‘নির্বাচন দেওয়ার আগে ভাই হত্যার বিচার করুন’
Published: 22nd, February 2025 GMT
জুলাই হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, একদল রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। আরেক দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন চাচ্ছে। যাঁদের রক্তের ওপর দিয়ে দেশ নতুন করে স্বাধীন হলো, তাঁদের হত্যার বিচারের কথা কেউ বলছেন না।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’ নামের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথাগুলো বলেন। তিনজন উপদেষ্টা নিয়ে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী পরিষদ কমিটি গঠন করা হয়।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মো.
শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তাঁদের সরকার। কিন্তু তাঁরা শহীদ পরিবারের কষ্ট বুঝতে পারছে না। হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ ও হেলমেট বাহিনীর সদস্যদের অনেককেই এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। দ্রুত তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সাজ্জাত হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, ‘পুলিশ আমার ছেলেকে আশুলিয়ায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সাত মাস হয়ে গেল আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার পেলাম না।’
আক্ষেপ করে শাহিনা বেগম বলেন, ‘কান্না করতে করতে এখন চোখের জল শুকিয়ে গেছে। তবুও ছেলে হত্যার বিচার পাচ্ছি না।’
ভাই হত্যার বিচারের দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন নাবিল হোসেন। তিনি বলেন, ১৮ জুলাই তাঁর ভাই সোহেল রানা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলন করেছিলেন। পুলিশ তাঁকে গুলি করে হত্যার পর বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে। আজও ভাইয়ের কবর শনাক্ত করতে পারেননি।
নাবিল হোসেন বলেন, ‘আর কোনো আশ্বাস নয়, রায়েরবাজারে যে ১১৪ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে কবর দেওয়া হয়েছে, তাঁদের শনাক্ত করতে হবে। যাঁরা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম
দেশে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ অপরিণত (প্রিম্যাচিওর) শিশু। জন্মের সময় গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ায় এসব নবজাতকের ঝুঁকি থাকে নানা জটিলতায় পড়ার, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই নবজাতকদের মৃত্যু হ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এই তথ্য জানানো হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। তিনি বলেন, মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপের মাধ্যমে দেশের পাচঁটি হাসপাতাল মা ও নবজাতক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা পেয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টার কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করে নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।
বিএমইউর নিওনাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে বছরে অপরিণত ৬ লাখ শিশু জন্মায়। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
বিএমইউর ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। গত ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নেই। কেনো কমানো যাচ্ছে না এবিষয়েও কোনো গবেষণা হয় না। তবে সচেতনতা, প্রসূতি সেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য কার্যক্রম জোরদার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অপরিণত শিশুর জন্মের পেছনে রয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, সময়মতো প্রসবপরিচর্যার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রসবকালীন জটিলতা। এ ছাড়া ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণও অন্যতম কারণ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সোয়াপের মাধ্যমে নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গবেষণা ও উন্নয়ন অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।