কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ সোনাহাট সেতুর পাটাতন ভেঙে একটি পাথর বোঝাই ট্রাক আটকে যায়। এরফলে ওই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও এলাকাবাসী। পরে মেরামত শেষে সেতুটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম এতথ্য জানান।

এলাকাবাসী জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পাথরবোঝাই একটি ট্রাক সোনাহাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে ওঠে। এসময় সেতুর স্টিলের অংশে পাটাতন ভেঙে ট্রাকটি আটকে যায়। এ কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল। দ্রুত সেতুটির মেরামত কাজ শুরু করে কৃর্তপক্ষ। রাত ১০টার দিকে মেরামত শেষে যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ।

আরো পড়ুন:

পদ্মা সেতুতে বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেল অ্যাম্বুলেন্স, আহত ৫

যমুনা রেল সেতুতে যাত্রীবাহী ট্রেন উঠছে আজ

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮৭ সালে লালমনিরহাট থেকে ভারতের গৌহাটি পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। তারই অংশ হিসেবে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের ওপর নির্মিত হয় ১২০০ ফুট দীর্ঘ সোনাহাট রেলসেতু। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের প্রবেশ ঠেকাতে সেতুটির একটি অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেতুটি মেরামত করে ভূরুঙ্গামারীর দক্ষিণের তিন ইউনিয়ন ও কচাকাটা থানা, কেদার, মাদারগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সচল করা হয়। ব্রিটিশ আমলে সেতুটির আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয় ১০০ বছর। সেই মতে সোনাহাট সেতুর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। সোনাহাট স্থলবন্দর চালু হলে এই সেতুর ওপর দিয়ে পরিবহন শুরু হয় পাথর ও কয়লা। 

সোনাহাট স্থলবন্দর এবং ভুটানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য ঝুঁঁকিপূর্ণ রেল সেতুর পাশে দুধকুমার নদের দক্ষিণে ২০১৮ সালে ৬৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি নতুন পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চার দফা মেয়াদ এবং বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় ব‍্যবসায়ী শহিদুল  বলেন, “এই সেতুদিয়ে আগে ট্রেন চলতো। এখন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চালাচল করে। পাথরবোঝাই ট্রাক যাওয়ার সময় সেতুটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। সরু এই সেতু দিয়ে যখন একটি ট্রাক যায় তখন পাশ দিয়ে অন্য কোনো যানবাহন যাওয়ার জায়গা থাকে না। যে কারণে সেতুর দুই প্রান্তে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়।”

কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, “সেতুটি মেরামত করা হয়েছে। রাত ১০টার দিকে এই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।”

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই স ত ম র মত র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ