আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর এবার কিস্তি পেতে দেরি হচ্ছে। আগের তিন কিস্তি ইতিমধ্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। এখন পর্যন্ত সেই অর্থ পাওয়া যায়নি।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি যে আমাদের কিছু কাজ আছে। তাই আমরা অত তাড়া করছি না। আপনারা ভাবছেন ভিক্ষা করে টাকাপয়সা নিয়ে আসি। আসলে অনেক শর্ত মেনে এবং আমাদের নিজস্ব তাগিদে অর্থ আনতে হয়।’

আইএমএফের চতুর্থ কিস্তি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু শর্ত আছে তা (আইএমএফ) বললেই আমরা পূরণ করব না। এখন আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো। চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও প্রবাসী আয় ইতিবাচক। তাই আমরা মরিয়া হয়ে উঠছি না।’

পরের কিস্তির প্রস্তাব আগামী মাসে কি ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদে উঠছে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন,

‘মার্চে নয়। বলেছি যে একটু অপেক্ষা করব। আগামী জুনে দুই কিস্তির (চতুর্থ ও পঞ্চম) প্রস্তাব একসঙ্গে উঠুক।’ মার্চ থেকে পিছিয়ে জুনে চলে যাওয়ার বিষয়টি আইএমএফের পাশাপাশি সরকারও চেয়েছে বলে জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘তারা পরামর্শ দিয়েছে। আমরাও বলেছি কিছু বিষয় আছে, যা আমরা দ্রুত করতে পারব না।’

৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও বলেছিলেন, ‘আইএমএফ যদি এখন কিছু না-ও দেয়, তাতেও কিছু যায় আসে না। কারণ, চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব এবং প্রবাসী আয়ের প্রবাহ এখন ভালো।’

যা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। মনে হচ্ছে কোথাও একটা গিট্টু লেগে গেছে। এ কারণে অর্থ উপদেষ্টা হয়তো পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না বা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ঢাকা কার্যালয়, বিশ্বব্যাংক

চতুর্থ কিস্তিতে পাওয়ার কথা ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।

প্রতিবার কিস্তি পাওয়ার আগে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদন লাগে। এর আগে ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় আসে আইএমএফের দল। চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের লক্ষ্যে আইএমএফের দল ঢাকায় আসে গত ডিসেম্বরে। তবে কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি এবার পিছিয়ে গেছে।

কেন এমন পরিস্থিতি হলো—জানতে চাইলে মোটাদাগে আইএমএফের কাঠামোগত মানদণ্ডের শর্ত পূরণ করতে না পারার কথা জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, আগের অনেক শর্ত পূরণ হয়নি। নতুন করে পূরণ না হওয়া শর্ত বেড়েছে। এবার কিস্তির শর্তগুলোর বেশির ভাগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)–সংক্রান্ত। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজস্ব প্রশাসন ও রাজস্ব নীতি আলাদা করা, যা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বাসযোগ্য অগ্রগতি নেই। ব্যক্তিগত আয়কর থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, করপোরেট কর যৌক্তিক করা, মূল্য সংযোজন করের হার ঠিক করা এবং করছাড় কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।

এ ছাড়া রয়েছে আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন ও পুরোনো আইনের সংশোধন, সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা, বিনিময় হার নির্ধারণের কাজটি ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া।

অর্থ উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। মনে হচ্ছে কোথাও একটা গিট্টু লেগে গেছে। এ কারণে অর্থ উপদেষ্টা হয়তো পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না বা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ কর্মসূচিটি কি আমরা চলমান রাখতে চাচ্ছি না? যদি চাই, তাহলে শর্তগুলো পূরণ করতে হবে। করা যে যাবে না, তা নয়। কেন করা হচ্ছে না, আমারও প্রশ্ন। তবে কিস্তি না পাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।’ তিনি বলেন, আইএমএফের কিস্তি আটকে গেলে বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তাও আটকে যেতে পারে, এটাও বিবেচনায় রাখা জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইএমএফ র

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ