রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চুরির অভিযোগে তরুণকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পেটাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। আশপাশ থেকে আরও কয়েকজন এসে মারলেন কিলঘুষি। কাঁদছিলেন ওই তরুণ। এমন দৃশ্য ভিডিও ধারণে ব্যস্ত ছিলেন কয়েকজন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই তরুণকে উদ্ধার করে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার তরুণের নাম ইকবাল হোসেন (২৬)। তাঁর বাড়ি উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে। সরকারের দেওয়া ঘরে তাঁর বসবাস। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ওই তরুণ মাদকসেবী। তিনি লোকজনের কাছ থেকে টাকা চান। তবে এভাবে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।

গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, ইকবাল হোসেন মাদকাসক্ত। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ পেয়েছিলেন। তবে অটোভ্যান চুরি এবং তাঁকে পিটুনির বিষয়টি তিনি জানেন না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বেলা দেড়টার দিকে ইকবাল হোসেন নামের এক তরুণ হেঁটে উপজেলা ভূমি অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন। উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁর হারিয়ে যাওয়া অটোভ্যান চুরির অভিযোগে ইকবালকে আটক করেন। ভবানীগঞ্জ বাজারে নিয়ে তাঁকে একটি মিষ্টির দোকানে আটকে রেখে মারধর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় বাজারের লোকজন সেখানে ভিড় করে তাঁরাও মারধরে অংশ নেন। বাজারে ৩০ মিনিট ধরে পিটুনির পর ভিড় এড়াতে ইকবালকে বাজারের আলুহাটায় উন্মুক্ত স্থানে নিয়ে আসেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।

এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি একটি খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ওই তরুণকে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। কীভাবে অটোভ্যানটি চুরি করা হয়েছে তার স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সময় ওই তরুণ নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেন।

স্থানীয় সাংবাদিক শামীম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, চোর সন্দেহে মারধর করার দৃশ্য দেখে তিনি মুঠোফোনে থানার ওসিকে জানান। পরে পুলিশের একটি দল এসে বেলা তিনটার দিকে ওই তরুণকে উদ্ধার করে।

দাসপাড়া গ্রামের ওই ভ্যানচালক বলেন, গত শুক্রবার ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে তাঁর একটি অটোভ্যান চুরি হয়েছে। ওই দিন ভ্যানের খোঁজ করতে গিয়ে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভ্যানের যাত্রী হিসেবে ইকবাল হোসেনকে দেখেছেন। তবে চোখের আড়াল হওয়ায় আর ধরতে পারেননি। আজ ভবানীগঞ্জ বাজারে এলে তাঁকে চিনতে পেরেছেন। এর আগে তাঁর আরেকটি অটোভ্যান চুরি হয়েছে।

মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করা দুই তরুণ জানান, ফেসবুকে ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার (পোস্ট করা) জন্য ভিডিও করেছেন। বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চেহারায় মিল থাকায় চোর সন্দেহে ধরে ওই তরুণকে মারধর করেছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইকব ল হ স ন ম রধর ল কজন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ