প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
Published: 15th, February 2025 GMT
চকরিয়া উপজেলার রসিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি নিজের স্ত্রীকে স্কুলে নিয়োগ, স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষকের বেতন আত্মসাৎ, সরকারি নির্দেশনা অমান্য ও প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাতের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষকের চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন একই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো.
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এমপিওভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে। স্কুলে মোট শিক্ষার্থী আছে প্রায় ৭০০।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ সালে রসিদ আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আনোয়ার হোসেন। ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি স্ত্রী মোছাম্মৎ পারভীন আক্তার রিনাকে স্কুলের সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দেন। তবে রিনাকে বিধিবহির্ভূতভাবে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত করা হয়। তথ্য গোপন করে বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদটি প্রায় ১৩ বছর ধরে শূন্য রাখা হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতি ও বিদ্যালয়ের অডিট কার্যক্রমে বাধাসহ প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য সরকারিভাবে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে দু’বার ভাউচার দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা লোপাট করা হয়। সভায় বলা হয়, বিল-ভাউচার ও রশিদবিহীন ফি আদায় করা হয়েছে এসএসসি-জেএসসি পরীক্ষার সনদ ও প্রশংসাপত্র থেকে আয় হওয়া অর্থ লোপাট হয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিবন্ধন ও ফরম পূরণের অর্থ নেওয়া হলেও বিদ্যালয়ের তহবিলে গরমিল রয়েছে। ওই সভায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা খাতে ৭৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৬ টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য পায় পরিচালনা কমিটি।
অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, রসিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যের অডিট কমিটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসের হিসাব নিরীক্ষণ করে। নিরীক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চকরিয়ার ইউএনওর স্ত্রীকে থ্রিপিস কেনা বাবদ ৩ হাজার টাকা ভাউচার করা হয়। তখন চকরিয়ার ইউএনও ছিলেন জেপি দেওয়ান। ‘বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসের বই’ কেনার নামে ৩ হাজার ৬৯০ টাকা ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের ১২ হাজার ৬৩০ টাকা ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট খাত উল্লেখ করা হয়নি। সর্বমোট ১১ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৬ টাকা অর্থ লোপাট করার তথ্য-প্রমাণ সভাপতির কাছে দাখিল করে অডিট কমিটি।
অভিযোগে আরও বলা, বিদ্যালয়ের ল্যাব সহকারী এসএম তাদাব্বুর ইসলাম পদত্যাগ করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চীন চলে যান। প্রধান শিক্ষক পদত্যাগপত্র গোপন রেখে ছুটি দেখিয়ে জনতা ব্যাংক চকরিয়া শাখা থেকে ৫ মাসের সরকারি বেতন তুলে নেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ১২ মাস ধরে বকেয়া আছে। প্রায় ৬ বছর ধরে প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা পড়েনি।
অভিযোগকারী বিদ্যালয়টির সিনিয়র শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে বিদ্যালয়ে লাগামহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। তথ্য-প্রমাণ উপজেলা প্রশাসনের কাছে দিয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নোটিশ দেওয়ার পর তিনি দুই দফা সময়ের আবেদন করে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও সামগ্রিক অবস্থা চরম অবনতির মুখে।’
বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুরত আলম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কাছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৭ মাসের হিসাব-নিকাশ তুলে ধরেছিলাম। সেখানে ১১ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৬ টাকা গরমিল পাওয়া যায়। এসব অর্থ প্রধান শিক্ষক লোপাট করেছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৭ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে আছি। সব হিসাব-রেজুলেশন আমার কাছে রয়েছে। শহীদুল যেসব অভিযোগ করেছে, তা প্রমাণ করতে পারবে না। চীন চলে যাওয়া তাদাব্বুর ছুটি নিয়ে গেছে, স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার পর কোনো বেতন তুলতে পারেনি। আমি দায়িত্ব পালনকালে কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হইনি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রসিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেক শিক্ষক নানা অভিযোগের বিষয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রতন কুমার বিশ্বাসকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি ১৫ কর্মদিবস করে দুবার সময় চেয়েছিলেন। আবারও উভয়পক্ষকে নোটিশ করা হবে। এবার যদি অভিযুক্ত উপস্থিত না হন, তাহলে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে চকরিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিদ্যালয়টির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ আহমদ চ ধ র ২০২৩ স ল র কর ছ ন য গ কর র জন য চকর য় ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বিএনপি সমর্থন করে না। দলের এই অবস্থান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছে, তাদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে তারা সেই অভিযোগটা আদালতে উত্থাপন করতে পারে।
আদালতের মাধ্যমেই এ বিষয়ে ফয়সালা হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা নির্বাহী আদেশে, সেটা আমরা সমর্থন করি না। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি অনেক আগে যে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার যে বিষয়টি সেটা নির্ধারিত হোক। লেট দ্য কোর্ট ডিসাইড (আদালতকে নির্ধারণ করতে দিন)।’
আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কোনো দলের বিরুদ্ধে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে আদালত সেই দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি নির্ধারিত হয়, সেটা নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য। এ ছাড়া অন্য যেকোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে যদি আমরা রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ চাই তাহলে সেটা হবে একটা ভয়ংকর চর্চা। কারণ, এখন যাঁরা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছেন, তাঁদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে তাঁরা সেই অভিযোগটা আদালতে উত্থাপন করতে পারে, আইন তো আছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটা নিশ্চিত হোক।’
তবে আওয়ামী লীগের বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী। তারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য দায়ী। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলা দায়ের হয়েছে, আরও হবে, বিচার চলছে।’
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিই সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি তুলেছিল বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আদালত নির্ধারণ করবে তারা এ দেশে রাজনীতি এবং নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না। সেই প্রক্রিয়ায় যদি আরও কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ থাকে, সেটা আদালতে উত্থাপন করা যেতে পারে।’
আরও পড়ুনকয়েকটি অভিন্ন দাবিতে একযোগে বিক্ষোভে নামছে ৭টি দল১০ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে দেশে একটা সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করতে পারে। সেই শূন্যতার মধ্যে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে। ঐক্য বিনষ্ট হলে সেটার সূত্র ধরে কথিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে এবং তাদের হাত ধরে আঞ্চলিক শক্তিগুলো এখানে জড়িত হয়ে যেতে পারে পরস্পরের বিরুদ্ধে এবং একটি বৈশ্বিক শক্তিও সেই সুযোগটা নিতে পারে। স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে এই আশঙ্কাগুলো একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যারা এই ব্যবস্থার পক্ষে, তারা যেন নির্বাচনী ইশতেহারে তা তুলে ধরে জনগণের ম্যান্ডেট নেয়। জনগণের ইচ্ছা ছাড়া পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
নির্বাচন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো রাজনৈতিক কৌশল জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ দেশের মানুষ ১৬-১৭ বছর ধরে রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। সুতরাং এই পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে কৌশলে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, দলীয় হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, সেটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এখন শেষবিচারে জনগণই হচ্ছে বিচারক।’
আরও পড়ুনজামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ২ ঘণ্টা আগে