একটা রোদের ফালি হয়তো আলগোছে ঢুকে পড়ছে জানালা ডিঙিয়ে। একটা কোনো কয়েন অহেতুকই বাঁই বাঁই করে ঘুরছে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে। আর এক ফালি রোদকে ঠিকরে ছড়িয়ে দিচ্ছে আনাচ–কানাচ। কিংবা একটা কোনো হাঁপরের গল্পই হতে পারে এটা, যে দম ছাড়লেই গনগনে লালের দেখা মেলে অন্ধ কয়লার চোখে।

মানুষও তো এমনই। এমনই তার স্বভাব। কেউ আলোর ফেরিওয়ালা হয়, কেউ–বা আগুনের। অথবা সবাই সবটা। শুধু ক্ষণের অপেক্ষা। সেখানে দেশ ও দ্বেষ কখনো কখনো মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়—‘অথচ দমচাপা রোদে থইথই আলোর বদলে ঢুকে গেল দিশাহীন দ্বেষের সুর।’ প্রশ্ন জাগে—রোদও তবে দমচাপা হতে পারে! অভিজ্ঞতা বলে হয়। এমনকি বৃষ্টিও হতে পারে। এমনকি শীতও। সুজন সুপান্থ কবিতা লেখেন। গদ্য ধাঁচ হোক, কিংবা কবিতার ছোট ছোট পঙ্ক্তিবিন্যাশ, তিনি কবিতাই উপহার দেন আমাদের।

বইটির নামে চোখ আটকে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হয়। ‘এইরূপে প্রেম ফোটে’। কত বিচিত্র ভাবনা আসে। ফুলের মতোই তো হবে নাকি? যদিও মাথায় জমাট দৃশ্য এবং প্রচল ভাষ্যগুলো বলে যায়—ফোটার ধর্ম তো বোমারও আছে। কী জানি! প্রমিত–অপ্রমিত মিলে–মিশে একাকার হয়ে যায় এই এক নামের সীথানে দাঁড়িয়ে।

মিছিলেও প্রেমের দেখা তো মেলে। এই কিছুদিন আগের ওলট পালট করা অতিদীর্ঘ দিবসগুলো জানিয়ে গিয়েছিল—প্রেমের বিনাশী বিন্যাস। অথচ, মানুষ আত্মমগ্ন। আর রাষ্ট্র শেষতক সেই ব্যক্তির একার ধ্যানের দরজায় কড়া নেড়ে যায়, করে তাণ্ডবনৃত্যও। অথচ মানুষ ধ্যানও ভাঙে।

সুজন সুপান্থ মানুষের একেবারে ভিতর উঠোনের পা রাখতে ভালোবাসেন। একটা হাহাকার জমাট হয়ে থাকে তার শব্দের ভাঁজে ভাঁজে। গৃহবাসী মানুষের বুকে চেপে থাকা পাথর, তার মনের গহীনে উড়বার অপেক্ষায় থাকা পাখিটি কিংবা তার প্রায় ঝরে যাওয়া পালকটি তার কবিতার উপকরণ। ঘরে ঘুরে তিনি ঢুকে পড়েন সেই শৈশব ও তার আলপথ ধরে ম্যাজিশিয়ানের তাঁবুতে। সেখানে থাকে ক্ষুধা নিবারণী অনুপান। সেখানে চাওয়া ও পাওয়ার মাঝখানে মৃদু কিন্তু অবাক চোখের সেতুবন্ধ আমাদের নজরে আসে। আমরা তার সাথে সাথে সেই সব ভেতর বাড়িতে ঘুরে আসি।

নিখোঁজ মানুষের, রাষ্ট্রীয় মারণাস্ত্রে শুধু সংখ্যা বনে যাওয়া মানুষের খাতা থেকে তিনি টুকে রাখেন দিনলিপির মতো এক একটা চরিত্র। এক একটা দৃশ্য। যেন এই মানুষেরা মানুষ নয় আর। সুজন সুপান্থ লিখছেন—‘তবু এইসব মানুষের মুখ হারিয়ে যাওয়া দেশের মাতৃধারার গল্প শোনায়।’
 
আমরা সেই মাতৃধারার গল্পের পূর্ণ বৃত্তটি সম্পন্নের আকাঙ্ক্ষায় বসে থাকি। না, সে আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয় না। থমকে যায়। এ এক অনিঃশেষ উপক্রমণিকা যেন। অনেকটা হেঁয়ালির মতো। কবি সেই হেঁয়ালির কোনো সামাধান দিতে রাজি নন। ফলে আমাদের অপেক্ষা ফুরোয় না। যেমনটা এই দেশে, এই জনপদে। একটা নিপাট, ঝঞ্ঝাটহীন, ক্ষুধা ও পীড়নহীন যাপনের হদিস কখনো মেলে না। আশা জাগে। মিলিয়ে যায় আবার। ফের মানুষ আশার খোঁজে নামে। এ যেন এক পৌনপুনিক বাস্তবতার ঘানি। বিজয় আসে, কিন্তু মুক্তি? বিজয়ের সাথে সাথে আসে বিজয়ের ব্যাপারীরাও। সুজন সুপান্থ এই অপ্রতিহত বাস্তবতার কথাই বলে যান।

অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত সুজন সুপান্থ’র কবিতার বই ‘এইরূপে প্রেম ফোটে’ প্রকাশ করেছে স্বপ্ন’৭১ প্রকাশন। 

বইমেলায় স্বপ্ন’৭১–এর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। বইমেলায় স্টল নম্বর ৭৫৩।

লেখক: নেলসন

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল স জন স প ন থ

এছাড়াও পড়ুন:

ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান

ভুলক্রমে সীমানায় ঢুকে পড়ায় পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে আটক হয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য পুর্নমকুমার সাউ। ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে তিনবার পতাকা বৈঠকে বসলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি বিএসএফের অনুরোধেও কর্ণপাত করছে না পাকিস্তান। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা থেকে পঠানকোট বিএসএফ দপ্তরে স্বামীর সর্বশেষ খবর জানিত ছুটে গেছেন পুর্নমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও পরিবার। 

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পেহেলগাও সন্ত্রাসবাদী হামলা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার ভুল করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে আটক হন বিএসএফ সদস্য পুর্নমকুমার সাউ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রিষড়া পৌরসভার ১৩ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। পুর্নম পাঠানকোটের ফিরোজপুর বর্ডারে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি চব্বিশ ব্যাটেলিয়ানের বিএসএফ কনস্টেবল। 

বিএসএফ সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব পালনকালে কড়া রোদে ক্লান্ত হয়ে পড়লে গাছের নিচে আশ্রয় নেন পুর্নম। এ সময় তিনি ভুল করে বর্ডার পেরিয়ে গেলে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে আটক হন। এ দিকে ঘটনার পর তিনবার পাকিস্তানি রেঞ্জারদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছে বিএসএফ। কিন্তু তারা পুর্নমকুমার সাউকে ফিরিয়ে দেয়নি। 

স্বামীর এমন দুঃসংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী। শেষবার হোলির সময় ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন পুর্নম। গত ৩১ মার্চ কাজে যোগ দেন তিনি।  

পুর্নমের বাবা ভোলানাথ সাউ জানান, ছেলেকে নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। কোনো খবর পাচ্ছেন না। বিএসএফ কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে ছেলেকে মুক্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন। 

সীমান্তরক্ষীদের ভুল করে নিয়ন্ত্রণরেখা পার হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে দুই বাহিনীর বৈঠকের পরে তাদের মুক্তিও দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি ভিন্ন। পাক রেঞ্জার্সের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। গত শুক্রবার পর্যন্ত এই ইস্যুতে তিনবার পতাকা বৈঠকে বসেছেন বিএসএফ এবং পাক রেঞ্জার্সের প্রতিনিধি দল। কিন্তু মিমাংসা হয়নি।   

এরপরই রবিবার পুর্নমের বাড়ি যান বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা পুর্নমকে মুক্ত করে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। যদিও মৌখিক কথায় আর ভরসা রাখতে রাজি নন রজনী। এ কারণে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আজ সোমবার পাঠানকোটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখানে তথ্য না পেলে দিল্লি গিয়ে স্বামীর খবর জানতে চাইবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

বিএসএফের পরিচালক জেনারেল দলজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন ঘটনার পরে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুর্নমকুমার সাউকে ফিরিয়ে আনতে সব রকমের চেষ্টা চলছে। এমনকি পাকিস্তানি রেঞ্জারদের সঙ্গে কমান্ডার স্তরে বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

সুচরিতা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘একদিন দেখি পশুরমতো ঘরের কোণে বসে কাঁপছে ববি’
  • বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
  • প্রত্যন্ত গ্রামে ক্লিনিক খুলে ‘এমবিবিএস ডাক্তার’ পরিচয়ে চিকিৎসা, এক বছরের কারাদণ্ড
  • ‘শি জিনপিং ফোন করেছিলেন’ ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
  • শি জিনপিং ফোন করেছিলেন, ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
  • ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান