‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে ট্রাস্টি নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 24th, February 2025 GMT
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে কলামিস্ট, সংগঠক ও শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রাস্টি নাহিদ হাসান নলেজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
রোববার কুড়িগ্রামের চিলমারী থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
নাহিদ হাসান নলেজ চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের রমনা মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি একাধারে শিক্ষক, সংগঠক, কলাম লেখক এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টি।
মামলার বাদীর নাম গোলাম মোস্তফা। তিনি চিলমারীর থানাহাট ইউনিয়নের ছোটকুষ্টারি গ্রামের বাসিন্দা।
মামলায় নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দিয়ে জনরোষ সৃষ্টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নাহিদ হাসানকে ‘রাসূল (সা.
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘নাহিদ হাসান তার ফেসবুক আইডি থেকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট করে। আসামি তার অনুসারী রাখাল রাহার ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে আবারো কটূক্তি ও হাদিসকে ভুয়া ও জাল হাদিস বলে পোস্ট করে। আসামি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন হতে রাখাল রাহার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যবহৃত মোবাইল, যা ডিজিটাল ডিভাইস হতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে নিয়ে কটূক্তিমূলক মানহানিকর পোস্ট করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শনমূলক পোস্ট করেছেন।’
কী পোস্ট করেছিলেন নাহিদ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান- এর একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশর্ট শেয়ার দিয়েছিলেন নাহিদ হাসান। ওই পোস্টে ইসলামী বক্তা ত্ব-হা আদনান লিখেছিলেন, ‘শাতিমে রাসুলের কোন ক্ষমা নেই! কোন তাওবা নেই। এটাই ৪ মাজহাবের ফতোয়া। উম্মাহর ইজমা! মান সাব্বা নাবিয়্যান ফাক্বতুলুউহ! যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে গালি দিবে তার একটাই শাস্তি! কতল! মৃত্যুদণ্ড! অনতিবিলম্বে রাষ্ট্র কর্তৃক এই বিচার বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এহেন জাহান্নামের কীট দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পদে বহাল থাকা তো দেশের জন্যই অভিশাপ! আর রাষ্ট্র যদি তার দ্বায়িত্ব পালন না করে (যেমনটা কখনোই করা হয়নি) তবে এসব কা'ব বিন আশরাফ ইবনে খাতাল, আবু রাফের জন্য এ যুগের মুহাম্মাদ বিন মাসলামা, আব্দুল্লাহ বিন আত্মিক, আলি হায়দার গণই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ! এই বাংলায় কোনো শাতিমের জন্ম দেওয়াও আমরা হারাম করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ! আল্লাহু আকবার।’
ত্ব-হার ওই পোস্টটির স্ক্রিন শর্ট শেয়ার করে নাহিদ হাসান ক্যাপশনে লিখেছিলেন 'কওমী জননী ডাকা কুলাঙ্গাররা হত্যার হুমকি দিয়েই চলছে। এদের গ্রেপ্তার করা হবে না?'
তবে ‘তৌহিদী মুসলিম জনতার’ সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে কিছু সময় পর পোস্টটি সরিয়ে নেন নাহিদ। কিন্তু ততক্ষণে পানি বহুদূর গড়িয়ে যায়। শেয়ার করা পোস্টের ক্যাপশনটি ‘ রাসূল (সা.) কে অবমাননার’ শামিল আখ্যা দিয়ে নাহিদ হাসানকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি তোলে আন্দোলকারীরা। এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রশাসনকে আল্টিমেটামও দেওয়া হয়। পরে রোববার চিলমারী থানায় নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
তবে বিক্ষোভকারীদের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে একজন বিশ্বাসী মুসলিম। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আল্লাহ ও প্রিয় রাসূলের বিরুদ্ধে কোথাও কিছু লিখেছি এটা কেউ দেখাতে পারবে না। এমন কিছু কখনো বলিনি, লিখিনি। তাই কেউ দেখাতেও পারবে না।’
ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ও পরে সরিয়ে নেওয়া প্রশ্নে নাহিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা, প্রিয় মাতৃভূমিকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া একটি পক্ষের আইন হাতে তুলে নিতে চাওয়ার বিপক্ষে আমি মত দিয়েছি। এটা কি অপরাধ হতে পারে? তবুও সেই পোস্ট আমি ডিলিট করেছি। এই দুঃখিনী বাঙালি মুসলমানরা যাতে একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়তে পারে, আমি বরং এই চেষ্টা সবসময় করে গেছি।’
মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা বলেন, এ ধরনের বক্তব্য ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং অত্যন্ত অপমানজনক। আমরা তার দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি।
চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশাহেদ খান বলেন, ‘মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর থেকে নাহিদ হাসানের চিলমারীর পৈতৃক নিবাস ও কুড়িগ্রাম শহরের ভাড়া বাসার এলাকায় পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর টহল দল দেখা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প স ট কর আল ল হ কর ছ ন ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
দোয়ার ফজিলত ও আদব
দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)
আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)
মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)
‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)
নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। ‘পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)
দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।
হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]