যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা দেশগুলোর ওপর এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। যদিও এখনো নতুন করে আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫৫ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে। এই রপ্তানির ওপর থেকে মোট ১১ কোটি ৫৯ লাখ ডলার শুল্ক আদায় করেছে দেশটি। গড়ে শুল্ক আদায় হয়েছে ২১ শতাংশ হারে। অথচ ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পোশাকপণ্য থেকে গড়ে ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ শুল্ক আদায় করেছিল দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আদায়সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ১০ ডলারের একটি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নেওয়ার জন্য গড়ে ১ দশমিক ৬৭ ডলার শুল্ক দিতে হতো। চলতি বছরের একই সময়ে একই মূল্যের পণ্যে শুল্ক দিতে হয়েছে ২ দশমিক ১১ ডলার। আগামী ১ আগস্ট থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে তা আরও বাড়বে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও পণ্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন হারে শুল্ক রয়েছে। তবে মোট শুল্ক–কর আদায়ের ভিত্তি ধরে গড়ে কত শুল্ক আদায় হয়, তা নির্ধারণ করা যায়। এই হার সব সময় একই থাকে না। তবে শুল্ক–কর পরিবর্তন না হলে খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা দেশগুলোর ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। পরে ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে ২ এপ্রিল থেকে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক বহাল রাখা হয়।
নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপ হলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাবে। কারণ, অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক-কর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক নেওয়ার কথা নয়। এস এম আবু তৈয়ব, সভাপতি, আইবিএফবিতিন মাসের স্থগিতাদেশ শেষে ৯ জুলাই থেকে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কথা ছিল। তবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পাল্টা শুল্ক বাড়িয়ে-কমিয়ে নতুন করে নির্ধারণ করেন ট্রাম্প। এই নতুন শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। বাংলাদেশের জন্য নতুন পাল্টা শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন ট্রাম্প।
কোন দেশে গড়ে কত শুল্ক আদায়যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে চীনের পোশাকপণ্য থেকে সবচেয়ে বেশি শুল্ক–কর আদায় করেছে দেশটি। মে মাসে চীন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই পোশাকের ওপর যুক্তরাষ্ট্র মোট শুল্ক–কর আদায় করেছে ৩৮ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চীনের পণ্য থেকে গড়ে ৭০ শতাংশ শুল্ক–কর আদায় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে চীনের পোশাক থেকে গড়ে ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ শুল্ক–কর আদায় করেছিল দেশটি।
চলতি বছরের মে মাসে ভিয়েতনাম ১২২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির রপ্তানি করা পণ্য থেকে মোট শুল্ক আদায় হয়েছে ৩১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। সেই হিসাবে শুল্ক–কর আদায়ের গড় হার প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের একই সময়ে এই হার ছিল ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এ ছাড়া গত মে মাসে ভারত ৪৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির পণ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র মোট শুল্ক–কর আদায় করেছে ৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। এ হিসাবে শুল্ক–কর আদায় হয়েছে গড়ে ২০ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের একই সময়ে ভারতের পোশাকের ওপর থেকে গড়ে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ শুল্ক–কর আদায় হয়েছিল।
শুল্ক বাড়ার পরই রপ্তানিতে হোঁচটচলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি শুল্ক–কর আদায় হয়েছে চীনের পণ্য থেকে। এ সময় চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যের ওপর ৭০ শতাংশ হারে শুল্ক–কর আদায় হয়েছে। উচ্চ শুল্কের কারণে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি অর্ধেকের বেশি কমেছে। যেমন গত বছরের মে মাসে চীন রপ্তানি করেছিল ১১৬ কোটি ডলারের পণ্য, চলতি বছরের মে মাসে তা কমে ৫৬ কোটি ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশেরও রপ্তানি কমেছে। চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালে একই সময়ে রপ্তানি করেছিল ৫৭ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৪ শতাংশ।
শুল্ক–কর বৃদ্ধির পরও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। ২০২৪ সালের মে মাসে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ১০৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। চলতি বছরের মে মাসে তা ১২৩ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। ভিয়েতনামের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশ।
এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপ হলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাবে। কারণ, অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক–কর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক নেওয়ার কথা নয়। এ জন্য দর-কষাকষির মাধ্যমে আমাদের শুল্ক–কর প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ২০২৪ স ল র শ শ ল ক কর শ ল ক আর প একই সময় ক র যকর বছর র ম কর ছ ল ত ন কর দশম ক র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বছরে উধাও ১৬ হাজার কোটি, আইপিএলের বাজারমূল্য কমছে কেন
বিশ্বের সবচেয়ে সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ আইপিএল এখন এক অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক ধাক্কার মুখে। টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কমেছে আইপিএলের ব্র্যান্ডমূল্য।
২০২৩ সালে লিগটির মূল্য ধরা হয়েছিল ৯২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি, যা ২০২৪ সালে নেমে আসে ৮২ হাজার ৭০০ কোটিতে। ২০২৫ সালে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ১০০ কোটি রুপিতে। অর্থাৎ দুই বছরে উধাও হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠের ক্রিকেট ঘিরে দর্শক আগ্রহ বাড়লেও দুটি প্রধান কারণে আইপিএলের ব্র্যান্ডমূল্য কমেছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডি অ্যান্ড পি অ্যাডভাইজরির ‘বিয়ন্ড ২২ ইয়ার্ডস—দ্য পাওয়ার অব প্ল্যাটফর্মস, দ্য প্রাইস অব রেগুলেশন: আইপিএল অ্যান্ড ডব্লিউপিএল ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট ২০২৫’–এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কোনো ব্র্যান্ড বা ব্যবসার বাজারে সম্ভাব্য মূল্য, আয়, জনপ্রিয়তা ও ভবিষ্যৎ আয়ের ধারণার ওপর ভিত্তি করে ভ্যালুয়েশন বা আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ডি অ্যান্ড পি অ্যাডভাইজরির প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ ব্র্যান্ডমূল্য কমেছিল আইপিএলের। এবার কমেছে ৮ শতাংশ।
২০০৮ সালে শুরু হওয়ার পর প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় আকারে বড় হয়েছে আইপিএল। এখন লিগটিতে খেলে থাকে ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি। একজন খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক দুই মাসের একটি আসরের জন্য ২৭ কোটি রুপি পর্যন্ত উঠেছে (২০২৫ আসরে ঋষভ পন্তের)। কিন্তু লিগের সার্বিক ব্র্যান্ডমূল্য কমার তথ্য দিচ্ছে উল্টো চিত্র।
আইপিএল নিয়ে দর্শক উন্মাদনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে