অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে শিপিং করপোরেশনের
Published: 18th, February 2025 GMT
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি)। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (বিপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৫২ পয়সা; আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ টাকা ২৯ পয়সা।
একই সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিএসসির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়েছে। এই সময় কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৯ টাকা ৩৫ পয়সা এবং আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬ টাকা ৫৯ পয়সা।
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ৯৫ টাকা ৬৭ পয়সা এবং ২০২৪ সালের ৩০ জুন তারিখে যা ছিল ১০১ টাকা ৯৭ পয়সা। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে কোম্পানিটির নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পার শেয়ার বা শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ ছিল ২০ টাকা ১০ পয়সা; আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৫ টাকা ৮৪ পয়সা।
চলতি বছর ইপিএস বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিএসসি ও মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপের কারণে মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল বৃদ্ধিতে নেওয়া বিশেষ উদ্যোগ; সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি।
তবে চলতি অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য কমার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএসসির মোট আয় হয়েছিল ৬৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, মোট ব্যয় ছিল ৩৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং কর সমন্বয়ের পর নিট মুনাফা দাঁড়ায় ২৪৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএসসির নিট আয় প্রায় ৩ কোটি ৪০ কোটি টাকা বেড়েছে।
গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত, বিএসসির পরিশোধিত মূলধন ছিল ১৫২ কোটি ৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের শেয়ার ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ, যার আর্থিক মূল্য ৭৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের অংশ ৪৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, যার আর্থিক মূল্য ৭৩ কোটি ০৭ লাখ টাকা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড স ম বর ব এসস র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান
গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন–নিপীড়ন–হয়রানি চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ক তখনো আটক ছিলেন ডিবি কার্যালয়ে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে লোকদেখানো ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ পালন করা হচ্ছিল ৩০ জুলাই। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে সেদিন ‘মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং তা অনলাইনে প্রচারের কর্মসূচি’ পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে ২৯ জুলাই রাত (২০২৪ সাল) থেকেই ফেসবুকের প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম ব্যবহার শুরু হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, সাংবাদিক, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান।
ফেসবুকে অভূতপূর্ব সাড়ার পাশাপাশি নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ৩০ জুলাই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও সড়কে মিছিল করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকার করা রিটের শুনানিতে ৩০ জুলাই হাইকোর্ট মন্তব্য করেন ‘এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক’।
সেদিন দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা)। অধ্যাপক আসিফ নজরুল (বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা), টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী
শিরীন হক, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর যে মাত্রায় বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করা হয়েছে, তা দেশের জনগণ ও বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।’
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ৩০ জুলাই বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গণ–অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলো সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের (বর্তমানে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক) চলতি জুলাই মাসের ৬ তারিখ রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২৯ জুলাই (২০২৪ সাল) সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। নাছির উদ্দীন তাঁকে রাষ্ট্রীয় কালো ব্যাজের বিপরীতে লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব দেন। পরে মো. আবু সাদিক কায়েমকে (ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা) ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন আবদুল কাদের। সাদিকও সম্মতি দেন। নাছির উদ্দীন ও আবু সাদিকের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেই মুখে–চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা ও তা অনলাইনে প্রচার করার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।