দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা আছে, এটা অস্বীকার করার কোনো রকম উপায় নেই। এই ব্যর্থতা উত্তরণের জন্য প্রচণ্ড তাড়না ও চেষ্টা আছে।’

আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর পিটিআই মিলনায়তনে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ক কর্মশালায় যোগদানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।

কর্মশালায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘মানুষের সন্তুষ্ট না থাকার কারণ থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এ রকম নয় যে আমাদের আত্মসন্তুষ্টির স্কোপ আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত ছয় মাসে মাঝেমধ্যে ভালো থেকেছে, মাঝেমধ্যে খারাপ হয়েছে। যখন খুব খারাপ কিছু হয়, আমরা প্রচণ্ড আত্মজিজ্ঞাসার সম্মুখে পড়ি, খুবই খারাপ লাগে। আমরা তো এই সমাজে বসবাস করি। আমাদের বন্ধুবান্ধব, পরিবার–পরিজন, পরিচিত আছে, বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের কথা শুনি। কারও তো ভালো লাগার কথা নয়।’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘আপনাদের একটু অনুরোধ করি, আপনারা কিছু বাস্তব পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেন। আমরা কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছি, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন। তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে, তাদের ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতে পারে, তাদের দায়িত্ব পালনে সমন্বয় বা ভূমিকার ব্যর্থতা থাকতে পারে। তারপর পুলিশ, বিচার, প্রশাসন সব ক্ষেত্রেই... আমরা যেটা সহজ কথায় বলতে চাই, আমরা ধ্বংস হওয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’

বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে পৃথিবীর কোনো দেশেই শাসনকার্য এত সহজ ব্যাপার নয় মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি আছে, তাদের কিছু লোক পালিয়েছে, অধিকাংশই দেশে আছে। তাদের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা। এটা তো বানানো কথা নয়। টাকা থাকলে, বদ মতলব থাকলে আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার অনেক কিছু করা যায়। তাদের একটা ভূমিকা থাকতে পারে। আছে বলেও আমরা অনেকে বিশ্বাস করি। আবার যারা স্বভাবগত অপরাধী, তাদেরও ভূমিকা রয়েছে। আমাদের ব্যর্থতা আছে, এটা অস্বীকার করার কোনো রকম উপায় নেই। একটা কথা বলতে চাই, আমাদের এই ব্যর্থতা উত্তরণের জন্য প্রচণ্ড তাড়না ও চেষ্টা আছে। চেষ্টা করছি আমরা। আপনারা জানেন, এই রকম বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে পৃথিবীর কোনো দেশেই শাসনকার্য এত সহজ ব্যাপার নয়। আপনারা চারদিকে তাকিয়ে দেখেন। বিভিন্ন জায়গায় কী হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের পর আমাদের দেশে কী পরিস্থিতি হয়েছে।’

এই বক্তব্যে অসহায়ত্ব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি যদি এখন আপনাকে রিয়েলিটির কথা বলি, সে ক্ষেত্রে আপনি অসহায়ত্ব দেখবেন কেন। আমি তো আমার তাড়নার কথা, দৃঢ়তার কথা, আমার প্রচেষ্টার কথাও বলেছি বারবার। যদি আমি সত্যিকারের চিত্রটা বলি, সেটাকে অসহায়ত্ব বলবেন? আমি তো বললাম, এই সব চিত্র আছে। তারপর যুক্ত করলাম, আমাদের প্রচণ্ড আত্মজিজ্ঞাসা আছে, তাড়না আছে, প্রচেষ্টা আছে। প্রতিটি ব্যর্থতার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচণ্ড চেষ্টা আছে। প্রতিবার ভালো করার জন্য।’

রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ তুলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘দেখেন, গতকাল রোববার গভীর রাতে আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আমি জানি না, আপনারা এটাকে কীভাবে দেখছেন। কিন্তু আমি তো ওনাকে কাছ থেকে দেখি। কোনো সময়ই আমরা হতোদ্যম হই না। খারাপ লাগে, কেন হচ্ছে এটা। তারপরে আমরা আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞার সঙ্গে চেষ্টা করি। আমি ওনার মধ্যে সেই চেষ্টা দেখেছি। ব্যর্থতা থাকতে পারে। আমার কাছে কথা একটাই, আমরা এখানে আত্মতুষ্টি পোষণ করি না কখনো। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ব্যর্থতায় হতোদ্যম হয়ে যাই, এ রকম ভাবি না কখনো। আমরা নতুন নতুন উপায় ভাবি। আজ যে এখানে এসেছি, সেটাও নতুন কোনো উপায় ভাবার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করার একটি অংশ।’

‘আমি যদি কখনো দায়িত্ব পাই, তাহলে জীবন দিয়ে চেষ্টা করব’, সরকারে যাওয়ার আগে আসিফ নজরুলের এমন বক্তব্যের বিষয়টি সাংবাদিকেরা সামনে আনলে তিনি বলেন, ‘আমি যদি কখনো দায়িত্ব পাই, তাহলে জীবন দিয়ে চেষ্টা করব বলতে নিশ্চয় ভাবেননি যে জানটা দিয়ে, মরে যেয়ে আত্মহত্যা করব। ভেবেছেন, আমি দিনরাত পরিশ্রম করব। আপনার কি কোনো ধারণা আছে, আমি কত ঘণ্টা কাজ করি। এখন ভাই, জীবন দিয়ে কাজ করব বলতে তো এটাই বুঝিয়েছি। আমি দিনে গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা কাজ করি। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম, তখন তিন থেকে চার ঘণ্টা কাজ করতাম।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ব পর স থ ত প রচণ ড র জন য ক জ কর আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল
  • ঢাকাসহ সারা দেশে এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ১৪৯