উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ : থমকে আছে নায়ক মান্নার মৃত্যুর মামলা
Published: 17th, February 2025 GMT
নব্বই দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা চিত্রনায়ক এস এম আসলাম তালুকদার মান্না হঠাৎ করেই মারা যান। অ্যাকশন হিরোদের মধ্য ছিলেন জনপ্রিয়। বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। তবে চিকিৎসা শুরু হয় অনেক দেরিতে। পরিবারের অভিযোগ, কিছু চিকিৎসকের অবহেলায় মারা যান মান্না।
১৭ বছর আগে ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যান নায়ক মান্না। বুকে ব্যথা নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তবে কিছু চিকিৎসকদের অবহেলায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই সুপারহিট নায়ক। এ অভিযোগে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মান্নার স্ত্রী শেলী কাদেরের ভাই রেজা কাদের ঢাকার মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তে চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। হাসপাতালটির ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুও হয়। এরপর ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত থেকে মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকে আর মামলার বিচার এগোয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো.
বাদীপক্ষের আইনজীবী ড. ব্যারিস্টার খন্দকার মুহাম্মদ মুশফিকুল হুদা বলেন, “এই মামলাটি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি৷ বাদী রেজা কাদের মামলা চালাতে চান না৷ তবে শেলী মান্না আমাকে মামলা পরিচালনা করতে বলেন। এখন এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।”
তবে মান্নার স্ত্রী শেলী মান্নাকে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বুকে ব্যথা অনুভব করায় ভোর রাত ৪টায় মান্না ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসেন সকাল ৯টায়। চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়ায় ’অ্যাকিউট মায়োকারডিয়াল ইনফ্রাকশনে’ আক্রান্ত হন মান্না। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুয়ায়ী আক্রান্ত হওয়ার ৯০ মিনিটের মধ্যে রোগীকে নির্দিষ্ট ইনজেকশন দিতে হয়। কিন্তু মান্নাকে এই ইনজেকশন দেওয়া হয় আক্রান্ত হওয়ার ৫ ঘণ্টা পর। হৃদরোগ বিভাগের ওই ৬ চিকিৎসকদের অবহেলার জন্য মান্নার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর মান্নার স্ত্রী শেলী কাদেরের ভাই রেজা কাদের ঢাকা সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ১৩ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান সিদ্দিক বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন তৎকালীন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক ফিরোজ আলম। এরপর ১, ২ ও ৩ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য থাকা দিনেই সংশ্লিষ্ট বিচারক বদলি হয়ে যান। থেমে যায় সাক্ষ্য গ্রহণ। এরপর আসামিরা মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
আসামিরা হলেন-ডা. মো. এনায়েত হোসেন শেখ, ডা. জহির উদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াস, ডা. মোমেনুজ্জামান, ডা. ফাতেমা, ডা. মাইনুল ইসলাম মজুমদার ও ডা. খন্দকার মাহবুব হোসাইন।
ঢাকা/মামুন/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র অবহ ল গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
কমিটি নেই, সবাই নেতা
কয়রা উপজেলা বিএনপির কমিটি নেই একযুগ। দীর্ঘদিন ধরে চলেছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৪ মাস আগে। কমিটি না থাকায় দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও। কেউ কারও কথা শুনছেন না। অবস্থা এমন, যেন সবাই নেতা– অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীর।
কমিটি না থাকলেও উপজেলার একশ মিটারের মধ্যে পৃথক দুটি কার্যালয় রয়েছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) নুরুল আমিন বাবুল। আরেকটি কার্যালয় চলছে খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসানের নেতৃত্বে। নেতৃত্বের এ দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি নেই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাড়া অন্যান্য কর্মসূচিতে কার্যক্রমও সীমিত। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি দেওয়ার দাবি দলীয় নেতাকর্মীর।
পৃথক কার্যালয়ের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসান বলেন, উপজেলায় একটি দলীয় কার্যালয় ছিল। পরে স্থানীয় একজন নেতা তাঁর অনুসারীদের নিয়ে আরেকটি কার্যালয় খুলেছেন; যা সংগঠনবিরোধী কাজ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি কার্যালয়টি বন্ধ করেননি।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মনজুর আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর দুই নেতার বিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। আগে দলে বিভক্তি থাকলেও আলাদা কার্যালয় ছিল না। এখন দুটি কার্যালয় থাকায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা।
২০১৩ সাল পর্যন্ত উপজেলায় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল। এরপর দুই দফায় আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ মোমরেজুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও নুরুল আমিন বাবুলকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। এরপর থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নুরুল আমিনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু।
এদিকে কমিটি না থাকায় বেশির ভাগ নেতা স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। কয়েকজনের বিরুদ্ধে হাট, ঘাট, খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। সরকারি সুবিধায় হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ আছে। এতে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি গঠন করা জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির সাবেক নেতা আব্দুস সামাদ।
সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে দলীয় কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছি না। আশা করছি খুব দ্রুতই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে। তখন গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের চেষ্টা করব।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে কয়রায় বিএনপির কোনো কমিটি নেই। কমিটি হলে দলীয় সব বিরোধ মিটে যাবে বলে আশা করছি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, কয়রায় কমিটি গঠনের জন্য জেলা বিএনপি থেকে ৫ সদস্যের সার্চ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটি নেতাকর্মীর বিরোধও নিষ্পত্তি করবে। দ্রুতই ঐক্যবদ্ধ একটি কমিটি উপহার দেওয়া হবে।