‘অনুমতি ছাড়া অনূদিত বই প্রকাশ সম্পূর্ণ অবৈধ’
Published: 20th, February 2025 GMT
কামরুল হাসান শায়ক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.-এর প্রকাশক। পাঠকের প্রত্যাশা পূরণে ফিকশন, নন-ফিকশন, ফ্যান্টাসি, সায়েন্স ফিকশন, হরর, কমিক্স, অটোবায়োগ্রাফি, অনুবাদ ইত্যাদি বই নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি তিনি দেশের প্রকাশনাকে সমষ্টিগতভাবে বিশ্বমানে উন্নীত করে আন্তর্জাতিক প্রকাশনাপ্রবাহে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। দেশ এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তার রয়েছে প্রশংসনীয় অগ্রণী ভূমিকা। একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে অনূদিত বইয়ের বহুবিধ বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন অলাত এহ্সানের সঙ্গে।
অলাত এহ্সান : বইমেলায় অনুবাদ বইয়ের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। পাঠক পরিসরে আলোচনাও শোনা যায় এসব বই নিয়ে। বিক্রিও আশাপ্রদ। প্রকাশক হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
কামরুল হাসান শায়ক : বাংলাদেশে অনুবাদকৃত বইয়ের প্রকাশনা বাড়ছে। বিশেষ করে যে বইগুলো বিশ্বব্যাপী পাঠকপ্রিয়তা পায়, নোবেল বা বুকার পুরস্কার পায় এমন বইগুলোই বাংলাদেশের অনুবাদকগণ অনুবাদ এবং প্রকাশকরা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। প্রকাশিত অনুবাদের সব বইয়ের বিক্রি কিন্তু ভালো নয়। যে বইগুলোর অনুবাদ ভালো, বিষয়বস্তু ভালো পাঠক সেই বইগুলোই গ্রহণ করেন। আমাদের দেশে একই বই দেখা যায় ৬-৭টি প্রকাশনা সংস্থা বিভিন্ন অনুবাদকের অনুবাদে প্রকাশ করছেন। কিন্তু ক্লিক করবে একটি বা দুইটি মাত্র। প্রকাশক হিসেবে অনুবাদের বই প্রকাশে পাঞ্জেরীর অভিজ্ঞতা বেশ ভালো। আমরা তো ধারাবাহিকভাবে কিশোর ক্লাসিক, শিশুতোষ ক্লাসিক প্রকাশ করছি, অন্যান্য জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বইও অনুবাদ করিয়ে প্রকাশ করছি।
অলাত এহ্সান : বাংলা ট্রানস্লেশন ফাউন্ডেশনের (বিটিএফ) সঙ্গে পাঞ্জেরী কাজ করেছে। তারা অনুবাদ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে, উদ্যোগ নিচ্ছে। যেমন পুরস্কার প্রদান। এগুলো মানসম্মত অনুবাদে কতটুকু ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন?
কামরুল হাসান শায়ক : মূলত পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
অলাত এহ্সান : দেশে বহু বই অনুবাদ হয়, কিন্তু সবই প্রায় ইংরেজি থেকে। এর কারণ কী? এটা অনুবাদের ভাষাগত বন্ধ্যাত্বের প্রকাশ থেকে কিনা?
কামরুল হাসান শায়ক : বাংলাদেশে বেশির ভাগ বই ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ হচ্ছে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ অনুবাদক এবং প্রকাশক অনুবাদ সাহিত্য অনুবাদ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে তেমন সিরিয়াস এবং পরিশ্রমী নন। সাহিত্য মান ঠিক রেখে অনুবাদ করার পাঁচটি বেসিক স্তর রয়েছে। সেই স্তরের একটি স্তর হচ্ছে অনুবাদ করার সময় মূল ভাষার বইটিকে সামনে রেখে অনুবাদ করা এবং সম্ভব হলে মূল লেখক অথবা সেই ভাষার কোনো লেখকের সহযোগিতা নিয়ে ভাষা ও সাহিত্যের মান নিশ্চিত করা। বইটি যদি অন্য ভাষা থেকে ইংরেজিতে হয়, অনুবাদক যদি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে চান, তবুও মূল ভাষার একজন লেখকের সহযোগিতা নিয়ে অনুবাদিত পাণ্ডুলিপির বিষয়, ভাষা ও সাহিত্যের মান, মূল ভাষার বিষয়, সাহিত্য মানের সঙ্গে নিশ্চিত করা উচিত। বাংলাদেশে এসব কিছুর চর্চা খুবই কম। যার ফলশ্রুতিতে মানসম্মত অনুবাদ হচ্ছে না। অধিকাংশ অনুবাদকই ইংরেজি থেকে যেন-তেনভাবে অনুবাদ করছেন। পাঠক মূল লেখার বিষয়, ভাষা ও সাহিত্যের স্বাদটুকু পাচ্ছেন না। বিভ্রান্ত হচ্ছেন, ঠকছেন। তাই আমি বলব- মূল ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজি থেকে অনুবাদে শুধু ভাষাগত বন্ধ্যাত্বই নয়, বরং অনুবাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার ফলে পুরো অনুবাদকর্মটিই মানহীন হয়ে পড়ছে।
অলাত এহ্সান : দেশে অনুবাদ বইয়ের বাজার মন্দ নয়। কিন্তু কোনো বই-ই প্রায় অনুবাদ স্বত্ব কিনে করা নয়। কারণ কী?
কামরুল হাসান শায়ক : বাংলাদেশে অনুবাদ বইয়ের বাজার ধীরে ধীরে বাড়ছে। এখন সময় এসেছে মানসম্মত অনুবাদের পাশাপাশি অনুবাদ স্বত্ব কিনে বই প্রকাশ করার। অবশ্য যে সব বইয়ের উপর স্বত্ব শর্ত আরোপিত নয়, সেইসব বই যে কেউ অনুবাদ এবং প্রকাশ করতে পারে। সাধারণত আমেরিকান লেখকদের মৃত্যুর ৭০ বছর পর্যন্ত মেধাস্বত্ব শর্ত আরোপিত থাকে। আমাদের উপমহাদেশসহ অধিকাংশ দেশে লেখকের মৃত্যুর ৫০ বছর পর্যন্ত মেধাস্বত্ব শর্ত আরোপিত থাকে। লেখকের জীবদ্দশা থেকে শুরু করে মৃত্যুর পর পঞ্চাশ বছরের মধ্যে তার বই অনুবাদ করতে হলে অবশ্যই অনুমোদন বা চুক্তি করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি অনেক বিখ্যাত লেখকের জনপ্রিয় বই বা লেখক নোবেল বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পাওয়ার সাথে সাথে ওই লেখকের এজেন্ট বা প্রকাশকের অনুমতি ছাড়াই আমাদের দেশে তাদের বই অনুবাদ ও প্রকাশের হিড়িক পড়ে যায়। এই বইগুলোর প্রকাশ সম্পূর্ণ অবৈধ। ওই লেখক বা তার লিটারারি এজেন্ট বা প্রকাশক জানতে পারলে WIPO ( World Intellectual Property Organisation)- এ অভিযোগ করতে পারেন। আন্তর্জাতিক আদালতে কপিরাইট আইনে মামলা করতে পারেন। অনুমোদনবিহীনভাবে অনুবাদ সাহিত্য রচনা এবং প্রকাশের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করা সম্ভব, কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্ভব নয় বা স্বীকৃতি দেওয়া উচিত নয়।
অনুবাদ স্বত্ব কেনার প্রক্রিয়া একটু জটিল। অনুবাদ স্বত্ব কেনার জন্য লেখক, লিটারারি এজেন্ট বা প্রকাশকের সাথে International Right Agreement করতে হয়। সেখানে অনেক নিয়ম কানুনের মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছে-
১. চুক্তিতে নির্দেশিত মানসম্মত অনুবাদ এবং প্রকাশনা নিশ্চিত করা। অনেক ক্ষেত্রে অনুবাদে সন্তুষ্ট হয়ে অনেক অনুবাদককে লাইসেন্স দেয়ারও রেওয়াজ রয়েছে।
২. রয়্যালিটি বা এককালীন মূল্য পরিশোধ। এটির পরিমাণ প্রায় সময় অনেক বেশি হয়ে থাকে।
এই দুটি কারণে মূলত বাংলাদেশের অধিকাংশ অনুবাদক এবং প্রকাশকগণ স্বত্ব অনুমোদনের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। পাঞ্জেরী এবং বিটিএফ যেসব অনুবাদ সাহিত্যকর্ম নিয়ে কাজ করছে, প্রত্যেকটির অনুবাদ স্বত্ব কিনে অনুবাদ এবং প্রকাশ করেছে।
অলাত এহ্সান : অনুবাদ স্বত্ব না তোলায় আমাদের অনুবাদকরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। তাতে আমরা কি পিছিয়ে পড়ছি?
কামরুল হাসান শায়ক : মূল থেকে অনুবাদ ছাড়া বাংলা একাডেমির অনুবাদ পুরস্কারের জন্য বিবেচনা না করার সিদ্ধান্ত সঠিক। শুধু তাই নয়, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মানসম্মত অনুবাদ হয়েছে কি না, অনুবাদ স্বত্বের অনুমোদন আছে কি না এসব কিছু বিবেচনায় বাংলা একাডেমির অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া উচিত।
অলাত এহ্সান : দেশে একটা বইয়ের পাঁচ-সাতটা পর্যন্ত অনুবাদ হচ্ছে। বিশেষ করে জনপ্রিয় বা পুরস্কারপ্রাপ্ত বইগুলোর ক্ষেত্রে এটা বেশি ঘটছে। বইয়ের মান নিয়েও কিছু বলার থাকছে না।
কামরুল হাসান শায়ক : চুক্তিপত্র ছাড়া কোনো ধরনের বই প্রকাশ হওয়া উচিত না। এটির সর্বাত্মক বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চুক্তিপত্র ছাড়া প্রকাশক বই প্রকাশ করলে লেখক ইচ্ছে করলে এ বিষয়ে কপি রাইট অফিসে অভিযোগ করতে পারেন, কোর্টে বা থানায় মামলাও করতে পারেন। তবে বইমেলার উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে লেখক- প্রকাশকের চুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরির জটিলতা সব পক্ষের এড়িয়ে যাওয়া সকলের জন্যই মঙ্গলজনক।
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ব দ স হ ত য ন শ চ ত কর র অন ব দ অন ব দ ক অন ব দ ব অন ব দ র ত অন ব দ য় অন ব দ বইয় র ব ক জ কর ব ট এফ আম দ র বইম ল বইগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জমি অন্যের, স্থাপনা বিএনপি নেতার
মুন্সীগঞ্জে বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে তারা নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের চরবানিয়াল মৌজায় এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত দু’জন হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা গোলাম মর্তুজা সরকার এবং তাঁর ছেলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন সরকার বাবু।
গতকাল বুধবার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে গিয়ে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ চালু রাখার সত্যতা পেয়েছে সদর থানা পুলিশ।
জানা গেছে, বাংলাবাজারের চরবানিয়াল মৌজায় ১৮৬ শতাংশ জায়গার মালিক দেলোয়ার হোসেন গং। ওই সম্পত্তির দখল নিয়ে বিএনপি নেতা মর্তুজা ও মোয়াজ্জেম পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। এতে আদালতের দ্বারস্থ হন দেলোয়ার। গত মঙ্গলবার সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত সেখানে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। কিন্তু বিএনপির দুই নেতা বুধবার সকাল থেকে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, পৈতৃক সূত্রে তিনি এ জায়গার মালিক। এর মধ্যে তাঁর শরিকের কাছ থেকে কিছু পরিমাণ জমি কিনেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা। অথচ তাঁর সম্পত্তিতে তারা জোর করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন। গোলাম মর্তুজার ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এ নির্মাণকাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন সরকার বাবু বলেন, জায়গাটির মালিক তারা। ১৭ বছর ধরে তারা এ জায়গা ভোগ দখল করছেন। তাই তারা এ জমিতে দোকানপাট নির্মাণ করছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, শিগগির এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।