সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার উপর সিলট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন ভবনের কাজ যেনতেনভাবে করা হয়েছে। এরই মধ্যে পিলার, মেঝেসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় তা ভেঙে পড়তে পারে। এ কারণে ঠিকাদার ভবন বুঝিয়ে দিতে চাইলেও তারা রাজি হননি।
২০২৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তালম ইউনিয়নে উপর সিলট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজ শুরু করে। ৯০ লাখ ৭০ হাজার ৪৭৫ টাকার কাজটি পায় উল্লাপাড়ার রাতুল এন্টারপ্রাইজ। ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভবন নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে। স্থানীয় বাসিন্দা, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষকরা বারবার মানসম্মত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অনুরোধ করেন। তারা তা কানে তোলেনি। কাজ শেষ না হতেই ভবনের পিলার, ছাদ, ওয়াল, মেঝে ও ব্যালকনির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে ভবন হস্তান্তর করতে চাইলে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনীহা প্রকাশ করেন। বিষয়টি তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তদারকি কর্মকর্তাকেও জানিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, পুরো নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে। কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি একাধিকবার এলজিইডির তদারকি কর্মকর্তাকেও জানানো হয়েছে। আবার অদৃশ্য শক্তির সহায়তায় কাজ চালিয়ে গেছেন ঠিকাদার। শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ফাটল ধরা ভবন বুঝে
নিতে সাহস পাচ্ছি না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসেন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তাঁকে ভবনের ত্রুটির বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে বলেছি।’
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামের ভাষ্য, ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে– এমন অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। কাজ চলাকালে তদারকি করা হয়েছে, যাতে ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে না পারেন। ভবনের যে ফাটল হয়েছে তাকে হেয়ার ক্রাক বলা হয়। নির্মাণকাজে এমন হয়ে থাকে। এতে ভবনের কোনো ক্ষতি হবে না। সামান্য ফাটল দেখা গেছে। মেরামত করলেই ঠিক হয়ে যাবে।
রাহুল এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার অলক হাসান বলেন, ভবনে সামান্য ফাটল দেখা দিয়েছে। হস্তান্তরের আগেই মেরামত করে দেওয়া হবে। সামান্য এ ফাটলের কারণে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার।
তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিন দেখে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র ভবন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির উদ্বেগ আদালত অবমাননার শামিল: ইশরাক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদ নিয়ে ইশরাক হোসেনের মামলা, রায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তৎপরতা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টিকে আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, এনসিপি আইনের ব্যাখ্যা এবং আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে অবমাননা করেছে।
বুধবার রাতে এক প্রতিবাদলিপিতে ইশরাক হোসেনের পক্ষে তাঁর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম এ কথা বলেছেন। এর আগে গতকাল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল এনসিপি।
দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হওয়া নিয়ে এনসিপির উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করে ইশরাক হোসেনের পক্ষে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তাঁর আইনজীবী বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কারণ নিয়ে এনসিপির বক্তব্য একেবারেই শিশুসুলভ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেকোনো মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তির বিজ্ঞ আদালতের একটি সহজাত ক্ষমতা। তা ছাড়া ২০২০ সালে দায়ের করা মামলাটি ২০২৫ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে। এটি দীর্ঘ পাঁচ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, যা মোটেও সংক্ষিপ্ত সময় নয়; বরং মোকদ্দমাটি আরও আগেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন ছিল।
নির্বাচনী মামলার নিষ্পত্তি সংক্ষিপ্ত সময়ে হওয়া উচিত উল্লেখ করে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, এনসিপির এ জাতীয় বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছে, তার সম্পূর্ণ আইনি অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। মামলার তদবিরকারক বাদীর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কেউ হতে পারে বিধায় বিজ্ঞ আদালত হলফনামা গ্রহণ করেছেন, যা সম্পূর্ণ আইন মেনেই করা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ করেননি বলে যে বক্তব্য এনসিপি দিয়েছে, তা এককথায় তাদের জ্ঞানের স্বল্পতারই বহিঃপ্রকাশ এবং আদালত অবমাননার শামিল।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আদালত যথাযথ আইন মেনেই রায় প্রদান করেন। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ন্যায়বিচার হয়নি বলে মনে করে, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে এবং তার বক্তব্য ওই উচ্চ আদালতে রাখারও সুযোগ আছে। এভাবে প্রেসনোট দিয়ে বক্তব্য প্রদান দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও বিজ্ঞ আদালতকে অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়।’
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতার ইশরাক হোসেনকে গত ২৭ মার্চ মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। এর এক মাস পর আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট প্রকাশের পর এটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে শপথ গ্রহণের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। তবে কবে নাগাদ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে, সে বিষয়টি নিয়ে এখন ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচনের হিসাব অনুযায়ী আগামী ১৫ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।