ক্ষুদ্রঋণ ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেন সমার্থক শব্দ। একে অপরের সর্বনাম। যিনি ক্ষুদ্রঋণের সম্ভাবনাকে কেবল কেস স্টাডি হিসেবে নেননি, আন্দোলনে পরিণত করেছেন। এ নিয়ে বিশ্বমুক্তির স্বপ্নে হেঁটেছেন পৃথিবীর পথে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামের কর্মসূচিকে সীমাবদ্ধ রাখেননি নির্দিষ্ট কোনো ভূগোলে, পৌঁছে দিয়েছেন সারা পৃথিবীতে।
জেমস জে.
ক্ষুদ্রঋণের ইতিহাস-ঐতিহ্য নতুন নয়। বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ১৯৩১ সালে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপিতে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে যার নজির রয়েছে। যেখানে উল্লিখিত হয়েছে, জনসাধারণকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ দেওয়া ও লিখে রাখার নির্দেশনামা। এতে নতুন ফসল উঠলে শস্য বা গণ্ডক দিয়ে তা পরিশোধের কথাও রয়েছে। মৌর্য যুগে সম্রাট অশোকের ওই নির্দেশনামায় প্রতীয়মান হয়, এই ভূগোলে ক্ষুদ্রঋণের পরম্পরা কয়েক হাজার বছরের। রাষ্ট্রের শাসক-প্রশাসকের ঘেরাটোপের বাইরে যে সমাজ কাঠামো, সেখানেও জারি রয়েছে ক্ষুদ্রঋণের সংস্কৃতি। গ্রামের সাধারণ পরিবারগুলোয় এ ধারা এখনও চর্চিত। ওরা মরিচটা-পেঁয়াজটা থেকে গৃহস্থালির অনেক কিছু কর্জ করে চালায়, মনে রেখে সময়মতো ফেরত দেয়। রাজধানীর বস্তিতে যারা থাকে, রাস্তার পাশে, পাইপের ভেতরে যাদের বাস, তারাও অভ্যস্ত এই রেওয়াজে।
সময়ের পরিক্রমায় কর্মপরিধি বাড়িয়েছে রাষ্ট্র, মনোযোগী হয়েছে নানান ভূমিকায়। বাঁক বদল ঘটেছে সমাজে। সংকট ও অসহায়ত্ব বেড়েছে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে নারী–মা, ভগিনী, গৃহবধূ যাদের পরিচয়। পুরুষ প্রধান সমাজ হলেও শেষাবধি দুঃখ-কষ্ট সয়ে সংসারটা সচল রাখতে হয় নারীদেরই। এই সচলতায় ক্ষুদ্রঋণ এক মহৌষধের নাম। যার আবিষ্কারক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি দেখলেন যারা ঋণ পেলে সমাজ-রাষ্ট্রে বড় অবদান রাখতে পারেন। অর্থনীতির চেনা চরিত্র বদলে দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন। তারা ঋণ পান না, বিশেষ করে রাষ্ট্রের তরফে। কারণ বন্ধক রাখার সামর্থ্য নেই। আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রে বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার নিয়ম পুরোনো। যারা সাধারণ, যাদের বন্ধক রাখার সামর্থ্য নেই, বিশেষ করে মেয়েদের– তাদের কী হবে? যদি কিছু বন্ধক রাখার সক্ষমতা থাকেও তার মালিকানা বা কর্তৃত্ব খাটানোর সুযোগ তো তাঁর নেই। তা হলে কী হবে ওদের? ওরা ব্যর্থ হলে, পতিত থাকলে কি দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব? হবে না, অথচ সামান্য একটু ঋণ পেলে তাদের পক্ষেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। এসব বিষয় অবলোকন করলেন মুহাম্মদ ইউনূস। কেবল অবলোকন নয়, অনুসন্ধান করলেন দারিদ্র্য দূর করার পথ। তখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ক্যাম্পাসের পাশে জোবরা গ্রামে শুরু করলেন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি। এর পর যে অধ্যায় সূচিত হলো তাঁর জীবনে, তা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। সেই রূপকথা হাজির করেছেন অ্যালেক্স কাউন্টস।
এই বইয়ের বিশেষত্ব হলো, শুধু ক্ষুদ্রঋণের গল্প হাজির করা হয়নি, সমাজ-রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সামাজিক ব্যবসায় বড় রকমের রূপান্তরের দিকটিকেও উপস্থাপন করা হয়েছে। অ্যালেক্স দেখিয়েছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের ধারণা ও প্রয়োগ কীভাবে সাধারণ মানুষের বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক ব্যবসাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
অ্যালেক্সের অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন এই বই পাঠকে অনিবার্য করেছে। বিশেষ করে যারা ক্ষুদ্রঋণ, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক ব্যবসা ও মুহাম্মদ ইউনূসকে বুঝতে চান। লেখক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের দীর্ঘ যাত্রায় যুক্ত হয়ে। যার অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে কাটিয়েছেন ১৫ মাস।
বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেওয়া লেখকের বক্তব্যে আমরা জানতে পারি, ‘ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাব কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী গভীর। গ্রামীণ মডেল যুক্তরাষ্ট্রে সফল হয়েছে, যেখানে ধনী এলাকা থেকে শুরু করে সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায় পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। একজন মানুষ কীভাবে দেশের মাটিতে পা রেখে বিশ্বমুক্তির স্বপ্ন দেখতে পারেন, তিনি তাঁর অনন্য উদাহরণ। এই বই ইউনূসের এবং বাংলাদেশের বায়োগ্রাফি বিশেষ। অ্যালেক্সের পরিশ্রম-নিষ্ঠা ও গবেষণায় তা চমৎকার এক ভাষা পেয়েছে। বাংলাদেশের পরিবর্তন ও একজন বিশ্বচিন্তকের পরিভ্রমণ এবং আকাঙ্ক্ষাকে বুঝতে এই বইয়ের নিবিড় পাঠ জরুরি। ভাষা শহীদের মাস একুশে ফেব্রুয়ারিতে যা হতে পারে দুর্দান্ত এক অভিজ্ঞতা।
স্মল লোনস, বিগ ড্রিমস: মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক এবং দ্য গ্লোবাল মাইক্রোফিন্যান্স রেভ্যুলেশন, অ্যালেক্স কাউন্টস, প্রচ্ছদ পরাগ ওয়াহিদ, ইউপিএল, প্রকাশ জানুয়ারি ২০২৫, পৃষ্ঠা ৪০৮, দাম ১২০০ টাকা।
কাজল রশীদ শাহীন : সাংবাদিক ও গবেষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল ব শ ষ কর ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে দলের গুলশানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন। এছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচন করবেন।
বগুড়ায় সংসদীয় ৭টি আসনের মধ্যে ৬টির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসন থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম; বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে আব্দুল মুহিত তালুকদার; বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন; বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসন থেকে বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ; বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহাজানপুর) আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ওই আসনটি শরীক দলকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
আরো পড়ুন:
ফুটবলার থেকে রাজনীতিক: বিএনপির মনোনয়ন পেলেন আমিনুল হক
বিএনপির মনোনয়ন পেলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই নেতা
বগুড়ার দুটি আসন থেকে তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল করেছে।
ঢাকা/এনাম/বকুল