যুক্তরাজ্যের ডেভিড বাউটফ্লোর পেশায় লরিচালক ছিলেন। কিন্তু তিনি আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর শখ ছিল মহাকাশ ও উড়োজাহাজ চালনার। কিন্তু তাঁর পটভূমি থেকে মহাকাশে কাজ করা কল্পনার বাইরে ছিল। অথচ কল্পনার বাইরের সেই বিষয়টিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ডেভিড। নিজ চেষ্টায় তিনি হয়েছেন মহাকাশ প্রকৌশলী (স্পেস ইঞ্জিনিয়ার)। কীভাবে সম্ভব হলো?

৩১ বছর বয়সী ডেভিড ৯ বছর ধরে হসপিটালিটি নিয়ে কাজ করেছেন। চেশায়ার কাউন্টির একটি গ্যাস্ট্রো-পাবের মহাব্যবস্থাপক হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছিলেন, এটা তাঁর আসল ক্যারিয়ার নয়। এর থেকে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব, এই ভাবনাটা তিনি সব সময় ভাবতেন।

ডেভিড বাউটফ্লোর বলেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁর মহাকাশ ও উড়োজাহাজ চালনার আগ্রহ শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রাথমিক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে কনকর্ড।

ডেভিড জানতে পারেন, পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটি লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ মাল্টিন্যাশনাল অ্যারোস্পেস, ডিফেন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন সিকিউরিটি কোম্পানির (বিএই সিস্টেম) সঙ্গে প্রথমবারের মতো স্পেস সিস্টেম ডিগ্রি শিক্ষানবিশ চালু করেছে। তবে এর কোর্স ফি অনেক। তবু এই কোর্স করতেই হবে। চার বছরের স্পেস সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই কোর্সে চাকরি করার অনুমতি দেয়। তাই কোর্স ফি জোগাড় করতে তিনি লরিচালকের পেশা বেছে নেন।

ডেভিড বলেন, ‘এই কোর্সে চান্স পাওয়ার কথা শুনে সবাই ভেবেছিল, আমি মিথ্যা বলছি।’ তিনি আরও বলেন, ট্রাকচালক থেকে মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ার হতে যাচ্ছি, এই বিষয় অনেকেই ভালোভাবে দেখেনি।

কোর্সের একাডেমিক দিকটি চারটি মডিউল তাপগতিবিদ্যা, প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল সিস্টেম এবং গণিত, বক্তৃতা ও পরীক্ষাগার নিয়ে গঠিত। ডেভিডের সঙ্গে আরও চারজন এই শিক্ষানবিশ কোর্সে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন ২১ বছর বয়সী অ্যালিস ওভারেন্ড। অ্যালিস পোর্টসমাউথ কোর্সে আবেদন করার আগেই স্যাটেলাইট সমাবেশ ও পরীক্ষায় কাজ করেছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালে ভার্জিন অরবিটের মাধ্যমে মহাকাশে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সেই কাজ ব্যর্থ হয়। এই ঘটনা অ্যালিসের মনে গভীর ছাপ ফেলে।

ডেভিডদের দলের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হলেন ১৮ বছর বয়সী জর্জ স্মিথ। পদার্থবিদ্যা, গণিত ও প্রকৌশলে ‘এ’ লেভেল থেকে তিনি সরাসরি এই কোর্সে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই কোর্সের প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল। এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, মহাকাশ একটি বিস্তৃত সেক্টর। তিনি একদিন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক মতো করা যায়, তাহলে একদিন তিনি নভোচারী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে এই কোর্স জর্জ স্মিথের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। তিনি এখন স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে।

বিএই সিস্টেমের মহাকাশ কৌশলের প্রধান এলিজাবেথ সিওয়ার্ড। একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে নিজস্ব পটভূমি থাকা সত্ত্বেও সিওয়ার্ড মনে করেন, ‘মহাকাশে একটি পাদবেদী (পেডেস্টাল) স্থাপন করার প্রবণতা আছে। কিন্তু সত্য হলো আমাদের অন্যান্য ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আরও বেশি লোকের প্রয়োজন। মহাকাশে কাজ করতে আগ্রহী যে কেউ, যেমন প্রকল্প পরিচালক বা আইনজীবীদেরও প্রয়োজন আছে।’

এডিনবার্গের হ্যারিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ে অরবিটাল মেকানিকসের শিক্ষক স্টেফানি ডোচার্টি। তিনি শেখান, কীভাবে একটি উপগ্রহ সঠিক পথে চলে। এটি মহাকাশ কোর্সের অংশ। তিনি বলেন, মহাকাশ খাতে দক্ষতার চেয়ে বিশেষীকরণ কম গুরুত্বপূর্ণ। নিয়োগকারীরা সমস্যা সমাধানের দক্ষতা চান।

২০১১ সালে স্পেস শাটলের গ্রাউন্ডিংয়ের পর ডেভিড অনুভব করেছিলেন, মহাকাশ অনুসন্ধান ‘এক ধাপ পিছিয়ে গেছে’। বর্তমানে তিনি বলেছেন, ইলন মাস্কের স্পেসএক্স পুনর্ব্যবহারযোগ্য লঞ্চারগুলোর সাফল্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

মহাকাশের পড়াশোনার বাইরে কী করেন? এই প্রশ্নের জবাবে স্মিথ বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশই ভিডিও গেম খেলে। অ্যালিস ওভারেন্ডও এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত।’

ডেভিড বলেন, ‘আমরা সবাই গেমিং পছন্দ করি। স্কুবা ডাইভিং আমাদের আরেকটি জনপ্রিয় বিনোদন। স্কুবা ডাইভিং মহাকাশে কাজ করার জন্য ভালো প্রশিক্ষণ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ক র স ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে