ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে গেছে উন্নয়ন
Published: 15th, February 2025 GMT
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে গেছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কর্তৃপক্ষ বলছে শিগগির ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতায় আজও শুরু হয়নি কাজ। একের পর এক দরপত্র বাতিল হয়েছে, বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা।
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি এখন কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী, চালক ও স্থানীয়রা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সড়ক নির্মাণে দেরির কারণ
জেলার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কটি দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে দ্রুত মালপত্র পরিবহনের জন্য এই পথের গুরুত্ব অনেক। তাই ২০১৯ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করে।
২০২১ সালে চারটি প্যাকেজে নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হলেও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রকল্পটি থমকে যায়। কয়েক দফা টেন্ডার বাতিলের পর সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করে তা মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
বেহাল সড়কে দুর্ঘটনা, ডাকাতি, দুর্ভোগ
দীর্ঘদিনের অযত্ন ও সংস্কারের অভাবে সড়কের ২৯ কিলোমিটার অংশ বেহাল। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে সড়কের ধীরগতির কারণে রাতের বেলা বেড়েছে ডাকাতির ঘটনাও।
প্রতিদিন খুলনা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহন করা ট্রাকচালক রতন মণ্ডল জানান, এই সড়কে সময় নষ্ট হয় কয়েক ঘণ্টা। ঠিক সময়ে গন্তব্যে মালপত্র পৌঁছে দিতে পারেন না। কাঁচামাল পচে যায়। রাতে ডাকাতির ভয় তো থাকেই। দ্রুত এ সড়কের কাজ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাসচালক হোসেন সরদার বলেন, এমন খারাপ রাস্তা আর কোথাও দেখেননি। গাড়ি প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খায়, টায়ার ফেটে যায়, ইঞ্জিন নষ্ট হয়। চালকরা বড় ক্ষতির মুখে আছেন বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
যাত্রী লোকমান বেপারীর ভাষ্য– ‘এ রাস্তায় অসুস্থ রোগী নিয়ে চলাচল করা সম্ভব নয়। মনে হয় বর্ষায় এখানে নৌকা চলবে! মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে হলেও দ্রুত কাজ শেষ করা দরকার।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ
সড়কের ধুলাবালিতে নাকাল আশপাশের গ্রামবাসী। বাড়ির টিনের চাল ধুলায় লালচে রং ধারণ করেছে। রান্নাঘর পর্যন্ত ধুলায় ঢেকে যায়। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
‘বাড়ির ভেতরে ধুলায় বসবাস করা দায় হয়ে গেছে। রান্না করতে গেলে খাবারের ভেতরে বালু পড়ে। বাচ্চারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যায়। আমাদের দুর্ভোগ দূর করতে দ্রুত সড়ক নির্মাণ হোক।’ বলছিলেন স্থানীয় গৃহবধূ ফাতেমা বেগম।
জমি অধিগ্রহণের অর্থ পাননি অনেকে
জমি অধিগ্রহণের ধীরগতির কারণে অনেক জমির মালিক এখনও তাদের প্রাপ্য অর্থ পাননি। রুদ্রকর আমিন বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহালম লিটন বলেন, ২০২১ সালে সরকার তাদের জমি অধিগ্রহণ করেছে। দেশের মানুষের স্বার্থে তারা জমি দিয়েছেন। এখনও টাকা পাননি। রাস্তার কাজ হয়নি, তাদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি। তারা দ্রুত এর সমাধান চান।
কী বলছে কর্তৃপক্ষ
সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন জানান, চারটি প্যাকেজের মধ্যে একটিতে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। সেই অংশের কাজ চলমান। বাকি তিনটিতে ভূমি অধিগ্রহণের সমস্যা রয়ে গেছে। নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে আশা করেন তিনি।
ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ প্রসঙ্গে এ প্রকৌশলী বলেন, যে ৪৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, তা ১১টি কেসের জন্য ব্যয় হয়ে গেছে। আরও ৮টি কেসের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধন করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, প্রকল্পটি ২০১৯ সালে হাতে নেওয়া হলেও সড়কের এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের কারণে ২০২২ সালে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। ফলে কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। ১৯টি এলএ কেসের মধ্যে ৭টির জমি ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা নেই। এটি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়, কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলবেন। তিনি আশা করছেন, শিগগির ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র জন য সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
এবার আগেভাগেই বই ছাপার কাজ শুরু হচ্ছে, ২০২৭ সাল থেকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের চিন্তা
এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাসের মাথায় সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করতে পেরেছে এনসিটিবি। আর বই পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে।
এই ‘বাজে অভিজ্ঞতা’ মাথায় নিয়ে আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ এবার আগেভাগেই শুরু করছে এনসিটিবি। আগামী সপ্তাহেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। পর্যায়ক্রমে জুনের মধ্যে সব দরপত্রের কাজ শেষ করে আগামী মধ্যে নভেম্বরের মধ্যে সব পাঠ্যবই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি।
বর্তমানে এনসিটিবির নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। এক মাসের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থাটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, গেলবারের অভিজ্ঞতার বিবেচনা করে এবার আগেই পাঠ্যবই ছাপার কাজের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। যাতে করে আগামী বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই পেতে পারে।
২০২৭ সাল থেকে পুরো শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে তার আলোকে পাঠ্যবই দেওয়ার পরিকল্পনা করছে এনসিটিবি। প্রথম বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা শুরু হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন বা পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয় সরকার। দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। তবে গত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। সব বই দিতে কিছুদিন দেরি হয়েছিল। কিন্তু এবার বই দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি হয়েছে। শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে কিছুটা ধারণা দেওয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত গত ২৪ মার্চ সর্বশেষ পাঠ্যবই সরবরাহের অনুমোদন বা পিডিআই দেয় এনসিটিবি। এভাবে এ বছর বই দেওয়ায় দেরি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে শিক্ষা বিভাগ।
এনসিটিবির সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ আগেভাগে শুরু করতে ইতিমধ্যে অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান (এপিপি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এরই মধ্যে মাঠ পর্যায় থেকে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন সেগুলো পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মাধ্যমিকের মোট পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২৩ কোটি ১২ লাখের মতো আসলেও পুনরায় যাচাইয়ে তা কমে ২২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এই সংখ্যাটি আরেকটু কমতে পারে। তবে প্রাথমিকের বইয়ের সংখ্যাটি এখনো নিরূপণ হয়নি। প্রসঙ্গত, বছরের জন্য প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো।
আরও পড়ুন২ মাস চলে গেল, আর কবে সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা০৩ মার্চ ২০২৫নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন বিদ্যালয়গুলো অতিরিক্ত চাহিদা দিত। ফলে বইয়ের সংখ্যা অনেক বেশি হতো। এতে সরকারের ব্যয়ও বেশি হতো। এবার এনসিটিবির কর্মকর্তারা নিজেরাও বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে চাহিদার বিষয়টি দেখভাল করছেন। ফলে তাঁরা ধারণা করছেন আগামী বছর মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা বেশ কমতে পারে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই চাহিদা নিরূপণ হয়ে যাবে।
এনসিটিবি জানিয়েছে আগামী সপ্তাহে প্রাক প্রাথমিক এবং ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তাঁদের লক্ষ্য জুনের মধ্যে সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দরপত্রের কাজ শেষ করা। এই প্রক্রিয়ায় তাঁদের পরিকল্পনা হলো আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে ৫৮৫টি স্থানে (পয়েন্ট) পৌঁছে দেওয়া হবে। আর মাধ্যমিকের সব বই দেওয়া হবে মধ্য নভেম্বরের।
প্রসঙ্গত চলতি বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজের দরপত্র গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
আরও পড়ুনঅবশেষে সব বই সরবরাহ করল এনসিটিবি ০৮ এপ্রিল ২০২৫পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের উদ্যোগগত বছর পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল; কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে যায়। তার পরিবর্তে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়। তবে প্রাথমিকে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়। আগামী বছরের নতুন পাঠ্যবই তার আলোকেই দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিদ্যমান পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজও প্রায় শেষ করেছে এনসিটিবি।
তবে, পরের বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল থেকে পুরো শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে তার আলোকে পাঠ্যবই দেওয়ার পরিকল্পনা করছে এনসিটিবি। প্রথম বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা শুরু হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন বা পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের বিষয়ে তাঁরা এখন থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু কাজ শুরু করছেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনপুরোনো শিক্ষাক্রমে বই, বিষয়বস্তুতে কতটা পরিবর্তন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪