মির্জাপুরে টেক্সটাইল কারখানার শিল্পবর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পাকুল্যা খাল ও লৌহজং নদী। রাসায়নিকের দুর্গন্ধে বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ। মরে যাচ্ছে মাছ। রাসায়নিক মিশ্রিত পানি পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের কদিমধল্যা-সংলগ্ন বানিয়ারা মৌজায় সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কারখানার দূষিত বর্জ্য খালে ফেলতে দুই বছর আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে কংক্রিটের পাইপ স্থাপন করা হয়। ওই পাইপ দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে পাকুল্যা খালে নিয়মিত কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। খালের পানি প্রবাহিত হচ্ছে লৌহজং নদীতে। ফলে ক্রমেই দূষণে পাকুল্যা খাল ও লৌহজং নদীর পানি অসহনীয় দুর্গন্ধযুক্ত ও কালো কুচকুচে হয়ে পড়েছে। এতে খাল ও নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। নদী ও খালের পানি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন বিপাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা নদী ও খাল থেকে মাছ ধরলেও সেই মাছ রান্নার পর দুর্গন্ধে খাওয়া যাচ্ছে না।
পাকুল্যা খাল ও লৌহজং নদী এ উপজেলার জামুর্কী, ভাতগ্রাম ও বানাইল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষের গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস। এই খাল ও নদীতে স্থানীয় বাসিন্দারা মাছ ধরা ছাড়াও
গোসল, গৃহস্থালির কাজ, আবাদি জমিতে সেচ ও গরু-মহিষ গোসল করানোর জন্য ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রতি খাল ও নদীর পানি কালো কুচকুচে হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জন্ম নিচ্ছে পোকা। এ কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে খাল ও নদীর পানি।
পাকুল্যা গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া বলেন, তাদের চাটাই তৈরির কাজের জন্য আনা বাঁশ পাকুল্যা খালে ভিজিয়ে রেখে কাজ করেন। গত দুই বছর ধরে সাদিয়া কারখানার দূষিত পানি খালে ফেলায় পানি দুর্গন্ধ ও কালো কুচকুচে হয়ে গেছে। পানিতে নামলে শরীর চুলকায় ও ঘা হয়।
শ্রমিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পানি কালো হয়ে গেছে। নদীর মাছ প্রায়ই মরে ভেসে ওঠে। দুর্গন্ধে থাকা যায় না। এই খালের পানি লৌহজং নদীতে পড়ছে। লৌহজং নদীর মাছও মরে ভেসে ওঠে। বিষাক্ত পানি নদীতে আসায় এখন তারা গোসল করতে পারেন না, জমিতে সেচ দিতে পারেন না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের (বিএমবিএফ) পর্যবেক্ষণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আকিব আকবর খান চৌধুরী বলেন, সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের শিল্পবর্জ্যের দূষণ চরম আকার ধারণ করেছে। যা ফসলের ক্ষতি, নিরাপদ পানির অভাবসহ পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
জামুর্কী ইউপি চেয়ারম্যান ডি এ মতিনের ভাষ্য, এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাকুল্যা খালের সাটিয়াচড়া এলাকায় দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানি দেখেছেন। পরে কয়েকটি গ্রামের কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে সাদিয়া কারখানায় গিয়ে মালিকের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু এখনও সমস্যা রয়ে গেছে।
খালে দূষিত বর্জ্য মিশ্রিত পানি ফেলার খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার ওই এলাকা পরিদর্শন করে টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল অফিসের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক, পরিদর্শক বিপ্লব কুমার সুত্রধর প্রমুখ। এলাকা পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তর দূষিত বর্জ্য মিশ্রিত পানি সংগ্রহ করে। এই পানি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
সাদিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহমানের দাবি, তাদের কারখানায় বায়োলজিক্যাল ইটিপি রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা আমাদের ইটিপি চলে এবং সরকার নির্ধারিত রেঞ্জের মধ্যেই আছে। বায়োলজিক্যাল ইটিটি করলে পানির মূল রং থাকে না। এটা কোনো ক্ষতির কারণ নয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল অফিসের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, সাদিয়া টেক্সটাইল মিলের দূষিত বর্জ্য মিশ্রিত পানি খালে ফেলার খবর পেয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র দ ষ ত বর জ য র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে কলেজছাত্র নিহত
নরসিংদীর রায়পুরায় তিতাস কমিউটার ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মো. রওনক (১৭) নামের এক কলেজশিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রায়পুরার পলাশতলী ইউনিয়নের আশারামপুর এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।
নিহত মো. রওনক রায়পুরা সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সে উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামের মইনুল হোসেনের ছেলে।
রেলওয়ে পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত ব্যক্তির স্বজন সূত্র জানায়, মুঠোফোনের ব্যাটারি মেরামত করতে গতকাল দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নরসিংদী শহরের উদ্দেশে রওনা হয় রওনক। বেলা সাড়ে তিনটায় মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকাগামী তিতাস কমিউটারের ছাদে চেপে বসে। যাত্রাবিরতি শেষে ট্রেনটি আবার যাত্রা শুরুর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যায় রওনক। রেললাইনের পাথরে আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে তাঁর লাশ রেললাইন থেকে সরিয়ে আনে ও ঘটনাটি নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে জানান। খবর পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন। এরই মধ্যে তাঁর স্বজনেরা ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করেন।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।