সমকাল : প্রাইম ব্যাংকের উইমেন ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।
তামান্না কাদরী : দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাংকিং চাহিদা পূরণে ৩০ বছর আগে যাত্রা করে প্রাইম ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর নারীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে নারীকে সব ব্যাংকিং সেবা দিতে ২০২০ সালে প্রাইম ব্যাংক চালু করে ‘নীরা’ প্ল্যাটফর্ম। এ উদ্যোগের লক্ষ্য বয়স, পেশা, আয় বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সব নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, আর্থিক সক্ষমতা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।
বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের ‘নীরা’র মোট গ্রাহক প্রায় ৩ লাখ। এর আওতায় নারীর সঞ্চয়, বিনিয়োগ, দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা হতে কিছু বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ২০২৪ সালে প্রাইম ব্যাংক দেশব্যাপী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচির আয়োজন করে। এ আয়োজনে প্রাইম ব্যাংকের দেশব্যাপী ১৪৬টি শাখার মাধ্যমে ৪৫০ জন নারী উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফলে নারীরা ব্যাংকিং ও আর্থিক বিষয়ে আরও সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করছেন।
সমকাল : নারীর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর কারণে তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ছে?
তামান্না কাদরী : নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। প্রাইম ব্যাংক নারীর জন্য বিশেষায়িত সঞ্চয়, ঋণ ও ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা চালু করেছে, যা তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সহজ করেছে। নারীর জন্য আমাদের ব্যাংকের বিশেষ সুবিধার মধ্যে রয়েছে– প্রাইম উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট ও হাসানাহ উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট। যেখানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদ হারে নারীরা সহজে সঞ্চয় করতে পারেন এবং বিনা সুদে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা উপভোগ করেন। লেনদেন দ্রুত ও সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা ‘প্রাইম পে’ চালু করেছে প্রাইম ব্যাংক। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা নিতে আছে ‘নীরা সার্ভিস কর্নার’। নারীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে চালু আছে ‘নীরা অনলাইন
লার্নিং’ প্ল্যাটফর্ম।
সমকাল : বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলা হয়, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া খুব কঠিন? আসলেই কি তাই? যদি তাই হয়, তাহলে সমাধান কী?
তামান্না কাদরী : নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। যেমন– জামানতের অভাব, অভিজ্ঞতার ঘাটতি, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও জটিল ব্যাংকিং প্রক্রিয়া। সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত রাখা এবং প্রশিক্ষণ থাকলে নারীর ঋণপ্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়ে।
সরকার ও বিভিন্ন ব্যাংক এখন নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ও স্বল্প সুদে বিশেষ ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকও নারী এমএসএমই উদ্যোক্তাদের সহজ ও নমনীয় শর্তে ঋণ দিচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রাইম ব্যাংক নিয়ে এসেছে প্রাইম আঁচল লোন। যেখান থেকে নারী উদ্যোক্তাদের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্ম লোন দেওয়া হয়, যার সুদহার মাত্র ৫ শতাংশ। সরকারি নীতিগত সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ অনুমোদন ও ব্যাংকের ইতিবাচক মনোভাব নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করতে পারে।
সমকাল : নারীর মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা কেমন? আপনার কর্ম অভিজ্ঞতা কী বলে?
তামান্না কাদরী : আর্থিক স্বাধীনতা ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারীর মধ্যে এখন সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে। আগে নারীরা পরিবারের অর্থ ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন তারা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সঞ্চয়ের বিষয়ে অনেক সচেতন। আমাদের প্রাইম উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং হাসানাহ উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট চালু করে অনেক নারী সঞ্চয় করছেন। এ ছাড়া উদ্যোক্তা নারীরা ব্যবসায়িক মূলধন বাড়াতে এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের ‘প্রাইম আঁচল ঋণ’ গ্রহণ করে অনেক নারী উদ্যোক্তা তাদের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ আরও সুসংগঠিত করছেন। এমনকি প্রাইম উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং হাসানাহ উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে নারীরা সঞ্চয়ও করছেন।
অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, সঠিক আর্থিক শিক্ষা, সহজলভ্য ব্যাংকিং সেবা এবং বিশেষায়িত সঞ্চয় পণ্য থাকায় নারীর মধ্যেও সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে। ফলে নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আর্থিক সচেতন, স্বাবলম্বী ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় দক্ষ হয়ে উঠছেন।
সমকাল : নারীর ব্যাংকিং নিয়ে প্রাইম ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।
তামান্না কাদরী : প্রাইম ব্যাংক নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়ন আরও সহজ করতে নতুন ও উদ্ভাবনী ব্যাংকিং সেবা চালুর পরিকল্পনা করছে। ভবিষ্যতে নারীর জন্য আরও নমনীয় ঋণ সুবিধা, উন্নত ডিজিটাল ব্যাংকিং, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সাক্ষরতা কার্যক্রম সম্প্রসারণে আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমাদের লক্ষ্য নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষায়িত বিনিয়োগ ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা, যাতে তারা আরও বেশি ব্যবসায়িক সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। ‘প্রাইম আঁচল ঋণ’-এর আওতা আরও বাড়িয়ে বিনিয়োগ সহজ ও স্বল্প সুদের নতুন ঋণপণ্য চালু করার পরিকল্পনা আছে।
এ ছাড়া ঘরে বসে সব ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে ডিজিটাল ব্যাংকিং ইকোসিস্টেমে নতুন নতুন সেবা যোগ করা, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহুমুখী প্রশিক্ষণ চালু এবং ২০২৫ সালে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির হোসেন
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র র জন য ব যবস য় ক আর থ ক স আম দ র করছ ন উইম ন সমক ল র আওত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবেশী দেশগুলো অস্থির, ভারত এখন কী করবে
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা নতুন কিছু নয়। তবে এখন যে অস্থিরতা এ অঞ্চলে চলছে তা ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি ভারতকে আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
সাম্প্রতিক নেপালের সহিংস অস্থিরতা তারই উদাহরণ। শুধু নেপালের ঘটনা নয়। ভারতের পূর্বদিকে বাংলাদেশে ২০২৪ সালে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল এবং তার জের ধরে সেখানে সরকার পতন হয়েছিল; সেই সংকটের মীমাংসা এখনও হয়নি।
অন্যদিকে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে থাইল্যান্ড নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে। কারণ সেখানে আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করা হয়েছে ও সম্প্রতি কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে তাদের একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রকল্পের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি যোদ্ধারাও আছেন।
আরও পড়ুনভারত ও চীনের টানাটানিতে পড়েছে নেপাল৩১ জুলাই ২০২০ভারতের পশ্চিমে পাকিস্তান এখনও অতীতের ‘ভূতদের’ সঙ্গে লড়াই করছে। উগ্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠী, দুর্বল অর্থনীতি আর অকার্যকর শাসনব্যবস্থা পাকিস্তানকে অস্থির করে রেখেছে। ভারতের দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা তিন বছর আগে প্রেসিডেন্টকে সরানোর পর আপাত শান্ত হয়েছে। কিন্তু দেশটির অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আর উত্তরে চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাও এই অস্থিরতার বড় কারণ হয়ে আছে।
ভারতের জন্য এসব সংকট মোটেও দূরের কোনো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ ইতিমধ্যেই পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে অস্বস্তি তৈরি করছে। পাকিস্তানের সীমান্তপারের সন্ত্রাসের হুমকি এ গ্রীষ্মে কাশ্মীরে প্রায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলেছিল। আর এখন নেপালের অস্থির রাজনীতি চীনের জন্য নতুন করে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে। এত বড় এক অস্থিরতার বলয়কে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
এখন কীভাবে এই ধাক্কাগুলো সামলানো যায় এবং কীভাবে গোটা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনা যায়, সেটিই ভারতের নেতৃত্বের সামনে মূল প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
সাদা চোখে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষকে ততটা গুরুতর মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ভারত তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির অধীনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশ ও তাদের ৬০ কোটিরও বেশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ছে।নেপাল দিয়েই শুরু করা যাক। দেশটি দুই দশক আগে দীর্ঘ মাওবাদী বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে যে উচ্চাভিলাষী সংবিধান প্রণয়ন করেছিল, তা টিকিয়ে রাখতেই তারা হিমশিম খাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল, বিতর্কিত ও ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। পক্ষপাত, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে স্থিতিশীলতার আশা বারবার ভেঙে পড়েছে। সম্প্রতি যেসব ভয়াবহ সহিংসতা ঘটেছে, তা আসলে এই গভীর অস্থিরতার লক্ষণ।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে, তারা আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে বা মানবাধিকারের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে অর্থনীতি কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প ছিল, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া শুল্কনীতির কারণে সেটিও এখন টালমাটাল।
আরও পড়ুনভারত ‘তুমি রিয়েলিটি মাইন্যে ন্যাও’০৪ ডিসেম্বর ২০২৪সাদা চোখে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষকে ততটা গুরুতর মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ভারত তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির অধীনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশ ও তাদের ৬০ কোটিরও বেশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ছে।
এই অঞ্চলের যে কোনো অশান্তি সেই প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তাছাড়া থাইল্যান্ড বহুদিন ধরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেছে। যদি এর প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয় কিংবা বা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের শান্তি-প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কম্বোডিয়ার সঙ্গে থাইল্যান্ডের বিরোধ আরও বেড়ে যায়, তাহলে ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক করিডরের স্বপ্নই ভেঙে পড়তে পারে।
পাকিস্তানকে ‘চিরকালীন সংকটে থাকা দেশ’ বলা হয়তো কঠিন শোনায়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এটিই বাস্তবতা। সেখানে বারবার বেসামরিক সরকারকে দুর্বল করা হয়েছে। যেমন, ২০২২ সালে ইমরান খানের নির্বাচিত সরকার সেনাবাহিনীর ইশারায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। রাজনীতি রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত হলে চরমপন্থীরা মাথা তোলে, আর নাজুক অর্থনীতি সেই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানে সেটিই দেখা গেছে।
আরও পড়ুননেপালের গণ–অভ্যুত্থান ভারতের মাথাব্যথা বাড়াল১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ভারতের দৃষ্টিতে পাকিস্তানের এই সংকট শুধু অভ্যন্তরীণ নয়। এগুলো প্রায়ই কাশ্মীর সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ছড়ায়, আঞ্চলিক শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করে, এমনকি পারমাণবিক সংঘাতের শঙ্কাও তৈরি করে। ভারত যখন বাইরের দিকে তাকাতে চায়, এই স্থায়ী অস্থিতিশীলতা তখন ভারতকে উপমহাদেশের দাবার ছকে আটকে রাখে। এর সঙ্গে পাকিস্তান-চীন জোট মিলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এটি নিকট ভবিষ্যতে বদলানোর সম্ভাবনা কম।
এসব ঘটনা মিলিয়ে যে বড় প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছে, তা হলো: ভারতের চারপাশে গণতন্ত্র পিছিয়ে পড়েছে। প্রতিবেশি দেশগুলোতে সংবিধান বারবার বদলানো হচ্ছে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আদালতকে ব্যবহার হচ্ছে। দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক সেনাপ্রধান রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন। রাজনৈতিক নেতাদের কখনো কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, কখনো নির্বাসনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের জন্য এ প্রবণতা মোকাবিলা করা জরুরি। আর এখন আরও দৃঢ় আঞ্চলিক কৌশল ছাড়া উপায় নেই। বাস্তবে পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে সংকট দেখা দিলে ভারতই প্রথম ভরসা। তবে যখন কোনো দেশ মনে করে তাদের ভারতের সাহায্য দরকার নেই, তখন তারা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকেও গুরুত্ব দেয় না।
আরও পড়ুননেপালের অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যেভাবে মিথ্যা বয়ান হাজির করছে১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ভারতের চারপাশের অশান্ত পরিস্থিতিই যথেষ্ট কঠিন। তার ওপর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট আরও অনিশ্চয়তা যোগ করছে। ট্রাম্পের দক্ষিণ এশিয়া নীতি এতটাই খামখেয়ালি যে, ছোট দেশগুলো এখন নিরাপদ থাকতে বিকল্প পথ খুঁজছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পর্যন্ত প্রশ্ন উঠছে—চীন যখন শক্তি প্রদর্শন করছে আর মার্কিন নিরাপত্তার ছাতার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে, তখন কি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে হাঁটা উচিত না?
ভারত যদিও এ ঝড়ের মুখে দৃঢ় থেকেছে, তবুও আঞ্চলিক টানাপোড়েন আর ট্রাম্পসৃষ্ট অস্থিরতা ভারতের বহুদিনের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ধরে রাখাকে কঠিন করে তুলছে। এখন ভারতের কাজ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা নয়, বরং সম্পর্কের কৌশলগত, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক মূল ভিত্তি ধরে রাখা। পাশাপাশি আচমকা মার্কিন নীতি পরিবর্তনের ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি নেওয়াও দরকার।
ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য চায় না। তার লক্ষ্য হলো এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, নীতিনির্ভর ও সংযুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলা যেখানে অতীতের বারবারের সংকট সরে যাবে এবং সে জায়গায় ভবিষ্যতের দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
নিরুপমা রাও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত
সত্ত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ