জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে বিএনপিকে প্রস্তুত করা হবে। এ জন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি কথা ও কাজে মানুষের ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের নীতি-আদর্শ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে অবহেলা সহ্য করা হবে না। দুর্নীতি-অনাচারসহ গণবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে সবাইকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড।

বিএনপির বর্ধিত সভায় গৃহীত ১০ দফা প্রস্তাবনা ও সিদ্ধান্তের আলোকে গতকাল শুক্রবার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার কথা জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের এলডি হল-সংলগ্ন মাঠে সকাল থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বর্ধিত সভা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ঘোষিত– ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ আদর্শ ধারণ করে বর্ধিত সভা সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীর যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে বিজয়ের পথে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালে খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এবং ২০২৩ সালে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার আলোকে রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে ফ্যাসিবাদবিরোধী দল ও সংগঠন কাজ করবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং যেগুলো আইন কিংবা সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন তা নির্বাচিত সংসদে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করছে সভা।

সবার আগে সংসদ নির্বাচন
বর্ধিত সভা মনে করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। মৌলিক এ অধিকার থেকে জনগণকে প্রায় দেড় যুগ বঞ্চিত রাখা হয়। এ বঞ্চনার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না। সভা থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।
সভায় নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে সরকারের কাছে কার্যকর ব্যবস্থার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব দল ও শ্রেণি-পেশার সংগঠনকে আস্থায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে পতিত সরকারের সৃষ্ট এবং সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পাশাপাশি অযৌক্তিক কারণে আন্দোলনের নামে জনজীবন বিপর্যস্ত করার অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানানো হয়।

বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার অঙ্গীকার
বর্ধিত সভায় বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে আরও ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী, কার্যকর ও জনপ্রিয় করার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিস্থাপন ও শক্তিশালী করে বিজয়ী হওয়ার লড়াইয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কৌশলী, সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করা হয় সভায়। একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীকে সহায়তার মাধ্যমে তারেক রহমান যে মানবিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার প্রশংসা করা হয়।
বর্ধিত সভায় দীর্ঘ ১৬ বছরের আন্দোলন, তার ধারাবাহিকতায় চব্বিশের অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং আহত, পঙ্গু, দৃষ্টিহীন ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রকৃত শহীদদের তালিকা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, শহীদদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানায় বর্ধিত সভা।

হাসিনার পলায়নে সরকারের ব্যাখ্যা দাবি
সহযোগীসহ শেখ হাসিনার নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া এবং অসংখ্য অপরাধীর অবাধে বিচরণের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএনপির বর্ধিত সভা। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, বিদেশে অবস্থান করে যারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও শান্তি-শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাদের দেশীয় সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কূটনৈতিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকারের উদ্যোগী হওয়া দরকার বলে মনে করে বিএনপি। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এক-এগারোর সরকারের সময়ে করা মিথ্যা এবং গায়েবি মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় সভায়।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ সরক র র সহয গ ব যবস ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আসামিকে বাদ দিতে হলফনামা, বাদী কৃষক দল নেতাকে শোকজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় জুলাই আন্দোলনে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় পাঁচ আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে দুটি হলফনামা দিয়েছেন বাদী কৃষক দল নেতা শাহ আলম পাঠান। টাকার বিনিময়ে তিনি হলফনামা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে জেলা কৃষক দল।

শাহ আলম পাঠান নাসিরনগর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব। ৪ জুন পাঁচজনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেন শাহ আলম। সম্প্রতি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা তৈরি হয়।

যে পাঁচজনকে বাদ দিতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন উপজেলার নূরপুর গ্রামের মো. মাসুদ, গোকর্ণ গ্রামের শেখ মো. জোবায়ের হাসান, বেনিপাড়ার মামুন মিয়া, টেকানগরের জসিম উদ্দিন কায়কোবাদ ও নূরপুর গ্রামের শামসুল আরেফিন মিঞা। তাঁরা যথাক্রমে মামলার ৯৭, ৭৯, ৯১, ১০৫ ও ৮৭ নম্বর আসামি। তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও কোনো পদ–পদবি ছিল না।

হলফনামা দেওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর গত শুক্রবার রাতে জেলা কৃষক দলের দপ্তরে দায়িত্বে থাকা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শাহ আলমকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফ ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাহ আলম পাঠানের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে জড়ো হন। তখন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শাহ আলম ১১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। গত ২ নভেম্বর মামলাটি থানায় নথিভুক্ত হয়। ওই মামলার পাঁচ আসামিকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে।

একটি হলফনামায় বাদী উল্লেখ করেন, লিখিত এজাহারে মাসুদ, জোবায়ের, মামুন ও জসিম উদ্দিনের নাম আসামির শ্রেণিভুক্ত ছিল না। অসাবধানতার কারণে চারজনের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁদের চারজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।

আরেকটি হলফনামায় বলা হয়, আসামি শামসুল আরেফিন মিয়া ২০১৪ সালে উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি, সাবেক সদস্যসচিব ও ২০০৩ সালের উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। অসাবধানতাবশত ভুলের জন্য তিনি (শাহ আলম) অনুতপ্ত এবং অনুশোচনা প্রকাশ করছেন।

তবে বিষয়টি জানাজানির পর সমালোচনামুখর হন বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, শাহ আলম ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে কেক কেটে মুজিব বর্ষ পালন করেন। তাঁর বাবা মো. ইয়াছিন পাঠান উপজেলার চাতলপাড় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

নাসিরনগর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইয়াছিন মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, শাহ আলম মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হলফনামা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় যাঁরা ছিলেন, এখন তাঁরাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে লিপ্ত।

তবে কৃষক দলের সদস্যসচিব শাহ আলম পাঠান বলেন, ‘পাঁচজনকে মামলায় ভুলবশত সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই হলফনামা দিয়েছি। জেলা কৃষক দলের কাছে তথ্য গিয়েছে যে আমি টাকার বিনিময়ে এমন করেছি, যা মোটেও সত্য নয়। স্থানীয় বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মূল ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ