গণমাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহার বিষয়ে মুক্ত আলোচনা
Published: 18th, February 2025 GMT
জেন্ডার সংবেদনশীল প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়েছে। কিন্তু অনলাইনে হয়রানি, সাইবার বুলিং ও জেন্ডার অসংবেদনশীল ভাষার ব্যবহারও হচ্ছে। অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো অনেক ক্ষেত্রে জেন্ডার অসংবেদনশীল ভাষার ব্যবহার করছে, যা উদ্বেগজনক। অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে ভুক্তভোগীদের দোষারোপ করার প্রবণতা দেখা যায়, যা বন্ধ হওয়া উচিত।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আজ সোমবার ‘গণমাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল ভাষা’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘সমতায় তারুণ্য: ইয়ুথ ফর ইকুয়ালিটি’ প্রকল্পের আওতায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত এই মুক্ত আলোচনায় শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যমকর্মী, সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট নির্মাতা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাঁরা জানান, সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে, যা কমিয়ে দুটো মাধ্যমকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা প্রয়োজন।
আলোচনা পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার বলেন, গণমাধ্যমে নারীদের সম্পর্কে অনুমাননির্ভর সংবাদ প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং মানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় পরে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু ততক্ষণে ভুল বার্তা সবার কাছে পৌঁছে যায়।
ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার (জেন্ডার ও সিভিল সোসাইটি) মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নারীই কোনো না কোনোভাবে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে দুজন নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বহু বছর, কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে নারীদের খুব তুচ্ছভাবে ও ছোট করে চিত্রায়ণ করা হয়, কিন্তু আমরা গণমাধ্যমের কনটেন্টে নারী-পুরুষের সমান চিত্রায়ণ দেখতে চাই।’
আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সহযোগী অধ্যাপক (অস্থায়ী) মনিরা শরমিন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস) নিশাত সুলতানা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সালমা হাসনায়েন, ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জায়মা ইসলাম প্রমুখ।
আয়োজকেরা জানান, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতার ওপর একটি পুস্তিকা ও তথ্যচিত্র তৈরি করবে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ। এতে তিন শতাধিক সাংবাদিককে এর ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে চার বছর মেয়াদি সমতায় তারুণ্য প্রকল্পটি বাংলাদেশের আটটি বিভাগে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। বাংলাদেশের আটটি বিভাগে প্রকল্পের টার্গেটেড (লক্ষ্যিত) জনগোষ্ঠী মোট ১৩ হাজার ৫১৫ জন। তাদের মধ্যে স্থানীয় ২৫২টি যুব নেতৃত্বাধীন সংগঠনের যুব সদস্য, জাতীয় যুব কাউন্সিলের সদস্য, বাংলাদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট নির্মাতা রয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ন ড র স ব দনশ ল স ব দনশ ল ভ ষ
এছাড়াও পড়ুন:
অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।
বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।
গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।