দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার একটি ভুট্টাখেত থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনের সূত্র ধরে ভুট্টাখেতে পড়ে থাকা রক্তমাখা লাঠি এবং পাকা সড়কে পড়ে থাকা রক্তমাখা দড়ির রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মুঠোফোনে থাকা সিমের মালিক এক নারীর পরিচয় শনাক্তের পর এ রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাইদুল ইসলাম (৪৮) নামের এক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ রোববার বেলা আড়াইটায় তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠানো হয়েছে।

সাইদুলকে দিনাজপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান।

সাইদুল উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের দামারপাড়া গ্রামের হেসাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৭ বছর ধরে উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সাইদুল উপজেলার কাটলা বাজারের একজন কসমেটিকস ব্যবসায়ী। এ ছাড়া সাইদুল মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত বুলবুল আহমেদ একই উপজেলার জোতবানী গ্রামের মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। আহত বুলবুল ব্যবসায়ী সাইদুলের দুঃসম্পর্কের মামা বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল দুপুরে উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের পলি খিয়ারমামুদপুর গ্রামের একটি পাকা সড়কের পাশে রক্তমাখা দড়ি এবং দক্ষিণ মাধুপুর গ্রামে জনৈক আনোয়ার হোসেনের ভুট্টাখেত থেকে রক্তমাখা বাঁশের লাঠি ও সিমসহ একটি মুঠোফোন উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া একই সময়ে ওই পাকা সড়ক ও ভুট্টাখেতের মাঝামাঝি অংশের একটি আলপথের পাশে পেট্রোলভর্তি এক লিটারের দুটি বোতল জব্দ করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে ভুট্টাখেত থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনে থাকা সিমের মালিকের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়। সিমটি উপজেলার জোতবানী গ্রামের বুলবুলি বেগম নামের একজনের নামে নিবন্ধন করা বলে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই দিন বিকেলে পুলিশ বুলবুলির বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলে বুলবুল আহমেদকে ওই বাড়িতে আহত ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় পান। পরে পুলিশ বুলবুলকে আহত হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে গত শুক্রবার রাতে দক্ষিণ মাধুপুর গ্রামের ওই ভুট্টাখেতে সাইদুলের হাতের বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত ও হাতাহাতির ঘটনায় রক্তাক্ত হয়েছেন বলে জানান।

বুলবুল জানান, শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে সাইদুল তাঁর মুঠোফোনে কল দিয়ে তাঁকে কাটলা বাজারে যেতে বলেন। পরে সন্ধ্যায় বুলবুল কাটলা বাজারে গেলে সাইদুল দোকান বন্ধ করে আসছি বলে বুলবুলকে ওই বাজারের পূর্ব পাশে ছোট যমুনা নদীর ব্রিজের ওপরে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে রাত ৮টার দিকে সাইদুল ব্রিজে গিয়ে বুলবুলকে নিয়ে উপজেলার মির্জাপুর মণ্ডব এলাকায় যান। সেখানে সাইদুল মুঠোফোনে একজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বুলবুলকে বলেন, ‘১০ জন ছেলে এই রাস্তা দিয়ে মাল (মাদকদ্রব্য) নিয়ে আসবে, তখন এদিক দিয়ে আমরা চলে যাব।’ সেখান থেকে তাঁকে আবারও কাটলা বাজারে নিয়ে আসেন সাইদুল। এরপর বাজার থেকে বুলবুলকে সাইকেলে তুলে নিয়ে দক্ষিণ মাধুপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত একটি মাহফিলে যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বুলবুলকে নিয়ে মাহফিলের অবস্থান থেকে পশ্চিমে প্রায় ৪০০ গজ দূরে একটি ভুট্টাখেতে যান সাইদুল। সেখানে ভুট্টাখেতের আলে বসে থাকা অবস্থায় পেছন দিক দিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে বুলবুলের মাথায় আঘাত করেন সাইদুল। এ সময় বুলবুল নিজেকে রক্ষা করতে সাইদুলের দুই হাতের আঙুলসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড় দেন। দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টা ভুট্টাখেতের মধ্যে দুজনের মারামারি হয় বলে বুলবুল জানান। পরে একসময় বুলবুল সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে যান।

এ বিষয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, সাইদুল ও বুলবুলের মধ্যে হয়তো মাদকসংক্রান্ত বিষয়ে আগে থেকে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই সূত্র ধরে শুক্রবার রাতে বুলবুলকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ভুট্টাখেতে ডেকে নিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন সাইদুল। তবে দুজন এখনো পুরোপুরি সত্য কথা বলেননি বলে মনে হচ্ছে। সেই সঙ্গে তদন্তও চলছে। সাইদুলকে আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির