হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বৈঠকে উত্তেজনা যত বাড়ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখের হাসি ততোই চওড়া হচ্ছিল। খুশিতে হয়তো তিনি বগলও বাজিয়ে থাকতে পারেন। কারণ ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে এতোটা অপদস্থ কখনোই হতে হয়নি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে। ওই বৈঠকের পর কিয়েভকে সামরিক সহয়তা ওয়াশিংটন বন্ধ করে দিতে পারে বলেও জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের সূত্র।
রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আর্থিক ও মানবিক সহায়তার পাশাপাশি আনুমানিক ৬৪ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে।
জার্মান গবেষণা সংস্থা কিয়েল ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে মোট মার্কিন সাহায্য ১১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। অথচ একই সময় মোটি ইউরোপীয় অবদানের পরিমাণ ১৩২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউরো।
আরো পড়ুন:
তুরস্কে রুশ-মার্কিন বৈঠক, ‘গা জ্বলছে পশ্চিমা এলিটদের’
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার ঘোষণা
হোয়াইট হাউসে ঘটনাটি ঘটার মাত্র কয়েকদিন আগে এবং পুতিনের পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের তৃতীয় বার্ষিকীতে রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের উত্থাপিত এই প্রস্তাবটি ৯৩টি দেশ সমর্থন করে, ১৮টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয় এবং ৬৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এই পদক্ষেপের বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ছিল রাশিয়া এবং তার নিকটতম মিত্ররা - উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, বেলারুশ, নিকারাগুয়া এবং অপ্রত্যাশিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমা কূটনীতিকদের হতবাক করে দিয়েছে। কারণ ধরে নিয়েছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতি তার দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন বজায় রাখবে।
প্রস্তাবে রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধাপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে এবং তাদের আক্রমণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের দায় স্বীকার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পুতিনের নেতৃত্ব শৈলীর প্রশংসা করে আসা ট্রাম্প এই পদক্ষেপকে সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
তিন বছর ধরে ক্রেমলিন জেলেনস্কিকে একজন বেপরোয়া, অযোগ্য নেতা হিসেবে চিত্রিত করে আসছে। শুক্রবার ওয়াশিংটনে যে দৃশ্যপট দেখা গেছে - ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তার জন্য জেলেনস্কিকে তিরস্কার করছেন। এর ফলে কিয়েভ আমেরিকান সহায়তা বন্ধের সম্ভাব্য সম্ভাবনার মুখোমুখি হচ্ছে।
ক্রেমলিনের জন্য হোয়াইট হাউসের সংঘর্ষ ছিল একটি প্রচারণামূলক অভ্যুত্থান। রাশিয়ান কর্মকর্তারা এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ওভাল অফিসের সংঘর্ষকে বিশ্বে ইউক্রেনের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থানের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
পুতিনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এক পোস্টে লিখেছেন: “ট্রাম্প .
টেলিগ্রামে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা লিখেছেন, “ট্রাম্প এবং ভ্যান্স যেভাবে সেই বদমাশকে আঘাত করা থেকে বিরত ছিলেন তা সংযমের এক অলৌকিক ঘটনা।”
পুতিনের তরফ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য আসেনি। তিনি সম্ভবত সন্তুষ্টির সাথে ফলাফলটি দেখছেন।
ক্রেমলিনের চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত একটি সূত্র বলেছে, “পুতিনের এখনই খুব বেশি কিছু বলার দরকার নেই। এটা স্পষ্ট যে, তিনি অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছেন এবং এখন বিশ্বাস করেন যে তিনি ইউক্রেনের কাছ থেকে আরো বড় দাবি আদায় করতে পারবেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পুতিনের যেকোনো সামরিক যুদ্ধের চেয়েও ওই বৈঠকটি ছিল তার জন্য বড় জয়।”
ঢাকা/শাহেদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন র ক সহ য ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে
দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।
এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/সাইফ