লাভজনক হওয়ায় সাতক্ষীরায় বাড়ছে কুলের আবাদ
Published: 25th, February 2025 GMT
সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত কুলের ব্যাপক চাহিদা ও সুনাম থাকায় কৃষকরা চলতি বছর বেশি লাভের আশা দেখছে। অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে কুলের আবাদ।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার উৎপাদিত কুল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মন প্রতি পাইকারি বিক্রি করছেন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দরে। চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বাজারে কুল রপ্তানি করার আশা করছেন জেলা কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, সাতক্ষীরার কুল সারা দেশের বিখ্যাত। চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৪৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার কুলের আবাদ করা হয়েছে। এসব কুলের মধ্যে রয়েছে নারিকেল কুল, থাইআপেল কুল, বল সুন্দরী ও কাশ্মীর কুল।
প্রতি বিঘায় উৎপাদন হবে ৭০ থেকে ৮০ মন। কুলের বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ২২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে জানান চাষিরা। আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কুলের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বাজারে কুল রপ্তানি করার আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার সাতটি উপজেলায় কুল চাষ ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে কলারোয়া উপজেলায় ৪৭০ হেক্টর। তালা উপজেলায় ১৬৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১১২ হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, শ্যামনগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ২০ হেক্টর এবং দেবহাটা উপজেলায় ৪ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হচ্ছে।
তালা উপজেলার মিঠাবাড়ি এলাকার কুলচাষি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস ও মো.
এর মধ্যে নাইকেল কুলের দাম সবচেয়ে বেশি, ১৮০-২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘায় ১০০ মণ কুল উৎপাদন হয় এবং খরচ বাদ দিয়ে এক লাখ টাকা লাভ থাকে। এ বছরও একই রকম লাভের আশা করছি। চলতি বছর কুলের ফলনে কম তবে দাম বেশি পাওয়ায় তারা খুশি বলে জানান কুলচাষিরা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ‘‘চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৪৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার কুলের আবাদ করা হয়েছে। এসব কুলের মধ্যে রয়েছে নারিকেল কুল, থাইআপেল কুল, বল সুন্দরী ও কাশ্মীর কুল। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হবে ৭০ থেকে ৮০ মন। কুলের বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কুলের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বাজারে কুল রপ্তানি করার আশা করছে কৃষি বিভাগ।’’
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কুলচাষিদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলার কুল চাষিরা দেড়শ কোটি টাকার বেশি বাজার মূল্য পাবেন।’’
ঢাকা/শাহীন/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল য় উৎপ দ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গলার কাঁটা পানি শোধনাগার
বিয়ানীবাজার পৌরসভার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে সেখানে স্থাপিত পানি শোধনাগার প্লান্টটি। দুই বছর ধরে পুষতে থাকা এই প্রকল্পকে কীভাবে লাভজনক প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই পানি শোধনাগার প্লান্ট উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনের পর এই প্রকল্প থেকে গত ২৬ মাসে এক টাকাও আয় করতে পারেনি পৌরসভা। উল্টো এই সময়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে এর পেছনে। পৌর সূত্র মতে, ২৬ মাসে এ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে স্থাপিত পানি শোধনাগারটির পানির প্রতি পৌরবাসীর কোনো আগ্রহই নেই। এখানে প্রাকৃতিকভাবে পানি সহজে আহরণ করা যায় বলে কৃত্রিম উৎসে পরিশোধিত পানির চাহিদা একেবারে নেই বললে চলে। যার কারণে শোধনাগারটি কোনো কাজেই আসছে না। উদ্বোধনের পর থেকে অকার্যকার হয়ে আছে এটি।
স্থানীয় পৌরবাসীর ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির উৎস থাকায় শোধনাগারের পানির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। যারা এসব প্রকল্পের কাজ করেন, তারা নিশ্চয় প্রতিটি স্থানের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন। যেখানে স্বাভবাবিক উৎস থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে সহজে, সেখানে এমন একটি প্রকল্প যে অপরিকল্পিতভাবে করা– তা বোঝাই যায়।
এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের বোঝায় পরিণত হওয়া এই প্রকল্পটিকে ঘিরে সৃষ্ট সমস্যা উত্তরণে এবং এটিকে আর্থিকভাবে লাভজনক প্রকল্পে পরিণত করার উপায় খুঁজছে পৌরসভা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে পানি সরবরাহের পাইপলাইন সম্প্রসারণ করা বা পানি শোধনাগারটি লিজ দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শোধনাগারটিতে উৎপাদিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে পৌরসভার আংশিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল ২২ কিলোমিটার পাইপলাইন। এ পাইপলাইন থেকে পৌর শহর, শহরতলি ও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা কোনো সংযোগ নেননি। বাণিজ্যিক সংযোগ না থাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পুরো প্রক্রিয়াটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যার কারণে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাড়তি ব্যয়ের চাপ নিতে হচ্ছে পৌরসভাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই টানাটানি তার ওপর বাড়তি ব্যয়।
সিলেট বিভাগের ১৯টি পৌরসভার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র আব্দুস শুকুরের সময়ে।
২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর এ প্লান্ট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সে সময় এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পৌর পরিষদের মাসিক আলোচনায় কয়েকজন কাউন্সিলর আপত্তি তুলেছিলেন। সে সময় তাদের আপত্তি আমলেই নেননি তৎক্ষালীন মেয়র আব্দুস শুকুর।
২০২৩ সালে শোধনাগারটিকে কার্যকর করতে পৌরসভার ২০০ পরিবারকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র ফারুকুল হক। তবে পৌরসভার সে উদ্যোগেও আগ্রহ দেখায়নি পৌরবাসী। যার কারণে উন্নয়নের নামে সরকারের ৯ কোটি টাকা গচ্চার পাশাপাশি পৌরসভা প্রতি মাসে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকা পানি শোধনাগারটি বন্ধের সুযোগ নেই জানিয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, এটি স্থাপন করার আগে এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সেটি সেভাবে সার্ভে করা হয়নি, যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং পৌরসভা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই পানি শোধনাগারটিকে লাভজনক খাতে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে কাজ করা হচ্ছে। দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। পুরো পৌরসভাকে পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসতে হলে অবশিষ্ট অংশে পাইপলাইন স্থাপন করতে ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা।
এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরো পৌরসভায় পানির সরবরাহ লাইন স্থাপন করা গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব।