সারাবছর পানি ধরে রেখে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ৭ কোটি ১২ লাখ টাকায় হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গড়ের খাল খনন প্রকল্প নেওয়া হয়। তবে খননের দেড় বছরেই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। পানি তো দূরের কথা, খাল খননের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া কঠিন। অভিযোগ উঠেছে, খাল খননের নামে টাকা হরিলুট হয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরীর তৎপরতায় ২০২২ সালে ৭ কোটি ১২ লাখ টাকায় মূল ও শাখা মিলিয়ে ৩১ দশমিক ৬ কিলোমিটার খাল পুনরুদ্ধার ও খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
উদ্দেশ্য ছিল, সারাবছর পানি ধরে রেখে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে খালে পানিই নেই। এ অবস্থায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন- অপরিকল্পিতভাবে খননের কারণে এখন গড়ের খালের বেশিরভাগ জায়গাতেই পানি নেই। অনেক জায়গায় নকশা অনুযায়ী খনন হয়নি। প্রধান খাল বাদ দিয়ে খনন করা হয়েছে অপ্রয়োজনীয় শাখা খাল। খনন করা মাটি খালের পাশে রেখে দেওয়ায় দেড় বছর না যেতেই পুনরায় ভরাট হয়ে গেছে। খালের দুইপাশে চার হাজার গাছ লাগানোর কথা থাকলেও হরিলুট হয়েছে সেই অর্থ।
খাল যতটুকু খননের কথা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ততটা খনন করেনি। তলদেশ থেকে সামান্য মাটি তুলে আগাছা পরিস্কারের মধ্য দিয়ে খনন কাজ শেষ করে দিয়েছে। খাল পাড়ে মাটি রেখে দেওয়ায় বৃষ্টির সাথে সেই মাটি পুনরায় খালে নেমে গেছে। অসংখ্য স্থানে খালের এপার ওপার বাঁধ দিয়ে রাখা হয়েছে- ফলে পানি চলাচল করছে না।
কলেজছাত্র ডিএইচ রাজুর অভিযোগ, “আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিলে খাল খননের নামে টাকা হরিলুট করেছেন। এ টাকার ভাগ পেয়েছেন অনেকে। আলোচিত এই প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপারে মামলা দায়ের করার দাবি জানাচ্ছি।”
উপজেলার আদারবাড়ি এলাকায় খালপাড়ের ব্যবসায়ী নুরুল হক বলেন, “একটি এক্সকেভেটর খালের পাড়ে রেখে কিছুক্ষণ ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করেই কাজ শেষ করে দেওয়া হয়। অধিকাংশ স্থানে এভাবে কাজ করা হয়েছে। কিছু জায়গায় সামান্য মাটি উত্তোলন করা হয়েছে, কিন্তু এক বর্ষাতেই তা পুনরায় ভরে গেছে।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সদস্য মো.
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবি, নানা প্রতিবন্ধকতায় পুরো খাল খনন করা সম্ভব হয়নি। তবে ঠিকাদার ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে এবং তাকে ৫৪ শতাংশ বিল দেওয়া হয়েছে। বাকী টাকা ফেরৎ পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
পাউবো হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, “গড়ের খাল খননে ৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা চুক্তি ছিল। ঠিকাদারকে ৪ কোটি ২ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। পুরো কাজ না করায় বাকী টাকা দেওয়া হয়নি। সেই টাকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/মামুন/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ ল খনন র প রকল প উপজ ল খনন ক
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
যশোরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার আইনজীবীকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
অভিযুক্ত আইনজীবীরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি, রফিকুল ইসলাম এবং তরফদার আব্দুল মুকিত।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ওই চার আইনজীবীর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক এক এনজিওর ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই টাকা ফেরত দিতে তিনি অঙ্গীকার করে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই চেক ডিজ অনার হয় এবং একই সাথে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় মক্কেল আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
অন্যদিকে, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ওই জমির মালিককে পূর্ণাঙ্গ টাকা না দিয়ে তালবাহানা করেন। শেষমেষ আট লাখ টাকা না দেওয়ায় জমির মালিক আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
এছাড়া, রফিকুল ইসলাম নিজে আইনজীবী হয়েও আরেক আইনজীবী নুরুল ইসলামকে নির্বাহী আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম অভিযোগ দেন। অন্যদিকে, তরফদার আব্দুল মুকিত এক মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেননি। এছাড়া তিনি ওই মক্কেলের কাগজপত্র আটকে রেখে জিম্মি করে রাখেন। বাধ্য হয়ে তিনি মুকিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সমিতিতে।
এসব অভিযোগ জেলা আইনজীবী সমিতি পৃথকভাবে তদন্ত করে। একই সাথে চার আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে তাদেরকে নোটিশ দিয়ে অবগত করা হবে।”
ঢাকা/রিটন/এস