সদ্য বিগত সরকারের আমলে দেশের সামরিক গোয়েন্দাদের আয়নাঘর নামক গোপন বন্দিশালা সম্পর্কে এখন বহুল আলোচনা চলছে। এই সংস্থা আগেও নানাভাবে সাধারণ জনজীবনের ঘটনায় তাদের প্রভাব রেখেছে—এমন অভিযোগ বহুদিনের। তেমন একটি ঘটনার বর্ণনা আমরা পাই ডা. সারওয়ার আলীর ভাষ্যে। ২০০৭ সালে তিনি তখন ন্যাশনাল কাউন্সিলের নির্বাহী হিসেবে বারডেম ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের দায়িত্বে। নতুন মেডিকেল অফিসাররা চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান ডা.

এ কে আজাদ চৌধুরী ছিলেন বিদেশে। দেশে ফেরামাত্র বিমানবন্দর থেকে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। চাপের মুখে আন্দোলনরতদের দাবিদাওয়া মানতে বাধ্য করা হয়।

এমন অনেক অজানা অধ্যায় পাঠকের সামনে উন্মোচন করা হয়েছে সারওয়ার আলীর তিন শতাধিক পৃষ্ঠার আত্মজীবনী ‘পেরিয়ে এলেম অন্তবিহীন পথ’ নামের এক অনবদ্য গ্রন্থে। প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা প্রকাশন থেকে।

দানিয়ুব নদীর তীরে গড়ে ওঠা হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট শহরের কথা ধরা যাক। উপকণ্ঠে চমৎকার বালাটন হ্রদের পাশে আছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক আবক্ষ ভাস্কর্য। একসময় কবির এই হ্রদে ভ্রমণের স্মৃতি রক্ষার্থে ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা। তবে এর এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকাও রয়েছে। হাঙ্গেরিবাসীর পক্ষে কবির নামের শুদ্ধ উচ্চারণ বেশ কঠিন। তাই সেখানে গাড়িচালকেরা মদ্যপান করেছেন কি না, তা পরীক্ষা করতে ট্রাফিক পুলিশ চালকদের কবির নাম উচ্চারণ করতে বলেন। গালগল্প নয়, ঘটনা সত্যি। ‘পেরিয়ে এলেম অন্তবিহীন পথ’–এ এমন বিচিত্র ঘটনার উল্লেখ আছে।

সারওয়ার আলী স্বনামখ্যাত ব্যক্তিত্ব। অনেকে তাঁকে অনেকভাবে চিনে থাকবেন। গত শতকের ষাটের দশক থেকে আজ পর্যন্ত দেশের আন্দোলন, সংগ্রাম, সংগঠন, সংস্কৃতিজুড়ে আছে তাঁর জীবনযাপন। আত্মজীবনীর সূচিপত্রে চোখ রাখলে এই বিস্ময় জাগে যে একজন মানুষ তাঁর একজীবনে কত বিচিত্র কাজে যুক্ত হতে পারেন! নামকাওয়াস্তে নয়, যুক্ত হয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠা ও নিখাদ আন্তরিকতায়। দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন তিনি। তবে বৃথা দিন কাটেনি। কালের প্রবাহ বহন করেছে তাঁর বহুবিধ কর্মের পরম্পরা। বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন, ‘৮০ বছর পার করেছি। স্মরণশক্তি দুর্বল  হয়েছে, অল্পেই অধৈর্য হয়ে পড়ি। কর্কট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জীবনীশক্তি কমেছে।’ তা সত্ত্বেও এই কর্মযোগী মানুষটির কাজে বিরাম নেই। এখনো তাকে দেখা যাচ্ছে ছায়ানটের দায়িত্ব পালনে, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজনে কিংবা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পরিচালন কাজে, বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনে।

ডা. সারওয়ার আলী

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি

দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। 

এতে বলা হয়েছে, সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় বিশেষ করে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, বরিশাল, বরগুনাসহ যে সকল এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকরণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ অতীব জরুরি। এছাড়া, এ বিভাগের অধীন তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিগুলোর মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক বার্তা প্রচার-প্রচারণাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা অপরিহার্য। তাই ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩৪ জন। এসময়ের মধ্যে কারও মৃত্যু হয়নি। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে (ডিএসসিসি) ২৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে (ডিএনসিসি) ১৫ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন রয়েছেন।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ১৯০ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৮৯ জন। চলতি বছরের ১৬ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ২২২ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষ টিম 

এদিকে আজ সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতাল পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বরিশাল ও ঢাকায় বেশি। এটি দোষারোপের জন্য বলছি না। তবে স্থানীয় সরকারের মশক নিধন কার্যক্রমটা প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। যার ফলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তিনি বলেন, যে জায়গায় ডেঙ্গু আক্রান্ত বা এডিস মশার বিস্তার বেশি, সেখানে আমাদের স্পেশাল টিম কাজ করছে। আমাদের গাইডলাইনও আপডেট করা হচ্ছে। আজকালের মধ্যে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ