জি টু জি (সরকার-সরকার) চুক্তির শর্তের ফাঁদে পড়েছে টেলিটকের ইউনিয়ন পর্যন্ত ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্প। শর্ত অনুযায়ী, সীমিত কোম্পানির মধ্যে দরপত্র আহ্বান করতে হবে। এ জন্য তিন কোম্পানির সংক্ষিপ্ত তালিকা করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পে কারসাজি করতে নির্বাচিত তিন চীনা কোম্পানি যোগসাজশের মাধ্যমে দর প্রস্তাব জমা দিয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করায় তিন কোম্পানিই অযোগ্য বিবেচিত হয়। এতে বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মোবাইল কোম্পানিটি। এই তিন কোম্পানির মধ্যে আবার দরপত্র আহ্বান করবে, নাকি নতুন কোম্পানিকে সুযোগ দেবে– এ নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় টেলিটক। 

তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে চীন ঋণ দিচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৯০০ কোটি টাকা। ইআরডি নির্ধারিত কোম্পানি তিনটি হচ্ছে– চায়না ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিআইটিসিসি), ইউনান কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ (ওয়াইসিআইএইচ) ও চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কোম্পানি (সিএমইসি)।
সূত্র জানায়, দরপত্র চলাকালে এ তিন কোম্পানিকে ডেকে নিয়ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করানো হয়। তারপরও তারা এমনভাবে দরপত্র জমা দিয়েছে, যা দেখে মনে হয়, ওয়াইসিআইএইচ এবং সিআইটিসিসি ইচ্ছা করেই এ দরপত্র থেকে সরে গিয়ে চায়না মেশিনারিজকে কাজ বাগিয়ে নিতে সুযোগ করে দিয়েছে। 
গত সেপ্টেম্বরে যে দরপত্র আহ্বান করা হয়, সেখানে বলা হয়েছে– অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি দরপত্রের নিরাপত্তা অর্থ হিসেবে ৩০ লাখ ইউএস ডলার জমা দিতে হবে। এটাও বলা হয়, শুধু একক পণ্য প্রস্তাব করতে হবে; কোনো বিকল্প পণ্য দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ একটি কোম্পানির পণ্যই থাকতে পারবে; একাধিক কোম্পানির পণ্য উল্লেখের সুযোগ নেই।

চীনের কোম্পানিগুলোর জমা দেওয়া দর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনটি কোম্পানিই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এগুলোর মধ্যে সিআইটিসিসি ও ওয়াইসিআইএইচ নিরাপত্তা অর্থ জমা দেয়নি। পাশাপাশি প্রতিটি পণ্যের আলাদা নাম ও দাম উল্লেখ করার কথা থাকলেও সে শর্ত পূরণ করেনি দুই কোম্পানি। আবার কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব আলাদা না দিয়ে একসঙ্গে জমা দিয়েও নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
অন্যদিকে চায়না মেশিনারিজ একাধিক অখ্যাত কোম্পানির বিকল্প পণ্যের কথা উল্লেখ করেছে। এটাও নিয়মের লঙ্ঘন। কারণ, শর্ত ছিল বিকল্প পণ্যের নাম দেওয়া যাবে না। খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে বিকল্প রাখার মানে হচ্ছে, সুবিধামতো কম দামে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহের সুযোগ রাখা।

টেলিটকের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এ তিন কোম্পানিকেই অযোগ্য ঘোষণা করেছে। প্রকল্পটির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড.

ফোরকান উদ্দিন বলেন, প্রকল্পের সরকারি ক্রয় নীতিমালায় (পিপিআর) যেটা আছে, তাই অনুসরণ করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। 
এর আগে ২০১৩ সালে বিটিসিএলের টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশের কাজের জন্য নির্বাচিত হয় সিএমইসি। তখন দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতির কারণে চীন সরকার প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে। দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এলে বিটিসিএলের প্রায় ১৮ দশমিক ২ কোটি ডলারের প্রকল্প ভেস্তে যায়।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ বলেন, তিনটি কোম্পানিই দরপত্রের নিয়ম ভেঙেছে। তাই কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি সব কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। এখন এটা বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বানের চিন্তা করছি। সে ক্ষেত্রে আবার এই তিন কোম্পানির মধ্যেই  দরপত্র আহ্বান করব, নাকি নতুন কোম্পানি আসবে, সে বিষয় নির্দেশ চেয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এবং ইআরডিকে চিঠি দিয়েছি। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প ব কল প

এছাড়াও পড়ুন:

পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।

ঢাকা/হাসনাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
  • পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন