জি টু জি সুবিধা নিয়ে ৩ চীনা কোম্পানির কারসাজি
Published: 25th, February 2025 GMT
জি টু জি (সরকার-সরকার) চুক্তির শর্তের ফাঁদে পড়েছে টেলিটকের ইউনিয়ন পর্যন্ত ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্প। শর্ত অনুযায়ী, সীমিত কোম্পানির মধ্যে দরপত্র আহ্বান করতে হবে। এ জন্য তিন কোম্পানির সংক্ষিপ্ত তালিকা করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পে কারসাজি করতে নির্বাচিত তিন চীনা কোম্পানি যোগসাজশের মাধ্যমে দর প্রস্তাব জমা দিয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করায় তিন কোম্পানিই অযোগ্য বিবেচিত হয়। এতে বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মোবাইল কোম্পানিটি। এই তিন কোম্পানির মধ্যে আবার দরপত্র আহ্বান করবে, নাকি নতুন কোম্পানিকে সুযোগ দেবে– এ নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় টেলিটক।
তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে চীন ঋণ দিচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৯০০ কোটি টাকা। ইআরডি নির্ধারিত কোম্পানি তিনটি হচ্ছে– চায়না ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিআইটিসিসি), ইউনান কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ (ওয়াইসিআইএইচ) ও চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কোম্পানি (সিএমইসি)।
সূত্র জানায়, দরপত্র চলাকালে এ তিন কোম্পানিকে ডেকে নিয়ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করানো হয়। তারপরও তারা এমনভাবে দরপত্র জমা দিয়েছে, যা দেখে মনে হয়, ওয়াইসিআইএইচ এবং সিআইটিসিসি ইচ্ছা করেই এ দরপত্র থেকে সরে গিয়ে চায়না মেশিনারিজকে কাজ বাগিয়ে নিতে সুযোগ করে দিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে যে দরপত্র আহ্বান করা হয়, সেখানে বলা হয়েছে– অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি দরপত্রের নিরাপত্তা অর্থ হিসেবে ৩০ লাখ ইউএস ডলার জমা দিতে হবে। এটাও বলা হয়, শুধু একক পণ্য প্রস্তাব করতে হবে; কোনো বিকল্প পণ্য দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ একটি কোম্পানির পণ্যই থাকতে পারবে; একাধিক কোম্পানির পণ্য উল্লেখের সুযোগ নেই।
চীনের কোম্পানিগুলোর জমা দেওয়া দর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনটি কোম্পানিই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এগুলোর মধ্যে সিআইটিসিসি ও ওয়াইসিআইএইচ নিরাপত্তা অর্থ জমা দেয়নি। পাশাপাশি প্রতিটি পণ্যের আলাদা নাম ও দাম উল্লেখ করার কথা থাকলেও সে শর্ত পূরণ করেনি দুই কোম্পানি। আবার কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব আলাদা না দিয়ে একসঙ্গে জমা দিয়েও নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
অন্যদিকে চায়না মেশিনারিজ একাধিক অখ্যাত কোম্পানির বিকল্প পণ্যের কথা উল্লেখ করেছে। এটাও নিয়মের লঙ্ঘন। কারণ, শর্ত ছিল বিকল্প পণ্যের নাম দেওয়া যাবে না। খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে বিকল্প রাখার মানে হচ্ছে, সুবিধামতো কম দামে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহের সুযোগ রাখা।
টেলিটকের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এ তিন কোম্পানিকেই অযোগ্য ঘোষণা করেছে। প্রকল্পটির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড.
এর আগে ২০১৩ সালে বিটিসিএলের টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশের কাজের জন্য নির্বাচিত হয় সিএমইসি। তখন দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতির কারণে চীন সরকার প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে। দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এলে বিটিসিএলের প্রায় ১৮ দশমিক ২ কোটি ডলারের প্রকল্প ভেস্তে যায়।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ বলেন, তিনটি কোম্পানিই দরপত্রের নিয়ম ভেঙেছে। তাই কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি সব কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। এখন এটা বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বানের চিন্তা করছি। সে ক্ষেত্রে আবার এই তিন কোম্পানির মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করব, নাকি নতুন কোম্পানি আসবে, সে বিষয় নির্দেশ চেয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এবং ইআরডিকে চিঠি দিয়েছি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী চীন পাঠাচ্ছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল
চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কাছে ঋণও চেয়েছে ঢাকা। এ প্রকল্পে বেইজিংয়েরও আগ্রহ আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরেজমিনে তিস্তা প্রকল্প যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে চীনের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল।
আজ সোমবার সকালে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে আলোচনায় এ তথ্য জানান ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঋণের বিষয়ে ইতিবাচক দেশটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পের বিষয়ে চীন যে তীব্র আগ্রহী, তা আসাদ আলম সিয়ামকে জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।
চীনের রাস্ট্রদূত জানান, তিস্তা প্রকল্পের বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে তারা কাজ করছেন।
এ ছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়েও আলোচনা হয়।
# পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে চীন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক # কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে চীনএ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেওয়া বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে (জিজিআই) যোগ দিতে বাংলাদেশকে আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে জিজিআইয়ের বিস্তারিত এবং এ উদ্যোগ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের আগ্রহের কথা জানানো হয়। আর জুলাই গণ–অভুত্থ্যানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ওপর এসেছে, যা সবচেয়ে বেশি বলেও জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন।
গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর তিস্তা প্রকল্প এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে মে মাসে একটি চিঠি দেয়। তাতে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। পরে গত জুলাইয়ে চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠায় ইআরডি। চিঠিতে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের আর্থিক চুক্তি সই করতে চায়। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অতীতে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন ও ভারত। ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়েত্রা তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারও চেয়েছিল, প্রকল্পটিতে যেন ভারত অর্থায়ন করে।
চীন সফর নিয়ে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘চীন তো রেডি, কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ইন্ডিয়া করে দিক, এই প্রজেক্টটা করলে এই প্রজেক্টটার জন্য যা দরকার, ইন্ডিয়া দিতেই থাকবে। ঠিক আছে? যা সাফ সাফ কথা, রাখঢাক নাই।’
তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। বাকিটা করা হবে সরকারি অর্থায়নে। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২৯ সালে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।