালন করেন। ওই গাভীর দুধ দিয়ে চা তৈরি করে বিক্রি করেন তাঁরা। তিনি ও তাঁর শ্বশুর পালা করে দোকানে বসেন এবং চা বিক্রি করেন। উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকা ছাড়াও চাঁদপুর জেলা শহর ও মতলব উত্তর উপজেলা থেকেও লোকজন এই দোকানে আসেন চা–পান করতে।

ক্রেতাদের হাতে দুধ-চা তুলে দিচ্ছেন কবির হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামীকাল
  • ‘জামাই-শ্বশুরের’ দোকানে চা–পান করতে আসেন দূরের লোকজনও