বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দায়ের পিটিশন খারিজ
Published: 27th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ পিটিশনের শুনানি ভারতের আদালতে করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট এমন নির্দেশনা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চের পরামর্শে পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটা প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, ফলে তা কোনোভাবেই ভারতের শীর্ষ আদালতের বিচার্য হতে পারে না।
প্রধান বিচারপতি খান্না বলেন, ‘এটি কোনোভাবেই আমাদের বিষয় নয়। আপনাদের কি মনে হয়, সরকার এই বিষয়ে অবহিত নয়? এই বিষয়ে এই আদালত কী করতে পারেন?’
পিটিশনটি করেছিলেন ভারতে ইসকন মন্দির স্টিয়ারিং কমিটির উপসভাপতি এবং পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় ‘ভগবান জগন্নাথ রথযাত্রা কমিটি’র প্রধান রাজেশ ঢানডা। পিটিশনের আবেদনকারীদের পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন ভারতের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি।
পিটিশনে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, বাংলাদেশে হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতন ও হামলার শিকার হচ্ছেন। পিটিশনে আবেদন জানানো হয়, ভারত সরকার যেন বাংলাদেশে তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয় এবং বাংলাদেশ সরকারকে সেটা করার জন্য চাপ দেয়। এই মর্মে আদালতের নির্দেশ চেয়েছিলেন আবেদনকারী। বিষয়টি নিয়ে আদালতে কোনো রকম প্রক্রিয়া চালানোর সম্ভাবনাই নেই বলে জানিয়ে দেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না আরও বলেন, ‘এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়.
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের মনোভাব জানার পর আবেদনকারীর আইনজীবী পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নেন। তবে তিনি জানান, তাঁর মক্কেল বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের দ্বারস্থ হতে পারেন।
পিটিশনে নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এর অধীনে ‘কাট-অফ ডেট’ বাড়ানোরও দাবি করা হয়েছে, যাতে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে হিন্দু সংখ্যালঘুদের সাহায্য ও সহায়তা দিতে বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়ার আরজিও জানানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আরজি হয়ে যাওয়ার কারণে আপাতত ভারতের আদালতে এ নিয়ে আর কোনো মামলা করা যাবে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।