চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি তেমন চলছে না, আয়ও কম
Published: 28th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রত্যাশা অনুযায়ী গাড়ি চলছে না। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২৫ সালে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন ৬৬ হাজারের বেশি গড়ে চলবে। বাস্তবে চলছে ৭ হাজারের কম।
এই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বছরে শতকোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখলেও তা পূরণ হচ্ছে না। মাসে আট থেকে সাড়ে আট কোটি টাকা আয় করার কথা, কিন্তু চালুর পর প্রথম মাসে টোল আদায় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গত ৩ জানুয়ারি এক্সপ্রেসওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
শুরুতে খরচ কম দেখিয়ে তথ্য লুকিয়ে অর্থাৎ গোঁজামিলের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এসবের ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। উন্নত বিশ্বে একটি প্রকল্প নেওয়ার আগে দশবার চিন্তা করে।সামছুল হক, অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়এ অবস্থায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির দশা কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের মতো হচ্ছে কি না, সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেলেও যতসংখ্যক গাড়ি চলাচল এবং আয়ের হিসাব দেখানো হয়েছিল, বাস্তবে তার কিছুই নেই। টানেল দিয়ে প্রতিদিন গাড়ি চলার কথা ১৮ হাজার ৪৮৪টি। চলছে ৪ হাজারের মতো। টানেল রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। আয় হচ্ছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুমানের ভিত্তিতে তড়িঘড়ি করে যেনতেনভাবে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বানিয়ে প্রকল্প অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ভুল পরিকল্পনা, দফায় দফায় নকশা ও গন্তব্য পরিবর্তন, এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত র্যাম্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারার কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী গাড়ি চলাচল করছে না। এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে সরকার থেকে নেওয়া ঋণ যথাসময়ে পরিশোধের বিষয়ে জটিলতা তৈরি হবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্ণফুলী টানেলের মতো হবে না। এটি এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। র্যাম্পসহ পুরোপুরি চালু হলে তখন গাড়ির পরিমাণ আরও বাড়বে। সিডিএর আয়ও বাড়বে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে প্রথম প্রকল্প। নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘শহীদ ওয়াসিম আকরাম’ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
গাড়ি চলছে অনেক কম
প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে করা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ২০২৫ সালে প্রতিদিন গড়ে ৬৬ হাজার ৩২৩টি গাড়ি চলাচল করবে। সবচেয়ে বেশি ৩৯ হাজার কার ও তিন চাকার অটোরিকশা চলার কথা। টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সিডিএর তথ্য অনুযায়ী, প্রথম মাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে ২ লাখ ৫ হাজার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে চলছে ৬ হাজার ৮৩৩টি। এসব গাড়ি থেকে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। দিনে আয় হচ্ছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টাইগারপাস অংশে সরেজমিনে দেখা যায়, নিচের সড়কে গাড়ির দীর্ঘ জট। সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে বাস, কার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। আর এক্সপ্রেসওয়ের চিত্র বিপরীত। প্রায় ফাঁকা। মাঝেমধ্যে দু-তিনটি করে কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা যায়। কোনো বাস চলতে দেখা যায়নি।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহনবিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়েকে কার্যকর করতে হলে যে র্যাম্প লালখান বাজারে নামানো হয়েছে, সেটিকে শুধু ওঠার র্যাম্প হিসেবে (বর্তমানে এটি দিয়ে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজারমুখী গাড়ি নামতে পারে) এবং আমবাগানমুখী যে র্যাম্প নামানো হয়েছে, তা দিয়ে লালখান বাজারমুখী গাড়িও নামানো যায়। কিন্তু তা না করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় র্যাম্প নামাচ্ছে ও ওঠাচ্ছে।
গোঁজামিলের মাধ্যমে ডিপিপি
সিডিএর এই প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মূল ডিপিপিতে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রথমে নগরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শাহ আমানত বিমানবন্দরে না গিয়ে পতেঙ্গায় শেষ হয়। এ ছাড়া নগরের লালখান বাজার প্রান্তে নামার সুযোগ থাকলেও ওঠার সুযোগ রাখা হয়নি। এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হচ্ছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কের বেবি সুপার মার্কেট ও মুরাদপুরের শুলকবহর প্রান্ত ব্যবহার করে। এতে নগরের অন্য এলাকার বাসিন্দারা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন না।
এদিকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার উপযোগী করতে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা যাতে ব্যবহারের সুযোগ পান, সে জন্য ২৪টি র্যাম্প নির্মাণ করার কথা ছিল। তবে প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধন করে ৯টি র্যাম্প বাদ দেওয়া হয়। সরকার পরিবর্তনের পর আরও ছয়টি র্যাম্প নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। বাকি নয়টির মধ্যে একমাত্র টাইগারপাসে আমবাগানমুখী র্যাম্পটির কাজ শেষ হলেও এখনো চালু হয়নি। বাকিগুলোর কাজ চলছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক সম্ভাব্যতা সমীক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, শুরুতে খরচ কম দেখিয়ে তথ্য লুকিয়ে অর্থাৎ গোঁজামিলের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এসবের ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। উন্নত বিশ্বে একটি প্রকল্প নেওয়ার আগে দশবার চিন্তা করে। এখানে কোনো জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই বলে বারবার এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প অন ম দ স ড এর হয় ছ ল প রথম নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ