ফেনীর পরশুরাম উপজেলার নিজকালিকাপুর সীমান্তে গত সোমবার রাতে বাতি নিভিয়ে কয়েকটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। অন্যদিকে মুহুরী নদীসংলগ্ন বল্লারমুখায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ নিয়ে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে সীমান্তের ওপারে বাতি নিভিয়ে তিন-চারটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছে বিএসএফ। বিজিবি বলছে, তাদের আপত্তির মুখে পোস্টগুলো সরিয়ে নিয়েছে বিএসএফ।

বল্লারমুখার বাঁধের ৭০ মিটার অংশের ৩০ মিটার সীমান্তের শূন্য রেখায় রয়েছে– এমন দাবি করে বিএসএফ বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণের শুরু থেকেই বারবার বাধা দিয়ে আসছে। 

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারতের ঈশানচন্দ্র নগর ও বাংলাদেশের নিজকালিকাপুর ক্যাম্পের বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তের ওই স্থানে কয়েকবার মাপজোখ করা হয়।

জানা যায়, নিজকালিকাপুর সীমান্তে বল্লারমুখা বাঁধ নির্মাণ চলমান আছে। তবে শূন্য রেখা থেকে দেড়শ গজের মধ্যে হওয়ায় নতুন কাজ করতে দুই দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। ৭০ মিটার কাজের ৩০ মিটার দেড়শ গজের মধ্যে পড়েছে, যা নিয়ে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন সমন্বয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ সম্পন্ন হবে। বর্তমানে ৪০ মিটারের কাজ চলমান আছে, যা দেড়শ গজের বাইরে। বাকি ৩০ মিটার কাজে প্রয়োজন হবে যৌথ নদী কমিশন অনুমোদন।

চলমান পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষে মজুমদারহাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে বাহিনীর সদস্যরা শক্ত অবস্থান নেন। সুবেদার আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের শক্তি আগেই নষ্ট করে দিয়েছে। ১৫ বছর আগের শক্তি থাকলে তারা কাছে আসতেই পারত না।’ তিনি বলেন, ‘সীমান্তের মিটিংয়ে অস্ত্র আনা আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থি। আমরা খালি হাতে যাই। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে আসে।’
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা ঢলে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদরসহ বৃহত্তর নোয়াখালীর ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় জেলার কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১০২টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এর মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৯৬টির। এতে ব্যয় হয় ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এ ছাড়াও মেরামত কাজ চলমান রয়েছে বল্লারমুখার দুটিতে। পানির তোড়ে কালিকাপুর সীমান্তের বল্লারমুখা বেড়িবাঁধের তিনটি 
স্থানে প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে এখানকার বাঁধ পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। এক মাস ধরে এসব বাঁধ পুনর্নির্মাণ চলছে। 

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বল্লারমুখার বাঁধ নির্মাণে বাধা দেয় বিএসএফ। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন মেনে শূন্য রেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ চলে। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, বিএসএফ সীমান্তে সোমবার রাতে বাতি বন্ধ করে তিন-চারটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছে। সকালে বল্লারমুখার বেড়িবাঁধ নির্মাণ চলাকালে তারা এক্সক্যাভেটর বন্ধ করে দিয়েছে, কাজ বন্ধ করতে বলেছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, পরশুরাম উপজেলার নিজকালিকাপুর সীমান্তে বল্লারমুখা বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। তবে শূন্য লাইন থেকে দেড়শ গজের মধ্যে নতুন কাজ হলে দুই দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সমন্বয় অব্যাহত আছে। ৩০ মিটার কাজ যৌথ নদী কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে সম্পন্ন হবে।

ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেন বলেন, বল্লারমুখা সীমান্তে বিএসএফ কয়েকটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছিল। বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হলে তারা পোস্টগুলো উঠিয়ে নেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসএফ ব এসএফ র ৩০ ম ট র চলম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গয়েশপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে। এরপর তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে। 

ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরে যাননি মাসুদ। তিনি অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কাটাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার বেশ কিছু কর্মকান্ডে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরই মাসুদকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। যেহেতু তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই পুলিশ তাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। 

বিষয়টি সামনে আসার পরই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের পক্ষে কিছুই জানানো হয়নি। 

অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ভারত বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও ভোমরা ঘোজাডাঙা সীমান্তে এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরো ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক। 

পুলিশ ও বিএসএফের যৌথ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক বাংলাদেশি নাগরিককে। আটককৃতে ওই ব্যক্তির নাম পঞ্চানন পাল। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা থানার বাসিন্দা। ভারতে তিনি পরিচয় বদল করে রূপায়ণ পাল নামে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও এমনকি ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। 

একইদিনে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তের কাছে সরুপনগর এলাকার তারালি সীমান্ত থেকে বিএসএফের ১৪৩নম্বর ব্যাটালিয়নের হাতে আটক হয়েছেন আরো বাংলাদেশি নাগরিক। 

সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে আটকের পর তাদের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু, তিনজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর সবাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং খুলনার বাগেরহাটের বাসিন্দা।

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেট সীমান্তে বাংলাদেশে ঢুকে খুঁটি উপড়ে ফেলে বিএসএফ, স্থানীয়দের প্রতিবাদ
  • পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে কর্মকর্তা নিয়োগ, বেতন ৫১,০০০ টাকা
  • জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক