বাংলাদেশের কাছে হেরে ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বে শেষ হয়ে গিয়েছিল ভারতের। ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলীরা দেশে ফেরার আগেই দেশটির মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছিল, যেখানে উদীয়মান ক্রিকেটাররা বলছেন– ‘আগলা ওয়ার্ল্ড কাপ হাম লে-য়াঙ্গে’। বিজ্ঞাপনটি জাদুর মতো কাজ করেছিল কিনা, জানা নেই। তবে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ঠিকই ভারত জিতেছিল। ক্রিকেট খেলুড়ে ভালো দেশের পরিকল্পনা ও অর্জন এ রকমই হয়ে থাকে। এক বিশ্বকাপ শেষ করে পরের বিশ্বকাপের পরিকল্পনা হাতে নেয়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ।
আত্মবিস্মৃত জাতি হিসেবে বাঙালির যে দুর্নাম আছে, বিসিবি কর্মকর্তাদের কার্যক্রম দেখলে তাই মনে হতে পারে। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি থেকে বিসিবি কোনো শিক্ষা নেয়নি, সে প্রমাণ দেখাতে পারবে না কেউ। জাতীয় দল নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ মাথায় রেখে দল গঠন করার নির্দেশনা নেই বোর্ডের। বিসিবি পরিচালনা বিভাগ জাতীয় দলের ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সিরিজ-পরবর্তী বিশ্বকাপকেন্দ্রিক করার উদ্যোগ নিলেও ক্রিকেটারদের পুল সেভাবে করা হচ্ছে না। নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক জানান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ হওয়ায় বিসিবির কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বকাপের দল গোছানোর কার্যক্রম শুরু করবেন তারা।
২০২৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়াতে হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তার আগে ২০২৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় হবে টি২০ বিশ্বকাপ। জাতীয় দলের সিরিজগুলো সেভাবে সাজাতে চেষ্টা করছে বিসিবি। এ বছর বেশির ভাগ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হবে ওয়ানডে ও টি২০ ম্যাচের। জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হবে টেস্ট সিরিজ। এ বছর মোট ১৮টি করে টি২০ ও ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হবে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, মে মাসে পাকিস্তান সফর থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করা গেলে ভালো, ‘আমাদের পরিকল্পনা অন্য দেশের মতো হয় না। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে ২৭ বিশ্বকাপের পরিকল্পনা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ হচ্ছে উল্টো। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে গেছে বিপিএল টি২০ ম্যাচ খেলে। বিপিএলে বেশির ভাগ দলের বোলিং ছিল নিম্নমানের। গত বছর ঢাকা দলে খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই এহসান নামের ৪৩ বছর বয়সী একজন বোলার নিয়েছিলেন। এবার বিদেশি ভালো বোলার খেলেনি। বিপিএল খেলে ব্যাটারদের আসলে কোনো লাভ হয়নি। অবসর নেওয়া কোনো ক্রিকেটার বিপিএলে থাকা উচিত না। এ ব্যাপারে বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দুটি ভিন্ন সংস্করণের বিশ্বকাপ আছে। এখন থেকে দল প্রস্তুত করা না হলে এবং বিকল্প খেলোয়াড় না বাড়ালে কোনো দিনই আমরা শক্তিশালী দল হতে পারব না।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল বলেন, সংস্করণ ভাগ করে ক্রিকেটার নিতে হবে। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশে একজন একটি সংস্করণে ভালো করলে বাকি দুই সংস্করণে খেলিয়ে দেয়। আফগানিস্তান সেটা করে না। ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহরা ওয়ানডে খেলে; টি২০ বা টেস্টে খেলে না। তিন সংস্করণে খেলবে তিন থেকে চারজন ক্রিকেটার। এই কৌশল আফগানিস্তান নিতে পারলে আমরা কেন পারি না। ওদের থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট বেশি হয়। অনেক খেলোয়াড় আছে কিন্তু মান কম।’
মান কম নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যারা কাজ করেছে, তারা ক্রিকেটকে পিছিয়ে দিয়েছে। কারণ তারা হারতে চায়নি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজ থাকলেও মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসানকে আইপিএল থেকে নিয়ে এসেছে। বর্তমান নির্বাচক প্যানেল একমাত্র লিটনকে বাদ দেওয়া ছাড়া কোনো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আমার মতে, নির্বাচকদের উচিত হবে এখন থেকে বিশ্বকাপকেন্দ্রিক আলাদা দল গড়ে তোলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি বিদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে, তারে না এনে খেলতে পারলে ভালো। এতে জাতীয় দলে বিকল্প ক্রিকেটার বাড়বে। বিকল্প বাড়লে আন্তর্জাতিক পারফরম্যান্স ভালো হবে। আরেকটা বিষয়– ভবিষ্যতে যারা খেলবে, তাদের পেছনে বিনিয়োগ করলে ভালো।’ সমালোচনার ভয়ে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সাহস করেন না নির্বাচকরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় দল র স স করণ দল র স ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ মারধরের ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী মো. গোলাম আজম ফয়সাল চিকিৎসা কেন্দ্রেই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। হামলার পর গুরুতর আহতাবস্থায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।
আরো পড়ুন:
তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা কেন্দ্রের ২৩ নম্বর কক্ষে ফয়সাল ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। প্রথমে একজন বহিরাগত এসে ফয়সালের পরিচয় নিশ্চিত করে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই ৭-৮ জন কক্ষে প্রবেশ করে ফয়সালকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে এবং কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মারধর শুরু করে।
এক পর্যায়ে তারা ফয়সালকে টেনেহিঁচড়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে আসে এবং এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। মারধর শেষে যাওয়ার সময় যারা হামলার দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী গোলাম আযম ফয়সাল বলেন, “হামলাকারীদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ‘জনি, আর মারিস না’ বলে থামায়। চলে যাওয়ার সময় তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দিয়ে যায়।”
নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকি। খুব আতঙ্কে দিন পার করছি।” হামলাকারীদের কাউকে চেনেন না বলে মামলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি। তিনি বলেন, “ফয়সাল আগে আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে যেত বলে আমরা শুনেছি। এ ঘটনায় আমরা সবাই আতঙ্কিত। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে বহিরাগতরা অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিকভাবে প্রহার করেছে। আমরা জনি নামে একজনের কথা শুনেছি, যার নেতৃত্বে এই হামলা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা পুলিশের সহায়তায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমি মাত্র বিষয়টি জানতে পারছি। এ বিষয়ে প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলব। এছাড়া ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গতকাল পুলিশর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। তারা নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে কাজ করছে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী