‘১৩ দিনের মাথায় আমার দুইটা বুকের ধন চইলা গেল, আমি অনে বাঁচুম ক্যামনে’
Published: 14th, February 2025 GMT
চাঁদপুরের একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে কয়েক দিন আগে রুবেল সর্দার (২৭) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এর ১৩ দিনের মাথায় তাঁর বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম সর্দারের (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারটি বলছে, ছোট ভাইয়ের এমন মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছে জাহাঙ্গীরও।
জাহাঙ্গীর ও রুবেল মতলব উত্তর উপজেলার আদুরভিটি গ্রামের হাবিল সর্দারের ছেলে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর সবার বড় ও রুবেল ছোট। জাহাঙ্গীরের পরিবারে চার সন্তান আছে। রুবেল অবিবাহিত ও উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁর দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। দেশে তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।
রুবেল ও জাহাঙ্গীরের আরেক ভাই চান মিয়া জানান, রুবেলের মৃত্যুর পর জাহাঙ্গীর আলম শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। আগে থেকেই তাঁর হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের রোগসহ নানা শারীরিক সমস্যা ছিল। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে তাঁর অসুস্থতা আরও বাড়তে থাকে। গতকাল রাত ১০টার দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রুবেলের কবরের পাশেই জাহাঙ্গীরের লাশ দাফন করা হয়। ১৩ দিনের মধ্যে দুই ভাইকে হারিয়ে তিনিসহ পরিবারের সবাই শোকে মুহ্যমান। পরপর দুই স্বজনের মৃত্যুর ভার নিতে পারছেন না স্বজনেরা। এ কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রুবেল স্নাতকোত্তর শেষ করার পর একটি ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল নোয়াখালী জেলা সদরে। চাকরির পাশাপাশি তিনি উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) মালয়েশিয়ার উদ্দেশে তাঁর রওনা দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে নোয়াখালীর কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বের হন রুবেল। সেখানে না গিয়ে ওই দিন এক বন্ধুসহ চাঁদপুর শহরের বিপণিবাগ এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। ২ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই হোটেলের এক কর্মচারী রুবেলের কক্ষের দরজা খোলা পান। ভেতরে গিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ দেখতে পান। তবে ওই বন্ধু সেখানে আর ছিলেন না। পরে চাঁদপুর মডেল থানা-পুলিশ সেখান থেকে রুবেলের লাশ উদ্ধার করে।
রুবেল সর্দারের ভাই চান মিয়া দাবি করেন, তাঁর রুবেলকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছেন তাঁর বন্ধু। এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহার মিয়া বলেন, রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। ঘটনাটির আপাতত তদন্ত চলছে। রুবেলের সঙ্গে থাকা ওই ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পরিবারের দুই সদস্যের পর পর মৃত্যুতে গোটা পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রুবেল ও জাহাঙ্গীরের মা ভুলু আক্তার বলেন, ‘১৩ দিনের মাথায় আমার দুইটা বুকের ধন চইলা গেল। আমি অনে বাঁচুম ক্যামনে? দুই পোলার মরণ আমার সব শেষ কইরা দিল। তাঁগো আগে আমি মরলাম না কেন?’
এদিকে মতলব উত্তর থানার ওসি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১৩ দ ন র ম পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার
চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিএনপির দুই নেতাকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চাঁদাবাজি, দখলদারি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নান লস্কর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। এর মধ্যে মতলব উত্তরের আবদুল মান্নান লস্করকে চাঁদাবাজির মামলায় গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবদুল মান্নান লস্কর ও আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই অভিযোগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইমাম হোসেন গাজীকেও দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের (মানিক) মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জেনেছেন। তবে এ ব্যাপারে চিঠি এখনো পাননি। যেকোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটি অন্যান্য নেতার জন্যও একটি বার্তা ও শিক্ষা।