ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশিদের গুলি করিয়া হত্যার ঘটনায় আমরা বরাবরই উদ্বেগ জানাইয়া আসিয়াছি। হতাশার বিষয়, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ কিংবা হত্যা শূন্যের কোঠায় অবনমনের প্রতিশ্রুতি ভারতের তরফ হইতে বহুবার দেওয়া হইলেও উহা রক্ষিত হয় নাই। এমনকি সর্বশেষ ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকেও অভিন্ন অঙ্গীকার করা হইয়াছিল। উক্ত বৈঠকের সপ্তাহ অতিক্রান্ত না হইতেই গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক আল-আমীন নিহত হইয়াছেন। বস্তুত গত দেড় দশকে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ হইতে এইরূপ হত্যাকাণ্ড লইয়া উদ্বেগ প্রকাশের পর ভারতের তরফ হইতে তাহা ‘শূন্য পর্যায়ে অবনমন-এর’ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে। কেবল বিএসএফপ্রধান নহে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ হইতেও একাধিকবার অনুরূপ প্রতিশ্রুতি আসিয়াছে। ইহার পরও সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হইবার নেপথ্যে প্রতিবেশী দেশটির সদিচ্ছার ঘাটতি ভিন্ন কী থাকিতে পারে? 

মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাইতেছে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পালাবদলের পর কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তের কতিপয় স্থানে উত্তেজনা, তৎসহিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়াছে। ছয় মাসে এক সিলেট সীমান্তেই ৯ হত্যাকাণ্ড ঘটাইয়াছে বিএসএফ। বস্তুত সীমান্ত হত্যাকাণ্ড যেন প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হইয়া বিঁধিয়া রহিয়াছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ১৪ বৎসর পূর্বে ঝুলিয়া থাকা সেই ফেলানীর ছবি এখনও গাঁথিয়া রহিয়াছে মানুষের হৃদয়পটে। সেই ঘটনা দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করিলেও বিস্ময়কর হইলেও সত্য, ফেলানী হত্যার সহিত সংশ্লিষ্ট বিএসএফ সদস্যদের বেকসুর খালাস দিয়াছেন ভারতের আদালত। ইহার পর মামলা দেশটির সুপ্রিম কোর্টে গড়াইয়াছে বটে; বিচার সম্পন্ন হয়নি অদ্যাবধি। 

আমরা দেখিয়াছি, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলি সীমান্তে প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করিলেও ভারত তাহাতে কর্ণপাত করিতেছে না। ইহা সত্য বটে, সীমান্তে প্রাণঘাতী পরিস্থিতির অন্যতম কারণ চোরাচালান। তজ্জন্য উভয় দেশেই আইন ও আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা বিদ্যমান। গত সেপ্টেম্বর ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসও বলিয়াছেন, সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা বা পরিস্থিতির সৃষ্টি হইলে উহার সমাধানে আইনি পথ রহিয়াছে। কাহাকেও হত্যা করা কোনো সমাধান নয়। তিনি যথার্থই বলিয়াছেন, এই সকল হত্যাকাণ্ড একতরফা এবং এই হত্যাকাণ্ড সাধারণ মানুষের প্রতি এক ধরনের নিষ্ঠুরতা। আমরা মনে করি, কারণ যাহাই হউক না কেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এহেন হত্যাকাণ্ড আর চলিতে দেওয়া যায় না। 

বাংলাদেশের তরফ হইতেও ভারতকে কঠোর বার্তা দেওয়া জরুরি। ইতোপূর্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এই ক্ষেত্রে ব্যর্থ হইলেও আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকার তৎপর হইবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বলিয়াছেন, তিনি সীমান্তে ফেলানীর মতো হত্যাকাণ্ড আর দেখিতে চাহেন না। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির মহাপরিচালক সীমান্তে হত্যা অব্যাহত থাকিলে বিজিবি আরও কঠোর হইবার যেই বার্তা দিয়াছেন, উহাকেও আমরা ইতিবাচক মনে করি। ভারতের প্রতিবেশী চীন বা পাকিস্তানেরও সীমান্ত রহিয়াছে। এমনকি দৃশ্যত ‘বৈরী’ সীমান্তেও এমন গুলি চলে না। বাংলাদেশ-ভারত পরস্পরকে যেই ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ বিবেচনা করিয়া থাকে, তথাকার সীমান্তে এইরূপ রক্তপাত আর মানিয়া লওয়া যায় না। আমরা দেখিতে চাহিব, ভারত সরকার বিলম্বে হইলেও তাহাদের ‘ট্রিগার হ্যাপি’ সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সামলাইবার ব্যবস্থা লইবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসএফ হইল ও র ঘটন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁয় ১০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ

নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। 

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভোরে ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন সীমান্ত পিলার ২৫৬/৭ এস কাছ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হলে বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং আটজন নারী। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন পত্নীতলা ১৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

আরো পড়ুন:

গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ

বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ

আটকরা হলেন—আছমা বেগম (৪০), খাদিজা বেগম (৩৪), পাখি বেগম (২৪), রুমা বেগম (২৫), কাকলি আক্তার (২৭), রুজিনা আক্তার (৩৩), কোহিনুর বেগম (২৬), নাসরিন বেগম (৩৩), মঞ্জুরুল ইসলাম (৩৬), সুমন হোসেন (২৭)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক।

বিজিবি জানিয়েছে, আগ্রাদ্বিগুন বিওপির টহল কমান্ডার জেসিও সুবেদার মো. জিহাদ আলীর নেতৃত্বে একটি টহল দল সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মহেষপুরে ওই ১০ জনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে যান। মুম্বাই শহরে পুরুষ দুজন রাজমিস্ত্রি হিসেবে এবং নারী আটজন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তাদেরকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। গত ২৯ জুলাই ভারতের হরিবংশীপুর বিএসএফ ক্যাম্পে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বিএসএফ ওই ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিলে বিজিবি টহল দল তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা/সাজু/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুজিবনগর সীমান্তে ১৭ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর বিএসএফের
  • চুয়াডাঙ্গায় বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক, ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
  • দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ 
  • নওগাঁয় ১০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
  • নওগাঁর সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • পঞ্চগড়ের দুই সীমান্ত দিয়ে আরও ১৭ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ