ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান ড. ইউনূসের
Published: 16th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান এই চার দেশ মিলে একটি যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি মনে করেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারলে এই চার দেশ লাভবান হবে। ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শুধু সমুদ্রবন্দর আমরা ব্যবহার করবো তা তো না, আমাদের নিজস্ব একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে, সেটি এখনও আমরা খুলতে পারিনি। কিন্তু অঞ্চল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। উত্তরে নেপাল আমাদের অঞ্চল, তাদের দুর্ভাগ্য হলো—সমুদ্রের দেখা তারা পায় না। সমুদ্র দেখতে হলে আমাদের মাঝখান দিয়ে দেখতে হবে। সে পথ আমরা করে দেই, একসঙ্গে যৌথ অর্থনীতি গড়ে দেই। দুই অভাব দুজন একসঙ্গে পূরণ করি। ভুটানেও একই ঘটনা, তারও সমুদ্র দর্শন হয় নাই। তাকে সমুদ্রে আসতে হলে আমাদের পথ দিয়ে আসতে হবে, আমরা স্বাগত জানাই। তেমনই ভারতের পূর্বাঞ্চল সেভেন সিস্টারেরও একই অবস্থা। সমুদ্র দর্শন তার হয় না, হবেও না। তার জন্য আমরা যোগ দেই একসঙ্গে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে। আমাদের সমুদ্রবন্দর তাদের মালামাল আনা নেওয়া করবে, আমাদের মাল আনা নেওয়া করবে, তাদের কাছে যাবে। তাদের অর্থনীতি আমাদের অর্থনীতি একসঙ্গে জাগবে। তারাও খুব কষ্টকর অবস্থায় আছে, ভালো অবস্থায় নাই। এই সুযোগ পেলে তারাও আনন্দিত, রমরমা ব্যবসা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের উত্তরে সেই বিখ্যাত হিমালয় পর্বতমালা, যেখানে জমে আছে আমাদের জগতীয় শক্তি ‘হাইড্রোপাওয়ার’। কত শক্তি দরকার বাংলাদেশের। এখানে সব জমা আছে, হারিয়ে যাচ্ছে না, শুধু নেওয়ার অপেক্ষায়। শুধু প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক করা, যাতে নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে দূরত্ব আছে, সেটি অতিক্রম করার। নেপাল এক পায়ে দাঁড়ানো , বারবার বলছে নিয়ে যেতে, আমরা এক পায়ে দাঁড়ানো নেওয়ার জন্য, মাঝখানে ওইটুকু পথ অতিক্রমের সুযোগ এখন আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। আশা করি, তাদেরই অর্থনৈতিক কারণে সেটি আমাদের দেবে। এটা সবার মঙ্গলের জন্য। একজনের উপকার আরেকজনের অপকার, এমন কিছু না। যদি আমরা সেই পথ খোলা পাই, বাংলাদেশকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারও নাই।
তিনি বলেন, আমরা মহাসৌভাগ্যবান একটি জাতি তার অবস্থানের কারণে। সেই জাতির দুঃখ কেন লাগবে, আমি বুঝতে পারি না। এটা কি আমাদের কপালের দোষ নাকি চরিত্রের দোষ, নাকি আমাদের চিন্তার দোষ। যদি থাকে তাহলে সেগুলো থেকে আমরা মুক্ত হই। আমরা তো ত্বরিতগতিতে এগিয়ে যেতে চাই। এটা একটা মহাশক্তিধর অর্থনীতি তৈরি হবে। আজকে কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে উপকূল ভূমি, সেখানে যদি কাতারে কাতারে নৌবন্দর স্থাপন হয়, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত দুনিয়ার সব জাহাজকে আশ্রয় দিতে পারি, তাদের কাজ করার জন্য সুযোগ সুবিধা দিতে পারি, আমাদের আটকাবে কে? এগুলো বললাম এ জন্য, আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক হতাশায় ভুগি, হতাশার তো কারণ নেই, এটা আনন্দের বিষয়, আমাদের যেই অবস্থান, সুযোগ সুবিধা। শুধু সেগুলোকে আহরণ করা, কাজে লাগানো। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে জোরদার করা, যাতে আমরা এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কাজেই প্রাকৃতিক দিক থেকে আমরা খুবই সৌভাগ্যবান। তার চেয়ে বড় সৌভাগ্য যে আমাদের মস্ত বড় জনসংখ্যা। আগে মনে করতাম বোঝা মনে হয়। এটা সম্পদ, মানবসম্পদ। প্রযুক্তি আসার ফলে দেশের মানুষ আর বোঝা নয়। প্রতিটি মানুষ এখন সম্পদ। আমরা সেই সম্পদে সম্পদশালী। আমরা পৃথিবীর অষ্টম জনসংখ্যার দেশ। বহু দেশে মানুষ এগোতে পারছে না মানুষের অভাবে। আমরা যে মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠাই, তারা কোন দুঃখে লোক নেয়, তাদের লোক নেই বলে। পৃথিবীর সব দেশ বসে আছে কখন আমাদের থেকে লোক পাবে। চীন যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, কিছু দিন পরে বোধহয় আমাদের কাছ থেকে লোক চাইবে। এই হলো আমাদের সুযোগ।
অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড.
এএ
উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট একসঙ গ র জন য আম দ র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শন করলেন দুই বিদেশি পর্যটক
‘এটি খুবই আনন্দায়ক খবর যে এই স্কুলে আদিবাসী ও বাঙালি শিক্ষার্থীরা একসঙ্গেই বসে শান্তিপূর্ণভাবে পাঠ গ্রহণ করে। যেখানে ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরাও একই আসনে বসে পাঠ নিচ্ছে। সম্প্রীতি-ভালোবাসার এ দৃশ্য আমাদের বিমোহিত করেছে।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শনে এসে জার্মান নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাথিয়াস রিচার্ড এ মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত রসায়নবিদ সিলভিয়া মাউরিজিও। ‘দেশ ঘুরি’ নামের একটি ট্যুরিস্ট সংস্থার মাধ্যমে তাঁরা এ বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলে ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরিয়ে দেখান প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর। তাঁরা শ্রেণিকক্ষগুলোতে গিয়ে পাঠ উপস্থাপন দেখেন। কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের সঙ্গে ভাববিনিময় করে।
এ সময় দুই পর্যটক জানতে পারেন, এ বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বাঙালি শিশুরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না করে একবেঞ্চে বসে পাঠ গ্রহণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা খুবই খুশি হন।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুমা খাতুন দুজনকে একটি গান গেয়ে শোনায়। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সামনে ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান প্রদর্শন করে। সিলভিয়াও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাচে অংশ নেন। সৃষ্টি হয় একটি আনন্দদায়ক পরিবেশের। এ সময় বাঙালি ও কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি-ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে খুশি হন।
বিদেশি দুই পর্যটকের সামনে আলোর স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা