ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে কলামিস্ট, সংগঠক ও শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রাস্টি নাহিদ হাসান নলেজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

রোববার কুড়িগ্রামের চিলমারী থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।

নাহিদ হাসান নলেজ চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের রমনা মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি একাধারে শিক্ষক, সংগঠক, কলাম লেখক এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টি।

মামলার বাদীর নাম গোলাম মোস্তফা। তিনি চিলমারীর থানাহাট ইউনিয়নের ছোটকুষ্টারি গ্রামের বাসিন্দা।

মামলায় নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দিয়ে জনরোষ সৃষ্টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নাহিদ হাসানকে ‘রাসূল (সা.

)কে অবমাননাকারী’ আখ্যা দিয়ে তার গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি তুলে চিলমারীতে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘তৌহিদী মুসলিম জনতা’। নাহিদ হাসান ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে এই ‘অবমাননা’ করেছেন বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। একই দাবিতে রোববার সন্ধ্যায় আবারও মিছিল করেন বিক্ষোভকারীরা। তবে বিক্ষোভকারীদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন নাহিদ হাসান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘নাহিদ হাসান তার ফেসবুক আইডি থেকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট করে। আসামি তার অনুসারী রাখাল রাহার ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে আবারো কটূক্তি ও হাদিসকে ভুয়া ও জাল হাদিস বলে পোস্ট করে। আসামি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন হতে রাখাল রাহার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যবহৃত মোবাইল, যা ডিজিটাল ডিভাইস হতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে নিয়ে কটূক্তিমূলক মানহানিকর পোস্ট করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শনমূলক পোস্ট করেছেন।’

কী পোস্ট করেছিলেন নাহিদ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান- এর একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশর্ট শেয়ার দিয়েছিলেন নাহিদ হাসান। ওই পোস্টে ইসলামী বক্তা ত্ব-হা আদনান লিখেছিলেন, ‘শাতিমে রাসুলের কোন ক্ষমা নেই! কোন তাওবা নেই। এটাই ৪ মাজহাবের ফতোয়া। উম্মাহর ইজমা! মান সাব্বা নাবিয়্যান ফাক্বতুলুউহ! যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে গালি দিবে তার একটাই শাস্তি! কতল! মৃত্যুদণ্ড! অনতিবিলম্বে রাষ্ট্র কর্তৃক এই বিচার বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এহেন জাহান্নামের কীট দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পদে বহাল থাকা তো দেশের জন্যই অভিশাপ! আর রাষ্ট্র যদি তার দ্বায়িত্ব পালন না করে (যেমনটা কখনোই করা হয়নি) তবে এসব কা'ব বিন আশরাফ ইবনে খাতাল, আবু রাফের জন্য এ যুগের মুহাম্মাদ বিন মাসলামা, আব্দুল্লাহ বিন আত্মিক, আলি হায়দার গণই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ! এই বাংলায় কোনো শাতিমের জন্ম দেওয়াও আমরা হারাম করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ! আল্লাহু আকবার।’

ত্ব-হার ওই পোস্টটির স্ক্রিন শর্ট শেয়ার করে নাহিদ হাসান ক্যাপশনে লিখেছিলেন 'কওমী জননী ডাকা কুলাঙ্গাররা হত্যার হুমকি দিয়েই চলছে। এদের গ্রেপ্তার করা হবে না?'

তবে ‘তৌহিদী মুসলিম জনতার’ সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে কিছু সময় পর পোস্টটি সরিয়ে নেন নাহিদ। কিন্তু ততক্ষণে পানি বহুদূর গড়িয়ে যায়। শেয়ার করা পোস্টের ক্যাপশনটি ‘ রাসূল (সা.) কে অবমাননার’ শামিল আখ্যা দিয়ে নাহিদ হাসানকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি তোলে আন্দোলকারীরা। এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রশাসনকে আল্টিমেটামও দেওয়া হয়। পরে রোববার চিলমারী থানায় নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

তবে বিক্ষোভকারীদের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে একজন বিশ্বাসী মুসলিম। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আল্লাহ ও প্রিয় রাসূলের বিরুদ্ধে কোথাও কিছু লিখেছি এটা কেউ দেখাতে পারবে না। এমন কিছু কখনো বলিনি, লিখিনি। তাই কেউ দেখাতেও পারবে না।’

ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ও পরে সরিয়ে নেওয়া প্রশ্নে নাহিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা, প্রিয় মাতৃভূমিকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া একটি পক্ষের আইন হাতে তুলে নিতে চাওয়ার বিপক্ষে আমি মত দিয়েছি। এটা কি অপরাধ হতে পারে? তবুও সেই পোস্ট আমি ডিলিট করেছি। এই দুঃখিনী বাঙালি মুসলমানরা যাতে একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়তে পারে, আমি বরং এই চেষ্টা সবসময় করে গেছি।’

মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা বলেন, এ ধরনের বক্তব্য ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং অত্যন্ত অপমানজনক। আমরা তার দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি।

চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশাহেদ খান বলেন, ‘মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ 

গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর থেকে নাহিদ হাসানের চিলমারীর পৈতৃক নিবাস ও কুড়িগ্রাম শহরের ভাড়া বাসার এলাকায় পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর টহল দল দেখা গেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প স ট কর আল ল হ কর ছ ন ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ