বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম সাকিব আল হাসান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে এই অলরাউন্ডার এখনও ওয়ানডে এবং টেস্টকে বিদায় বলেননি। তবে এশিয়ান লিজেন্ডস লিগে দেখা যাবে সাকিবকে। মূলত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেওয়া ক্রিকেটারদের নিয়েই এই টি-টোয়েন্টি লিগটি অনুষ্ঠিত হয়।
এই আসরের দল এশিয়ান স্টারসের জার্সিতে মাঠে মাতাবেন সাকিব। এই লিগের অফিশিয়াল মিডিয়া পার্টনার স্পোর্টসকিডা নিশ্চিত করেছে ব্যাপারটি। আগামী লিগটি ১০ মার্চ শুরু হতে হচ্ছে যাচ্ছে এবারের এশিয়ান লিজেন্ডস লিগ। এই টুর্নামেন্টে বাঙ্গালদেশী ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া ‘বাংলাদেশ টাইগার্সের’ নামেও একটি দল রয়েছে। যে দলে তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো তারকা ক্রিকেটাররা খেলবেন। ফলে বাংলাদেশ টাইগার্সের বিপক্ষে খেলতে দেখা যাবে সাকিবকে।
নিজেদের সামাজিক মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে স্পোর্টসকিডা সাকিবের ছবি দিয়ে লিখে, “সাকিব আল হাসান ২০২৫ সালের এমপিএমএসসি এশিয়ান লিজেন্ডস লিগ টি২০-তে এশিয়ান স্টার্সের হয়ে খেলতে যাচ্ছেন!
প্রখ্যাত অলরাউন্ডার প্রথমে বাংলাদেশ টাইগার্সের প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছিলেন, তবে এশিয়ান স্টার্স দ্রুততার সাথে তাকে দলে ভেড়ানো নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে আসন্ন মৌসুমের জন্য।
সাকিবকে ব্যাট-বল হাতে মাঠে দেখতে মুখিয়ে আছেন?
এমপিএমএসসি এশিয়ান লিজেন্ডস লিগ টি-টোয়েন্টির সব রোমাঞ্চকর অ্যাকশন দেখতে এশিয়ান লিজেন্ডস লিগ এবং স্পোর্টসকিডার সাথে থাকুন, যেটি ২০২৫ সালের ১০-১৮ মার্চ নাথওয়াড়া অনুষ্ঠিত হবে!”
কদিন আগে লিজেন্ড নাইন্টি টুর্নামেন্টে দুবাই জায়ান্টসের হয়ে খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের তারকা সাকিবের। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নিজেকে সরিয়ে নেন এই অলরাউন্ডার।
অন্যদিকে সাকিবের সাথে এশিয়ান স্টারসের হয়ে খেলতে দেখা যাবে আরেক বাংলাদেশী ক্রিকেটার অলক কাপালিকে। যেখানে তারা সতীর্থ হিসেবে পাবেন ভারতের কেদার যাদব, শাহবাজ নাদিম, শ্রীলঙ্কার দিলশান মুনাবিরা, লাহিরু থিরিমান্নে, শেহান জয়াসুরিয়া এবং আফগানিস্তানের হামিদ হাসানকে।
এদিকে বাংলাদেশ টাইগার্সের জার্সিতে নামবেন তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুল (অধিনায়ক), নাঈম ইসলাম, নাদিফ চৌধুরী, আরিফুল হক, জিয়াউর রহমান, শুভাগত হোম, তুষার ইমরান, ধীমান ঘোষ, মেহেদী মারুফ, আবুল হাসান রাজু, মুক্তার আলী, ইলিয়াস সানি, জুবায়ের হোসেন, শফিউল ইসলাম এবং মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন।
আগামী ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ টাইগার্স ও এশিয়ান স্টারসের ম্যাচ। এ ছাড়া ১০ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় ইন্ডিয়ান রয়্যালসের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ টাইগার্স। ১১ মার্চ আফগানিস্তান পাঠানস এবং শ্রীলঙ্কান লায়ন্সের বিপক্ষে তামিম, আশরাফুলরা খেলবেন ১৪ মার্চ। দুটি করে এলিমিনেটর ও কোয়ালিফায়ার শেষে ১৮ মার্চ হবে ফাইনাল।
সাকিব গত বছরের (২০২৪) সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে গিয়ে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব। একই সাথে জানান পরের মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে আগ্রহী তিনি। তবে রাজনৈতিক কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেরা হয়নি তার।
এমনকি কদিন আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) খেলার জন্য লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জে নাম নিবন্ধন করেছিলেন সাকিব। তবে একদিন পরেই সেটি প্রত্যাহার করে নেন।
গতবছর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লিগের হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাকিব। এরপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সেই আওয়ামী লীগ সরকার পতিত হলে আর দেশে ফিরতে পারেননি দেশ সেরা এই ক্রিকেটার।
এশিয়ান স্টারস- সাকিব আল হাসান, অলক কাপালি, দিলশান মুনাবিরা, সৌরভ তিওয়ারি, মেহরান খান, লাহিরু থিরিমান্নে, কেদার যাদব, শেহান জয়াসুরিয়া, মাহবুব আলম, আয়ান খান, শাহবাজ নাদিম, সেকুগে প্রসন্ন, পারবিন্দার আওয়ানা, হাশতি গুল, হামিদ হাসান এবং অভিমন্যু মিঠুন।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫