পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে চুকাই। স্থানীয়ভাবে ‘আমিলা’ নামে পরিচিত এই ফলটি চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। একসময় তেমন চাহিদা না থাকলেও এখন সারা দেশেই কদর বেড়েছে ফলটির। খাগড়াছড়িতে উৎপাদিত আমিলা পাইকারেরা কিনে দেশের নানা প্রান্তে বিক্রি করছেন।

বিভিন্ন অঞ্চলে মেসতা বা মেসতা গোলা নামেও পরিচিত এই ফল। চাকমা ভাষা থেকেই মূলত আমিলা নামটি পাহাড়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছে। মারমারা এটিকে ‘পুং’ বলে, যার অর্থ টক। আর ত্রিপুরারা বলেন ‘মুখ্রোই বৌথাই’। তবে যে নামেই ডাকা হোক ভিটামিন–সমৃদ্ধ এবং ভেষজ গুণে ভরা এই ফলের কদর বাড়ছে দিন দিন। পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে কয়েক বছর ধরে।

খাগড়াছড়ি কৃষি বিভাগের গবেষকেরা জানান, একসময় দেশের সবখানে দেখা মিললেও মালভেসি পরিবারের এই উদ্ভিদের সংখ্যা বেশ কমে গেছে। তবে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো চুকাই বা আমিলার দেখা মেলে। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছ দেখতে খাটো ও ঝোপালো হয়। ফুলের রং হলুদ, তবে মাঝের অংশ মেরুন রঙের। পাতা লালচে–সবুজ, ফল লাল। এটি ভিটামিন বি-৬ ও ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ। ঠোঁটের কোণে ঘা, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া, চর্মরোগসহ নানা রোগের উপশম করে। চিংড়ির তরকারি বা টক ঝোলে আমিলা পাতা পড়লে রান্না সুস্বাদু হয়। পাহাড়িরা এই ফলের খোসা দিয়ে টক রান্না করেন। প্রাকৃতিকভাবে পেকটিন–সমৃদ্ধ বলে এই ফলের খোসা দিয়ে কোনো রাসায়নিক ছাড়া সহজেই জেলি তৈরি করা যায়।

পাহাড়ের বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ফল দিয়ে তরিতরকারির স্বাদ যেমন বাড়ানো যায়, তেমনি জ্যাম আর চাটনি তৈরির জন্যও এই ফল অতুলনীয়। তা ছাড়া ফলটি শুকিয়ে চা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা ‘রোজেলা চা’ হিসেবে পরিচিত। পাহাড়ের খাবার হোটেলগুলোতেও রান্না হয় আমিলা। খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়া এলাকার সিস্টেম রেস্টুরেন্টের পরিচালক আচিং মারমা প্রথম আলোকে বলেন, আমিলা ফলের রান্না করা টকের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এ ছাড়া আমিলা দিয়ে ছোট মাছ, মাংসও রান্না করা হয়। স্যুপেও আমিলা দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ির স্কুলশিক্ষক সুজিতা চাকমা আমিলা সম্পর্কে বলেন, এই ফলের পাতার টক ঝোল করা হয়। ফলের বিচি ফেলে শুকিয়ে চা প্রস্তুত করা যায়। এ ছাড়া জ্যাম, জেলি তৈরি করা যায় ফল দিয়ে। ফলের বিচি যে কোনো জায়গায় বর্ষা মৌসুমে ফেলে দিলে নিজ থেকে চারা উঠে। তেমন পরিচর্যা করতে হয় না।

পাহাড়ে বাসিন্দারা একসময় শুধু নিজেদের খাওয়ার জন্য বাড়ির আঙিনার আশপাশে আমিলা রোপণ করতেন। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। অনেকে জুমে ও পতিত জমিতে আমিলার চাষ করছেন। পাতা ও ফল বিক্রি করে লাভের মুখও দেখছেন। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক আঁটি আমিলা পাতা বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। আর ফল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকায়।

খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া এলাকার কলেজপড়ুয়া এক তরুণ অনিময় ত্রিপুরা বলেন, এক রেস্তোরাঁয় রোজেলা চা পান করে শখের বশে গত বছর বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছিলেন। নিজের জন্য পরিপক্ব কিছু ফল শুকিয়ে বাড়িতে রাখার পরও দুই হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছেন। এ বছর শুধু বাড়ির চারপাশে নয়, জুমের একটি অংশেও আমিলা চাষ করেছেন। পাইকাররা প্রতিদিন আসেন কাঁচা ফল কেনার জন্য। তবে তিনি ফল শুকিয়ে চা হিসেবে বিক্রি করবেন।

পানছড়ি বাজারে আমিলা বিক্রি করতে এসেছিলেন মরাটিলা এলাকার বাসিন্দা চাইলাউ মারমা। ঘরের চারপাশে পাঁচ বছর ধরে আমিলা চাষ করেছেন তিনি। এ বছর দুই হাজার টাকায় আমিলা পাতা বিক্রি করেছেন। ফল বিক্রি করেছেন তিন হাজার টাকার। সামনে আরও পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানালেন।

খাগড়াছড়ি বাজারের ফল ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বাজার আর পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে পাইকারি দরে আমিলা কেনেন ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। আর বিক্রি করেন ১০০ থেকে ২৫০ টাকায়। এসব আমিলা তিনি চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট আর ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ আর জ্যাম-জেলি তৈরির কারখানায় আমিলা ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।  

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাছিরুল আলম বলেন, আমিলা প্রচুর ক্যালসিয়াম ও লৌহসমৃদ্ধ ফল। আমিলা চাষে কোনো সার ও সেচ দিতে হয় না। পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও সমতলেও সাথি ফসল হিসেবে আমিলা চাষ করা যায়। এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও প্রচুর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফল ব ক র র জন য চ ষ কর পর চ ত কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চেন্নাইয়ের ঘরে বিষাদের বাজনা, ধোনির চোখে বিদায়ের আভা

সময় বোধহয় আর ধোনির সঙ্গী নয়। একদিন যিনি ছিলেন আইপিএলের গর্ব, তার চেন্নাই সুপার কিংস আজ দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে বিদায়ের মুখে। ঘরের মাঠে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে হারের পর ২০২৫ আইপিএলে প্লে-অফের সব আশা শেষ হয়ে গেল সিএসকের। ১০ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট—এ এক এমন ফলাফল, যা কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং একটা অধ্যায়ের মলিন পরিসমাপ্তি।

চেন্নাইয়ের এই হার ছিল কেবল একটি ম্যাচের পরাজয় নয়, ছিল হৃদয়ের গভীরে ঢুকে যাওয়া একটা কান্নার মতো। সেই কান্নায় ঝরে পড়লো মাহি নামের এক নীরব সৈনিকের অনেক না বলা কথা।

চাপা হতাশা নিয়েই মাঠে নামা চেন্নাই ব্যাটিংয়ে ভরসা রাখতে পারেনি। স্যাম কারানের ৮৮ রানের দাপটে চাহালের দুরন্ত হ্যাটট্রিকের কবলে পড়ে তারা গুটিয়ে যায় ১৯০ রানে। সেই লক্ষ্যে ব্যাট হাতে নামে পাঞ্জাব। যেখানে শ্রেয়াস আয়ার আর প্রবসিমরান সিংয়ের ব্যাটে খেলে গেল বিদায়ের রাগিণী।

আরো পড়ুন:

ধোনি ম‌্যাজিকে পাঁচ ম‌্যাচ পর চেন্নাইয়ের জয়

ধোনির কাছেই ফিরল চেন্নাই

ম্যাচ শেষে নম্র মুখে ধোনিকে দেখা গেল সিএসকের সিইও কাশী বিশ্বনাথনের পাশে। দুজনের মুখে না ছিল কোন উত্তেজনা, না হতাশার প্রকাশ। যেন বুঝে গেছেন— সময়ের নিয়ম মেনে সবকিছুরই শেষ আছে।

আইপিএলের ইতিহাসে এই প্রথমবার টানা দুই মৌসুম প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ চেন্নাই। এমনটা কখনও ঘটেনি। এমনটা কখনও কল্পনাও করেনি মাহির ভক্তরা। একসময় যেখানে চেন্নাইয়ের নাম মানেই ছিল ফাইনালের ঘ্রাণ, আজ সেখানে শূন্যতার সুর।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ও বেদনাদায়ক চিত্র উঠে আসে তাদের ঘরের মাঠের পারফরম্যান্সে। ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে হেরেছে চেন্নাই, যা তাদের ১৭ বছরের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধঃপতন। যে মাঠে একসময় ধোনির নেতৃত্বে জয় ছিল অভ্যাস, আজ সেখানে ভর করেছে দীর্ঘশ্বাসের সুর।

ধোনির বয়স বাড়ছে, গতি হয়তো আগের মতো নেই। চোটের কারণে অধিনায়ক ঋতুরাজ ছিটকে যাওয়ায় আবার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে দলের ভার। কিন্তু সেই কাঁধে আর আগের মতো শক্তি নেই— আছে কেবল দায়িত্ববোধ আর বিদায়বেলার ঘন ধূসর আভাস।

ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। এই আইপিএলের শেষ চার ম্যাচ কি হবে তার অন্তিম অধ্যায়? না কি আরেকবার ফিরে আসবেন চুপচাপ, তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায়? হয়তো মৌসুম শেষে মৃদু হেসে কিছু বলবেন। অথবা বলবেনই না কিছু— যেমনটা ধোনি করে থাকেন।

এই আইপিএল, এই হার, এই নীরবতা— সব মিলিয়ে চেন্নাইয়ের হৃদয়ে লেখা হলো এক বিষণ্ন কবিতা। একটি গৌরবময় অধ্যায়ের শেষ লাইন যেন নিজেই লিখে ফেলেছেন ধোনি, শব্দ ছাড়াই।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চেন্নাইয়ের ঘরে বিষাদের বাজনা, ধোনির চোখে বিদায়ের আভা
  • কালিদাসের হাত ধরে যে জামুর্কীর সন্দেশের যাত্রা, তার জিআই স্বীকৃতিতে খুশি সবাই