স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সতর্ক করল এফবিআই
Published: 17th, February 2025 GMT
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের প্রতারণা থেকে রক্ষা রাখতে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। সংস্থাটি জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রতারকেরা ফোনকল ও এসএমএসের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ও অর্থ হাতিয়ে নিতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। এ ধরনের প্রতারণা আগের তুলনায় আরও বাস্তবসম্মত হওয়ায় সহজেই ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
এফবিআইয়ের তথ্যমতে, প্রতারকেরা ‘স্পুফিং’ প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি সংস্থা বা ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক নম্বর থেকে ফোনকল করছে। ফলে ফোনকলটি আসল ভেবে অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে প্রতারকেরা নিজেদের মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। তারা দাবি করে, ভুক্তভোগীর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে বা শুল্কসংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হয়েছে। এরপর সমস্যা দ্রুত সমাধানের কথা বলে নির্দিষ্ট ফি বা জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রতারকেরা ফোনে সফটওয়্যার বা অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে, যা ইনস্টল করলেই স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করে ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই প্রতারণার মাত্রা এতটাই বিস্তৃত যে প্রতারকেরা বিভিন্ন দেশের স্থানীয় পুলিশ বিভাগের সদস্য পরিচয়েও ফোনকল করে থাকে।
প্রতারণার আরেকটি কৌশল হলো ভুয়া টোল বিল পরিশোধের দাবি করে এসএমএস পাঠানো। এসব বার্তায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের কথা উল্লেখ থাকে এবং একটি লিংক দেওয়া হয়, যেখানে ক্লিক করে অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়। ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) জানিয়েছে, এসব বার্তার মাধ্যমে শুধু অর্থ হাতিয়ে নেওয়া নয়, ব্যক্তিগত তথ্যও চুরি করা হয়। তবে প্রতারকেরা লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল করছে, যার ফলে এমন অনেক ব্যক্তি এসব বার্তা পাচ্ছেন, যাঁরা কখনো সংশ্লিষ্ট টোল সিস্টেম ব্যবহার করেননি বা ওই রাজ্যের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই।
এ ধরনের প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অপরিচিত বা সন্দেহজনক নম্বর থেকে ফোন এলে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। যদি কেউ সরকারি সংস্থা বা ব্যাংকের পরিচয়ে ফোন করে, তাহলে নম্বরটি যাচাই করা জরুরি। সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার অফিশিয়াল নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হতে হবে। একইভাবে কোনো লিংক পাঠানো হলে সেটিতে ক্লিক করা যাবে না এবং ব্যাংক বা কার্ডের তথ্য দেওয়া উচিত নয়। প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতে হবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, আসাদুজ্জামান নূরের অর্জিত সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে তাঁর নামে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ যেন তিনি হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সে জন্য তা জব্দ ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই মামলা করেছে দুদক। তাঁর নামে ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি রয়েছে। আরও রয়েছে তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকায়। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুনআট মাসে ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ ১৭ মে ২০২৫