মাদারীপুরে মোটরসাইকেল পার্কিং করা নিয়ে তর্কের জেরে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে জখম
Published: 15th, February 2025 GMT
মাদারীপুরে মোটরসাইকেল পার্কিং করা নিয়ে তর্কের জেরে বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগছাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত দুজন হলেন ওই এলাকার হানিফ মল্লিক (৫৮) ও তাঁর ছেলে রিয়াজুল মল্লিক (৩৫)।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার খাগছাড়া এলাকায় হোসনে আরা কুদ্দুস উচ্চবিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠান দেখতে আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। বিদ্যালয়ের ভেতর মোটরসাইকেল প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেখানে পার্কিং করেন দক্ষিণ খাগছাড়া গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে সাকিব কাজী (২৩)। এর প্রতিবাদ করেন একই এলাকার ইতালিপ্রবাসী রিয়াজুল মল্লিক। এ নিয়ে রিয়াজুল ও সাকিবের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরই জেরে গতকাল সন্ধ্যায় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাকিব তাঁর লোকজন নিয়ে রিয়াজুল ও তাঁর বাবার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। কুপিয়ে জখম করা হয় বাবা ও ছেলেকে। তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে রিয়াজুল ও তাঁর বাবা হানিফ মল্লিককে মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা পালাতক।
আহত রিয়াজুল মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভেতর মোটরসাইকেল প্রবেশ করলে চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। আমি শুধু এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। তার জন্য ওরা (হামলাকারীরা) আমার বাবার ওপর হামলা করেছে। আমাকে কুপিয়ে জখম করেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে হামলার কথা অস্বীকার করে সাকিব কাজী বলেন, ‘আমি বা আমার লোকজন কেউ কোনো ধরনের হামলার সঙ্গে জড়িত নই। ষড়যন্ত্র করে এলাকায় হেয় করতে আমাদের নাম বলা হচ্ছে। আমার সঙ্গে রিয়াজুলের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই।’
বিদ্যালয়টির সভাপতি সাগর মল্লিক বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে এভাবে হামলা চালাবে বুঝতে পারিনি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। আশা করছি, তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হামলার শিকার ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কম খরচে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়: আসিফ নজরুল
দ্রুত সময়ের মধ্যে কম খরচে মামলা নিষ্পত্তি করে মানুষকে মামলার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, তিনটি লক্ষ্য নিয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের সংশোধন করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকে এ সংশোধনের কাজ শুরু হবে। আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। গরীব মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (লিগ্যাল এইড ) কার্যালয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ-২০২৫ নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পক্ষ থেকে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া উপস্থাপন করা হয়।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশে প্রতি বছর ৫ লাখ মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে লিগ্যাল এইডে ৩৫ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়। আগামীতে এই হার ২ লাখে নিয়ে যাওয়ার আমাদের লক্ষ্য রয়েছে। এতে মামলার সংখ্যা ৪০ শতাংশ কমবে। এজন্য আইন পরিবর্তন করতে হবে। ছোট ছোট যেমন আপোষযোগ্য পারিবারিক মামলা, চেক ডিজঅনারসহ অন্যান্য মামলা আপসে বাধ্যতামুলক করা হবে।
তিনি বলেন, আদালতে মামলার যে অস্বাভাবিক চাপ, তা শুধুমাত্র বিচারিক কাঠামোকে নয়, ন্যায় বিচারপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এ চাপ কমাতে হলে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি পদ্ধতি আরও গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন মামলার চাপ কমানো সময়ের দাবি। এ জন্য মামলার আগে আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামুলক করা গুরুত্বপুর্ণ।
দ্রুত সময়ে অল্প খরচে মামলার নিষ্পত্তি করতে সিভিল প্রসিডিউর কোড ইতিমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি সংস্কারের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এ সময় লিগ্যাল এইডের মামলা নিষ্পত্তিতে একজন বিচারকের জায়গায় ৩ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।
মতবিনিময় সভায় অংশীজনদের মধ্যে বক্তব্যে দেন জাতীয় আইনগত প্রদান সংস্থার পরিচালক আজাদ সুবহানি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সায়েম খান প্রমুখ। এছাড়া চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা জেলার আইনজীবী সমিতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ইউএনডিপি প্রতিনিধি, জিআইজেড প্রতিনিধি, আইএলও, ব্রাক, ব্লাস্ট ও প্রশিকার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, লিগ্যাল এইডের প্রচারের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি আছে। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ গরীব ও অসহায় মানুষ জানে না সরকারের এমন একটি আইনিসহায়তা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রচারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিভাগীয় শহরে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে বলে মত দেন তারা।