সমাজ ও সময়ের চালচিত্র উঠে এসেছে যে বইয়ে
Published: 18th, February 2025 GMT
সদ্য বিগত সরকারের আমলে দেশের সামরিক গোয়েন্দাদের আয়নাঘর নামক গোপন বন্দিশালা সম্পর্কে এখন বহুল আলোচনা চলছে। এই সংস্থা আগেও নানাভাবে সাধারণ জনজীবনের ঘটনায় তাদের প্রভাব রেখেছে—এমন অভিযোগ বহুদিনের। তেমন একটি ঘটনার বর্ণনা আমরা পাই ডা. সারওয়ার আলীর ভাষ্যে। ২০০৭ সালে তিনি তখন ন্যাশনাল কাউন্সিলের নির্বাহী হিসেবে বারডেম ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের দায়িত্বে। নতুন মেডিকেল অফিসাররা চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান ডা.
এমন অনেক অজানা অধ্যায় পাঠকের সামনে উন্মোচন করা হয়েছে সারওয়ার আলীর তিন শতাধিক পৃষ্ঠার আত্মজীবনী ‘পেরিয়ে এলেম অন্তবিহীন পথ’ নামের এক অনবদ্য গ্রন্থে। প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা প্রকাশন থেকে।
দানিয়ুব নদীর তীরে গড়ে ওঠা হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট শহরের কথা ধরা যাক। উপকণ্ঠে চমৎকার বালাটন হ্রদের পাশে আছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক আবক্ষ ভাস্কর্য। একসময় কবির এই হ্রদে ভ্রমণের স্মৃতি রক্ষার্থে ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা। তবে এর এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকাও রয়েছে। হাঙ্গেরিবাসীর পক্ষে কবির নামের শুদ্ধ উচ্চারণ বেশ কঠিন। তাই সেখানে গাড়িচালকেরা মদ্যপান করেছেন কি না, তা পরীক্ষা করতে ট্রাফিক পুলিশ চালকদের কবির নাম উচ্চারণ করতে বলেন। গালগল্প নয়, ঘটনা সত্যি। ‘পেরিয়ে এলেম অন্তবিহীন পথ’–এ এমন বিচিত্র ঘটনার উল্লেখ আছে।
সারওয়ার আলী স্বনামখ্যাত ব্যক্তিত্ব। অনেকে তাঁকে অনেকভাবে চিনে থাকবেন। গত শতকের ষাটের দশক থেকে আজ পর্যন্ত দেশের আন্দোলন, সংগ্রাম, সংগঠন, সংস্কৃতিজুড়ে আছে তাঁর জীবনযাপন। আত্মজীবনীর সূচিপত্রে চোখ রাখলে এই বিস্ময় জাগে যে একজন মানুষ তাঁর একজীবনে কত বিচিত্র কাজে যুক্ত হতে পারেন! নামকাওয়াস্তে নয়, যুক্ত হয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠা ও নিখাদ আন্তরিকতায়। দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন তিনি। তবে বৃথা দিন কাটেনি। কালের প্রবাহ বহন করেছে তাঁর বহুবিধ কর্মের পরম্পরা। বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন, ‘৮০ বছর পার করেছি। স্মরণশক্তি দুর্বল হয়েছে, অল্পেই অধৈর্য হয়ে পড়ি। কর্কট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জীবনীশক্তি কমেছে।’ তা সত্ত্বেও এই কর্মযোগী মানুষটির কাজে বিরাম নেই। এখনো তাকে দেখা যাচ্ছে ছায়ানটের দায়িত্ব পালনে, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজনে কিংবা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পরিচালন কাজে, বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনে।
ডা. সারওয়ার আলীউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’