মানুষের দাবিদাওয়া সহনশীলতার সঙ্গে বিবেচনার আহ্বান সিপিবির
Published: 27th, February 2025 GMT
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত সভা-সমাবেশে উঠে আসা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবিদাওয়া সরকারকে সহনশীলতার সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এসব দাবিদাওয়া পূরণে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে পথ খুঁজে বের করার আহ্বানও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। বিবৃতিতে নেতারা বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিক শাসনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁদের নিজস্ব দাবিদাওয়া যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেননি। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে বৈষম্য পাহাড়সমান। গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্য মুক্তির। তাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার বঞ্চিত মানুষ তাঁদের দাবিদাওয়া তুলে ধরবেন, এটাই স্বাভাবিক। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে ঢাকার প্রেসক্লাব ও শাহবাগ এলাকায় প্রতিদিনই অসংখ্য সংগঠন তাদের দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার অনেক বিষয়ে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করলেও বৈষম্য মুক্তির জন্য সুনির্দিষ্ট করণীয় নিয়ে আলোচনা করছে না। নানা বিষয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে আলোচনাও শোনা যাচ্ছে না।
বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, ‘আমরা ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি, অনেক সময় বল প্রয়োগ করে অনেক ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের আহত করা হচ্ছে। এই অবস্থা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়।’
সহনশীলতার সঙ্গে এ আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো বিবেচনা করা ও ন্যায্যতা নিরূপণ এবং পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো পূরণের পথে অগ্রসর হতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিপিবি নেতারা।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলো, আউটসোর্সিংসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ন্যায্য দাবির প্রতি সংহতি জানান বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন: তারেক রহমান
‘সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন’-এমন দলীয় ভাবনার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান-আপনারা একটু সতর্ক থাকবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ উসকে দিতে চায়। গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এই ধরনের বিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে।”
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। লন্ডন থেকে সমাবেশে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পথনকশা, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।”
আরো পড়ুন:
বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই: গয়েশ্বর
লড়াইয়ের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হবে: নজরুল ইসলাম
তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।”
পলাতক স্বৈরাচার যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়, এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য অপরিহার্য মনে করে… জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে; তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।”
“এই কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মনে বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত সুপ্ত ভাবনা মনের আকাঙ্ক্ষা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে, সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।”
“গণবিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয়, তা অবৈধ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয় এবং বিকল্প হতে পারে না”, বলেও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং শ্রমিক দলের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় এই সমাবেশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা মামুন, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, আবুল খায়ের খাজা, মোস্তাফিজুল করীম, সুমন ভুঁইয়া, প্রয়াত শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ