আমাদের ব্যর্থতা আছে, উত্তরণের জন্য প্রচণ্ড তাড়নাও আছে: আসিফ নজরুল
Published: 24th, February 2025 GMT
দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা আছে, এটা অস্বীকার করার কোনো রকম উপায় নেই। এই ব্যর্থতা উত্তরণের জন্য প্রচণ্ড তাড়না ও চেষ্টা আছে।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর পিটিআই মিলনায়তনে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ক কর্মশালায় যোগদানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।
কর্মশালায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
আসিফ নজরুল বলেন, ‘মানুষের সন্তুষ্ট না থাকার কারণ থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এ রকম নয় যে আমাদের আত্মসন্তুষ্টির স্কোপ আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত ছয় মাসে মাঝেমধ্যে ভালো থেকেছে, মাঝেমধ্যে খারাপ হয়েছে। যখন খুব খারাপ কিছু হয়, আমরা প্রচণ্ড আত্মজিজ্ঞাসার সম্মুখে পড়ি, খুবই খারাপ লাগে। আমরা তো এই সমাজে বসবাস করি। আমাদের বন্ধুবান্ধব, পরিবার–পরিজন, পরিচিত আছে, বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের কথা শুনি। কারও তো ভালো লাগার কথা নয়।’
আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘আপনাদের একটু অনুরোধ করি, আপনারা কিছু বাস্তব পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেন। আমরা কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছি, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন। তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে, তাদের ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতে পারে, তাদের দায়িত্ব পালনে সমন্বয় বা ভূমিকার ব্যর্থতা থাকতে পারে। তারপর পুলিশ, বিচার, প্রশাসন সব ক্ষেত্রেই... আমরা যেটা সহজ কথায় বলতে চাই, আমরা ধ্বংস হওয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’
বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে পৃথিবীর কোনো দেশেই শাসনকার্য এত সহজ ব্যাপার নয় মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি আছে, তাদের কিছু লোক পালিয়েছে, অধিকাংশই দেশে আছে। তাদের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা। এটা তো বানানো কথা নয়। টাকা থাকলে, বদ মতলব থাকলে আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার অনেক কিছু করা যায়। তাদের একটা ভূমিকা থাকতে পারে। আছে বলেও আমরা অনেকে বিশ্বাস করি। আবার যারা স্বভাবগত অপরাধী, তাদেরও ভূমিকা রয়েছে। আমাদের ব্যর্থতা আছে, এটা অস্বীকার করার কোনো রকম উপায় নেই। একটা কথা বলতে চাই, আমাদের এই ব্যর্থতা উত্তরণের জন্য প্রচণ্ড তাড়না ও চেষ্টা আছে। চেষ্টা করছি আমরা। আপনারা জানেন, এই রকম বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে পৃথিবীর কোনো দেশেই শাসনকার্য এত সহজ ব্যাপার নয়। আপনারা চারদিকে তাকিয়ে দেখেন। বিভিন্ন জায়গায় কী হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের পর আমাদের দেশে কী পরিস্থিতি হয়েছে।’
এই বক্তব্যে অসহায়ত্ব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি যদি এখন আপনাকে রিয়েলিটির কথা বলি, সে ক্ষেত্রে আপনি অসহায়ত্ব দেখবেন কেন। আমি তো আমার তাড়নার কথা, দৃঢ়তার কথা, আমার প্রচেষ্টার কথাও বলেছি বারবার। যদি আমি সত্যিকারের চিত্রটা বলি, সেটাকে অসহায়ত্ব বলবেন? আমি তো বললাম, এই সব চিত্র আছে। তারপর যুক্ত করলাম, আমাদের প্রচণ্ড আত্মজিজ্ঞাসা আছে, তাড়না আছে, প্রচেষ্টা আছে। প্রতিটি ব্যর্থতার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচণ্ড চেষ্টা আছে। প্রতিবার ভালো করার জন্য।’
রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ তুলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘দেখেন, গতকাল রোববার গভীর রাতে আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আমি জানি না, আপনারা এটাকে কীভাবে দেখছেন। কিন্তু আমি তো ওনাকে কাছ থেকে দেখি। কোনো সময়ই আমরা হতোদ্যম হই না। খারাপ লাগে, কেন হচ্ছে এটা। তারপরে আমরা আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞার সঙ্গে চেষ্টা করি। আমি ওনার মধ্যে সেই চেষ্টা দেখেছি। ব্যর্থতা থাকতে পারে। আমার কাছে কথা একটাই, আমরা এখানে আত্মতুষ্টি পোষণ করি না কখনো। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ব্যর্থতায় হতোদ্যম হয়ে যাই, এ রকম ভাবি না কখনো। আমরা নতুন নতুন উপায় ভাবি। আজ যে এখানে এসেছি, সেটাও নতুন কোনো উপায় ভাবার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করার একটি অংশ।’
‘আমি যদি কখনো দায়িত্ব পাই, তাহলে জীবন দিয়ে চেষ্টা করব’, সরকারে যাওয়ার আগে আসিফ নজরুলের এমন বক্তব্যের বিষয়টি সাংবাদিকেরা সামনে আনলে তিনি বলেন, ‘আমি যদি কখনো দায়িত্ব পাই, তাহলে জীবন দিয়ে চেষ্টা করব বলতে নিশ্চয় ভাবেননি যে জানটা দিয়ে, মরে যেয়ে আত্মহত্যা করব। ভেবেছেন, আমি দিনরাত পরিশ্রম করব। আপনার কি কোনো ধারণা আছে, আমি কত ঘণ্টা কাজ করি। এখন ভাই, জীবন দিয়ে কাজ করব বলতে তো এটাই বুঝিয়েছি। আমি দিনে গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা কাজ করি। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম, তখন তিন থেকে চার ঘণ্টা কাজ করতাম।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র ব পর স থ ত প রচণ ড র জন য ক জ কর আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস