চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধীদের নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ, সড়ক অবরোধ
Published: 18th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিভাজিত হয়ে পড়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণের ঘোষিত কমিটিতে ‘ব্যবসায়ী, নারী হেনস্তায় অভিযুক্ত ও কিশোর গ্যাং’ সদস্যকে পদে বসানো হয়েছে। এ কমিটি বাতিলের জন্য তিন দফা আলটিমেটামও দেন তারা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নগরের লালখান বাজারে তারা সড়ক অবরোধ করেন। তাদের দাবি, ঘোষিত কমিটি থেকে ৫০ থেকে ১০০ জন পদত্যাগ করেছেন।
বিক্ষুব্ধ অংশটি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের অনুসারী। আর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদ পাওয়া সমন্বয়করা হলেন কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফীর অনুসারী। বিরোধের জেরে বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে কমিটি বাতিল না করলে দলবল নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার হুমকিও দেন সমন্বয়ক রাসেল।
এ প্রেক্ষাপটে ঘোষিত নতুন কমিটি নিয়ে চট্টগ্রামে রাসেল ও রাফীর অনুসারীরা কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। আজ কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক রাফী এক ফেসবুক বার্তায় নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এদিন তাঁর অনুসারীরা নগরীর ষোলশহরে কমিটির সমর্থনে মিছিল ও শোডাউন করে। বিকেল ৪টায় তাদের পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে।
গত সোমবার রাত ১২টার দিকে ছয় মাসের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল। তিনটি কমিটিতে মোট ৭৫৪ জনের নাম রয়েছে। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় থাকা যোদ্ধাদের ‘অবমূল্যায়ন’ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘ইতিহাস বিকৃত করে কমিটি ঘোষণা’র প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন রাসেল অনুসারী সমন্বয়করা।
চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ও ঘোষিত নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী সিয়াম ইলাহী বলেন, কেন্দ্র থেকে ঘোষিত তিনটি কমিটিই একপক্ষীয়। ২৪-এর স্পিরিটের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। আন্দোলনে যারা ছিল তাদের কমিটিতে না রেখে ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিভিন্ন কর্মসূচিতে এসে জ্বালাময়ী বক্তব্য যারা দিয়েছেন তাদের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব করা হয়েছে। যারা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের মাইনাস করে কমিটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের কাছে চট্টগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নারী হেনস্তা এবং কিশোর গ্যাং নিয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। যারা নারী হেনস্তা এবং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, তাদের রেখেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সনাতনী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীকে স্থান দেওয়া হয়নি। নারী সম্মুখযোদ্ধাদের মধ্যে যারা সম্মুখ সারিতে ছিল, তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাই ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে নতুন কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি।
আজ বিকেল ৩টার মধ্যে তিন কমিটি বাতিল না করায় লালখান বাজার ফ্লাইওভারের মুখে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাসেল অনুসারীরা। এ সময় পুলিশ তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে। সন্ধ্যার পর তারা সড়ক ছেড়ে দেন।
সড়ক অবরোধ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, ‘আমরা ডাইভারশন দিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করি। পরে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা সড়ক ছেড়ে দেন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ সড়ক অবর ধ সমন বয়ক ত ন কম ট র অন স র কম ট র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ