অদম্য তানিশার কাছে হার মানল প্রতিবন্ধকতা
Published: 11th, July 2025 GMT
তানিশার মেধা ও আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করেছে সীমাবদ্ধতা কখনো লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হতে পারে না। পুরো নাম জাইমা জারনাস তানিশা। সে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। তার স্কুল ঘাটাইল উপজেলার সালেহা ইউসুফজাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
তানিশার বাবা জয়নাল আবেদীন প্রকৌশলী। কর্মরত আছেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। মা মাফুজুন নাহার বিউটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ঘাটাইল সদর ইউনিয়নের কমলাপাড়া গ্রামে তাদের বাস। শিক্ষিত এই দম্পত্তির এক ছেলে, এক মেয়ে। তানিশা ছোট। ভাই এস এম মারুফ ফারদিন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।
নশ্বর পৃথিবীর ভালো-মন্দ শোনা এবং বলার ক্ষমতা জন্ম থেকেই সৃষ্টিকর্তা তাকে দেননি। তবে দিয়েছেন প্রখর মেধাশক্তি। তানিশার মা বলেন, ‘সন্তান প্রতিবন্ধী এটা কখনো মাথায় আনিনি। ও সমাজে বেড়ে উঠছে আট-দশটা শিশুর মতোই।’
তানিশার শিক্ষাজীবন শুরু ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্টের প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘প্রয়াস’ থেকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছিল সেখানেই। এরপর নবম শ্রেণিতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় ঘাটাইল সালেহা ইউসুফজাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মনসুর আলী বলেন, ‘বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় ক্লাসের পড়া কিছুই বুঝতো না তানিশা। বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্লাসে তার কাছে গিয়ে খাতায় লিখে সমস্যা জানতে চাইতাম। সেও তার সমস্যা খাতায় লিখে দিত। সমাধান করে দিতাম। মেয়েটা অনেক মেধাবী। তাই তার অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া শুরু করলাম। ওকে ওর সহপাঠিরাও অনেক সাহয্য করতো। মিশুক প্রকৃতির একটা মেয়ে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি একটু বেশি যত্নবান হওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া ছিল। তানিশা মেয়েটা অত্যন্ত নম্র, ভদ্র। লেখাপড়ার প্রতি ছিল ওর অনেক আগ্রহ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তানিশাসহ তার মা-বাবাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ইউএনও অফিসে। দেওয়া হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। সেখানেই বন্ধ মুখের ভাষা সে খোলে কাগজে-কলমে। গোটাগোটা অক্ষরে লিখে দেয় তার স্বপ্নের কথা ‘ডাক্তার হতে চাই।’
বাংলা অবিধান থেকে তানিশারা একদিন ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটা তুলে দেবে- এমনটাই আশা ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদের। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী শব্দটা বলতে এবং শুনতে নারাজ। সামনের সারিতে থেকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে তানিশারা। এমন হাজারো তানিশা হাল ধরবে আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণে। তানিশা হোক বিশেষ শিশুদের অনুপ্রেরণার নাম। ওর স্বপ্নের মতোই বড় হোক তানিশা।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট-১ আসনে আরিফুল হকের নির্বাচনী প্রচার
আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা। সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছেন দুইবার। বর্তমানে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে সব সময় রহস্য রেখে কথা বলতেন আরিফুল হক। তবে গতকাল শুক্রবার তিনি বিষয়টি খোলাসা করেছেন।
নগরীর বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন আরিফুল হক। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
নামাজ শেষে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে আরিফুল হক বলেন, ‘এম সাইফুর রহমান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। মসজিদটির উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।’
আরিফুল হক জুমা শেষে ‘ইজাজত’ নিয়ে প্রচার শুরুর কথা মুসল্লিদের জানান। দল চাইলে তিনি সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে মন্তব্য করেন। যদিও বক্তব্যে আরিফুল হক এ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চান বলে জানান।
আরিফুল হক জানান, কোনো কারণে তারেক রহমান এখানে আসতে না চাইলে তিনি নির্বাচন করবেন। পরে সমকালকে সাবেক এ মেয়র বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সিলেটের মুরুব্বিয়ানসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে দোয়া চেয়ে ইজাজত নিয়ে প্রচার শুরু করেছি।’