দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডকে ক্রিকেটের দুই দুর্ভাগা দলই বলা চলে। প্রোটিয়ারা শেষ মুহূর্তে জেতা ম্যাচ হেরে বসার অভ্যাসের কারণে ‘চোকার্স’ তকমাই পেয়ে গেছে। কিউইরাও সম্প্রতি বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ভাগ্য বিড়ম্বিত দু’দল আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় সেমিতে মুখোমুখি হবে। দুবাইয়ের মতো এখানে রানের জন্য সংগ্রাম করতে হবে না। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের পিচে রান উৎসব হবে বলেই আভাস মিলেছে। পাকিস্তানের মাটিতে এটাই আসরের শেষ ম্যাচ হওয়ায় সবার আলাদা নজর থাকবে লাহোরে। কারণ, প্রথম সেমিতে ভারত জেতায় ফাইনালে ভেন্যু দুবাই নিশ্চিত হয়ে গেছে।

কাকতালীয়ভাবে এই দু’দল এই একটি মাত্র আসরের শিরোপা জিতেছিল। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় বসা প্রথম আসরে (তখন নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি) শিরোপা জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০০ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এবার কিন্তু দু’দলই দারুণ ক্রিকেট খেলছে। স্বাগতিক পাকিস্তানকে ছিটকে দিয়ে ‘এ’ গ্রুপ থেকে ভারতের পেছন রানার্সআপ হয়ে সেমিতে এসেছে মিচেল স্যান্টনারের নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড। আর টেম্বা বাভুমার দক্ষিণ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়াকে টপকে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করে শেষ চারে এসেছে। দু’দলের শক্তিও প্রায় একই রকম। প্রতিটি বিভাগই তাদের ভারসাম্যপূর্ণ। বোলিং বৈচিত্র্যের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা কিঞ্চিৎ এগিয়ে থাকবে। দু’দলের ব্যাটিং লাইনআপ এবং ফিল্ডিং প্রায় সমানই বলা চলে। লাহোরের পিচ মন্থর হলেও দুবাইয়ের মতো এতটা টার্ন এখানে পাওয়া যায় না। তার পরও পার্থক্যটা গড়ে দিতে পারেন স্পিনাররা। এর পরও কিউইরা আজ বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামতে পারে। কয়েক দিন আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে এই স্টেডিয়ামেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল তারা।

কেন উইলিয়ামসন দুর্দান্ত ফর্মে আছেন বলেই কিউইদের ব্যাটিং শক্তি বেড়ে গেছে। ডেভন কনওয়ে, উইলি ইয়াংদের সঙ্গে রাচিন রবীন্দ্র, গ্লেন ফিলিপসরাও ভালো করছেন। প্রোটিয়াদের ব্যাটিং আরও বিধ্বংসী। হেনরিক ক্লাসেন, ডেভিড মিলারদের সঙ্গে নবীন রায়ান রিকেলটন ছন্দে আছেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য একটা দুঃসংবাদ হলো তাদের টপঅর্ডারের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার এইডেন মার্করাম চোটের সঙ্গে লড়ছেন। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফিল্ডিং করার সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর কাভার হিসেবে জর্জ লিন্ডেকে স্কোয়াডে যোগ করা হলেও মার্করামের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে প্রোটিয়ারা।

গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এ বছর হওয়া পাঁচটি ওয়ানডেতে গড় রান উঠেছে ৩১৬। রান উৎসবেও আগে ব্যাট করা দল ২টি এবং পরে ব্যাট করা দল ২টি জিতেছে। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়া একমাত্র ম্যাচেই ভালোই রান উঠেছিল। সোমবার সাউথ আফ্রিকা যখন শহরে পা রাখে, তখন ঝুম বৃষ্টি হয়েছিল। তবে আজ লাহোরের আকাশ পরিষ্কার থাকবে বলেই পূর্বাভাস মিলেছে। এই দু’দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ভ্রমণ। কিউইরা দুই দেশ মিলিয়ে আসরের চার ভেন্যুতেই গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা তিন ভেন্যুতে গেলেও ভারতকে সেমির সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ভেবে দুবাই চলে এসেছিল। পরে আবার লাহোর ফিরে গেছে তারা। ১৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান-দুবাই-পাকিস্তান যাতায়াত করায় বেশ ক্লান্ত প্রোটিয়ারা। 

তবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নন দক্ষিণ আফ্রিকার মারকুটে ব্যাটার হেনরিক ক্লাসেন, ‘শরীরের জন্য এই যাতায়াত হয়তো খুব স্বস্তির ছিল না। তবে আমরা বিশ্রাম নেওয়ার সময় পেয়েছি। পেশাদার ক্রিকেট এমনই; সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়।’ কিউই অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার যদিও কিছুটা নাখোশ। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে যাতায়াত নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ভ্রমণটা বেশি হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে খেলা কঠিন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাণের গানে সালাহর উৎসব

শেষ বাঁশি বাজতেই নেচে-গেয়ে উৎসবে মাতেন সালাহ-অ্যালিসন-এলিস্টাররা। তবে পর্বটা খুব বেশি লম্বা হয়নি। অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক সবাইকে ডেকে মাঠের একটি গোলপোস্টের সামনে জড়ো করেন। আর্নে স্লটের নেতৃত্বে কোচিং স্টাফরাও যোগ দেন সেখানে। গ্যালারি সামনে রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চেইনের মতো করে সারিবদ্ধভাবে দেয়াল বানিয়ে দাঁড়ান সবাই। পুরো এনফিল্ড তখন সমবেত কণ্ঠে গাইতে শুরু করে– You’ll Never Walk Alone...। অলরেডদের হৃদয় থেকে উৎসারিত এ গানেই পূর্ণতা পায় উৎসব।

এ গানের সঙ্গে সঙ্গে অন্য রকম এক আবহ তৈরি হয় সেখানে। বিশ্বের কোনো স্টেডিয়াম ছুঁতে পারবে না এনফিল্ডের এই আবহ। এই আবহ তৈরি অলরেডদের বিশ্বাসে, বছরের পর বছর যারা কেউ কাউকে একা হাঁটতে দেয়নি। রোববার সকাল থেকেই এনফিল্ডের চারপাশে তৈরি হয়েছিল উৎসবের পরিবেশ। আতশবাজি ও লাল আবিরে রঙিন হয়ে উঠেছিল লিভারপুলের আকাশ-বাতাস। আগে থেকেই বন্দর শহরটির দেয়ালে দেয়ালে ঐতিহাসিক গানটির সঙ্গে ‘২০’ লেখা গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়ে গিয়েছিল। 

ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগেই এনফিল্ড চত্বর রীতিমতো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর্নে স্লট, সালাহদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। লাল জার্সি পরা কাতারে কাতারে সমর্থকদের মাঝখান দিয়ে লাল বাসে করে লিভারপুলের ফুটবলাররা স্টেডিয়ামের আঙিনায় প্রবেশ করেন অন্যরকম এক পরিবেশে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমের পর ৩০ বছর ট্রফি জেতেনি তারা। পাঁচ বছর আগে ট্রফি জিতলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উদযাপন হয়েছিল দর্শকশূন্য গ্যালারিতে। তাই এমন অনেক সমর্থক আছেন, যারা প্রিয় ক্লাবকে লিগ জিততে দেখেননি। সেই তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাসটা ছিল বেশি। 

২০তম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব আর্নে স্লট দিয়েছেন সাবেক কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে। এমনকি তিনি সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে পুরো গ্যালারিকে নিয়ে ক্লপের নামে গানও গেয়েছেন। ২০১৫ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর ক্লপ তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ক্লাবটিকে। এর মধ্যে দুবার অবিশ্বাস্য লড়াই করেও মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে ম্যানসিটির কাছে শিরোপা হারাতে হয়েছিল তাদের। ২০২০ সালে জিতলেও সমর্থকদের নিয়ে উল্লাস করতে পারেননি।

ক্লপের লিগজয়ী দলের সদস্য ছিলেন মোহামেদ সালাহ। এবার ভিন্ন স্বাদ পেয়েছেন মিসরীয় এ তারকা। শিরোপা জয়ের পর স্কাই স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে শিরোপা জয়ের অনুভূতি অবিশ্বাস্য। গতবারের (২০২০) চেয়ে এবার শতভাগ ভালো ছিল। এটা অনেক বেশি আনন্দময়। এটা সত্যিই বিশেষ কিছু।’ 

প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জেতা আর্জেন্টাইন তারকা এলেক্সিস ম্যাক এলিস্টারের জন্যও এ শিরোপা বিশেষ কিছু, ‘বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, এখন জিতেছি প্রিমিয়ার লিগ। আমার জন্য সত্যই এটা বিশেষ কিছু। সতীর্থদের ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। আমাদের দলটি সত্যিই অসাধারণ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোলের উৎসবের ম্যাচে বার্সা-ইন্টারের রুদ্ধশ্বাস ড্র
  • জবি ছাত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় আটক তরুণ
  • সুইডেনে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ৩
  • চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও লিভারপুলের কোন খেলোয়াড়েরা পদক পাবেন না
  • বিশ্বের বড় বড় উৎসব কোথায় হয়
  • প্রাগে পুরস্কৃত ‘নট আ ফিকশন’,অনলাইনে মুক্তি ১ মে
  • প্রাণের গানে সালাহর উৎসব
  • ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
  • কানে ‘আলী’, দায়িত্ব নিলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
  • এবার লন্ডনে পুরস্কার জিতল ‘প্রিয় মালতি’