সীমান্তে রাতে বিএসএফের একাধিক অস্থায়ী পোস্ট
Published: 19th, February 2025 GMT
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার নিজকালিকাপুর সীমান্তে গত সোমবার রাতে বাতি নিভিয়ে কয়েকটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। অন্যদিকে মুহুরী নদীসংলগ্ন বল্লারমুখায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ নিয়ে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে সীমান্তের ওপারে বাতি নিভিয়ে তিন-চারটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছে বিএসএফ। বিজিবি বলছে, তাদের আপত্তির মুখে পোস্টগুলো সরিয়ে নিয়েছে বিএসএফ।
বল্লারমুখার বাঁধের ৭০ মিটার অংশের ৩০ মিটার সীমান্তের শূন্য রেখায় রয়েছে– এমন দাবি করে বিএসএফ বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণের শুরু থেকেই বারবার বাধা দিয়ে আসছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারতের ঈশানচন্দ্র নগর ও বাংলাদেশের নিজকালিকাপুর ক্যাম্পের বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তের ওই স্থানে কয়েকবার মাপজোখ করা হয়।
জানা যায়, নিজকালিকাপুর সীমান্তে বল্লারমুখা বাঁধ নির্মাণ চলমান আছে। তবে শূন্য রেখা থেকে দেড়শ গজের মধ্যে হওয়ায় নতুন কাজ করতে দুই দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। ৭০ মিটার কাজের ৩০ মিটার দেড়শ গজের মধ্যে পড়েছে, যা নিয়ে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন সমন্বয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ সম্পন্ন হবে। বর্তমানে ৪০ মিটারের কাজ চলমান আছে, যা দেড়শ গজের বাইরে। বাকি ৩০ মিটার কাজে প্রয়োজন হবে যৌথ নদী কমিশন অনুমোদন।
চলমান পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষে মজুমদারহাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে বাহিনীর সদস্যরা শক্ত অবস্থান নেন। সুবেদার আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের শক্তি আগেই নষ্ট করে দিয়েছে। ১৫ বছর আগের শক্তি থাকলে তারা কাছে আসতেই পারত না।’ তিনি বলেন, ‘সীমান্তের মিটিংয়ে অস্ত্র আনা আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থি। আমরা খালি হাতে যাই। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে আসে।’
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা ঢলে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদরসহ বৃহত্তর নোয়াখালীর ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় জেলার কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১০২টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এর মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৯৬টির। এতে ব্যয় হয় ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এ ছাড়াও মেরামত কাজ চলমান রয়েছে বল্লারমুখার দুটিতে। পানির তোড়ে কালিকাপুর সীমান্তের বল্লারমুখা বেড়িবাঁধের তিনটি
স্থানে প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে এখানকার বাঁধ পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। এক মাস ধরে এসব বাঁধ পুনর্নির্মাণ চলছে।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বল্লারমুখার বাঁধ নির্মাণে বাধা দেয় বিএসএফ। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন মেনে শূন্য রেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ চলে। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, বিএসএফ সীমান্তে সোমবার রাতে বাতি বন্ধ করে তিন-চারটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছে। সকালে বল্লারমুখার বেড়িবাঁধ নির্মাণ চলাকালে তারা এক্সক্যাভেটর বন্ধ করে দিয়েছে, কাজ বন্ধ করতে বলেছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, পরশুরাম উপজেলার নিজকালিকাপুর সীমান্তে বল্লারমুখা বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। তবে শূন্য লাইন থেকে দেড়শ গজের মধ্যে নতুন কাজ হলে দুই দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সমন্বয় অব্যাহত আছে। ৩০ মিটার কাজ যৌথ নদী কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে সম্পন্ন হবে।
ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেন বলেন, বল্লারমুখা সীমান্তে বিএসএফ কয়েকটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছিল। বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হলে তারা পোস্টগুলো উঠিয়ে নেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এসএফ ব এসএফ র ৩০ ম ট র চলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁয় ১০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভোরে ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন সীমান্ত পিলার ২৫৬/৭ এস কাছ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হলে বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং আটজন নারী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন পত্নীতলা ১৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
আরো পড়ুন:
গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ
বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
আটকরা হলেন—আছমা বেগম (৪০), খাদিজা বেগম (৩৪), পাখি বেগম (২৪), রুমা বেগম (২৫), কাকলি আক্তার (২৭), রুজিনা আক্তার (৩৩), কোহিনুর বেগম (২৬), নাসরিন বেগম (৩৩), মঞ্জুরুল ইসলাম (৩৬), সুমন হোসেন (২৭)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক।
বিজিবি জানিয়েছে, আগ্রাদ্বিগুন বিওপির টহল কমান্ডার জেসিও সুবেদার মো. জিহাদ আলীর নেতৃত্বে একটি টহল দল সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মহেষপুরে ওই ১০ জনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে যান। মুম্বাই শহরে পুরুষ দুজন রাজমিস্ত্রি হিসেবে এবং নারী আটজন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তাদেরকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। গত ২৯ জুলাই ভারতের হরিবংশীপুর বিএসএফ ক্যাম্পে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বিএসএফ ওই ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিলে বিজিবি টহল দল তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা/সাজু/রফিক