দখলমুক্ত ফুটপাত নাগরিকের অধিকার। আইন অনুযায়ী এই অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। অথচ চট্টগ্রামে ফুটপাত বাণিজ্যে লিপ্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে দেওয়া ইজারায় ফুটপাত, নালা ও উদ্যানে অন্তত গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক দোকান। এগুলো উচ্ছেদে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ফুটপাত, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে আবারও টেন্ডার (দরপত্র) আহ্বান করা হয়েছে। এতে ৪ শতাধিক আবেদন পত্র জমা পড়েছে। আবেদনের অধিকাংশই বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অতীতের মতো ফুটপাত, নালা, উদ্যানে দোকান নির্মাণ ও বিলবোর্ড ব্যবসার হিড়িক পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, সৌন্দর্যবর্ধনে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে শুধু কাজ দেওয়া হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চসিক এলাকায় বিভিন্ন সড়ক বিভাজক, ফুটপাত, ফুটওভার, ফ্লাইওভারের ওপর ও নিচের অংশ, পরিত্যক্ত খালি স্থান, উন্মুক্ত স্থান, জলাশয়ে সৌন্দর্যবর্ধন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রস্তাব আহ্বান করা হয়।
দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডকে ক্লিন, গ্রিন ও স্বাস্থ্যকর সিটির আওতায় আনতে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন মেয়র। দরপত্রে ৯টি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে– সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে চসিক অর্থায়ন করবে না। সৌন্দর্যবর্ধনের বিনিময়ে বিজ্ঞাপনী ফলক স্থাপন করতে পারবে ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া দৃষ্টিনন্দন, পরিবেশবান্ধব ও দেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২টি ওয়ার্ডে চার শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। চট্টগ্রাম নগরের সড়ক বিভাজকে (মিড আইল্যান্ড) সৌন্দর্যবর্ধন ও ফুটপাতে যাত্রীছাউনি নির্মাণে অনুমোদন চেয়েছে জে এম পাবলিসিটি। বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানটির মালিক চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তীর স্ত্রী নিহার সুলতানা। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও চসিকে বিলবোর্ড বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
টাইগার পাস এলাকার এক যুবদল নেতা বলেন, এর আগে দরপত্র কেনার অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। তার পরও দুটি এলাকায় কাজ পাওয়ার জন্য তিনি আবেদন করেছেন। তাঁর জানা মতে, অধিকাংশ আবেদনই করেছেন বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা।
এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে সৌন্দর্যবর্ধন ও আধুনিকায়নের জন্য নগরের ৪১টি এলাকা ইজারা দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। কাজ পাওয়াদের অধিকাংশ ছিলেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা, পরিবহন মালিক সমিতির নেতা ও সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠান। এর পর ছয় মাস সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজনের সময় নগরের ১২টি জায়গা ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয়টিই পেয়েছিলেন প্রশাসকের ঘনিষ্ঠ দলীয় লোকজন ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। পরে মেয়র রেজাউল করিমের সময়ও ফুটপাত ইজারা দেওয়া হয়। তবে দরপত্র ছাড়াই এসব জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
চসিকের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কেন দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মেয়র ডা.
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রাস্তা বা ফুটপাত বন্ধ করে কোনো কিছু অনুমোদন দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে কমিটি গঠন করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দরপত র র জন য নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//