জয়পুরহাটে হাট ইজারায় সিন্ডিকেট, দেড় কোটি টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ
Published: 6th, March 2025 GMT
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর এলাকার প্রসিদ্ধ বালিঘাটা হাট সিন্ডিকেট করে ইজারা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাঁচবিবি পৌরসভার অধীনে থাকা হাটটি ২ কোটি ৭৪ লাখ ১১ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে, যা গত তিন বছরের গড় ইজারামূল্যের চেয়ে মাত্র দুই লাখ টাকা বেশি।
অথচ জয়পুরহাট শহরের নতুনহাট উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে প্রায় ৯ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা বেশি।
গতবারের মতো ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরের জন্য বালিঘাটা হাটের ইজারা পেয়েছেন আবদুল হাকিম মণ্ডল। অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেট করে হাটের ইজারামূল্য বাড়তে দেওয়া হয়নি। প্রায় ৮ কোটি টাকার হাট তিন কোটি টাকার নিচে ইজারা পেয়েছেন তিনি। এ কাজে গোপনে দেড় কোটি টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। পাঁচবিবির ইউএনও ও পৌর প্রশাসক, পৌরসভা পরিচালনা কমিটির সদস্য থানার ওসিসহ কয়েকজন সদস্য ও উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষের কয়েকজন নেতা টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
হাটের ইজারা অনুমোদনের পরপরই বদলি হয়েছেন ইউএনও মো.
পাঁচবিবি পৌরসভার বাজার শাখা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচবিবির বালিঘাটা হাটবারের দিন মঙ্গল ও শুক্রবার। এর মধ্যে মঙ্গলবার শুধু গবাদিপশুর হাট বসে। এদিন গড়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজারের মতো গরু কেনাবেচা হয়। সরকারিভাবে প্রতিটি গরুর হাসিল ৫৫০ টাকা। গতবার ২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরের জন্য ২ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার টাকায় হাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছিল আবদুল হাকিম মণ্ডলকে। আগামী ১৩ এপ্রিল ওই ইজারার মেয়াদ শেষ হবে। গত জানুয়ারি মাসে বালিঘাটা হাটের দরপত্র দাখিল ও চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা হয়।
বালিঘাটা হাট ইজারার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, মোট সাতজন দরপত্র কিনেছিলেন। এর মধ্যে তিনজন দরপত্র দাখিল করেন। তাঁরা হলেন পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আবদুল হাকিম মণ্ডল ও আতাউর রহমান। এর মধ্যে সাইফুল ইসলাম ২ কোটি ৭৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা, আবদুল হাকিম মণ্ডল ২ কোটি ৭৪ লাখ ১১ হাজার টাকা ও আতাউর রহমান কোনো দরই দেননি। গত ২৭ জানুয়ারি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আবদুল হাকিমকে হাটের ইজারার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
পাঁচবিবি পৌরসভার অন্তত ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, আবদুল হাকিম প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি একসময় জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ নির্বাচন করেছেন। তাঁর এক ভাই স্থানীয় বিএনপির নেতা। আগে মেয়রের সঙ্গে আঁতাত করে হাটের ইজারা নিয়েছিলেন। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেট করে হাটের ইজারা নিয়েছেন। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ভাগাভাগির কথা জেনেছেন তাঁরা। সাবেক ইউএনও একাই ৪৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছেন। স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা, থানার ওসিও টাকার ভাগ পেয়েছেন। তবে কে কত পেয়েছেন, তাঁরা জানতে পারেননি।
দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের আমলে দলীয় মেয়র হাবিবুর রহমানের সময় গোপনে কম মূল্যে হাট ইজারা দেওয়ার ঘটনায় আন্দোলন হয়েছিল। উপজেলা নাগরিক কমিটির ব্যানারে তখন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছিলেন। ওই মানববন্ধন থেকে পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকায় হাট ইজারা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।
হাট ইজারা নিতে দরপত্র দাখিল করা পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মানুযায়ী আবদুল হাকিম হাটটি ইজারা পেয়েছেন। তাঁরা কাউকে দরপত্র কেনা ও দাখিলে বাধা দেননি। হাট ইজারায় কোনো সিন্ডিকেট হয়নি। গোপনে টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ অবান্তর।
জানতে চাইলে আবদুল হাকিম মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিয়মনীতি মেনে হাটটি ইজারা পেয়েছি।’ দেড় কোটি টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি উত্তর দেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেড় কোটি ভাগ-বাঁটোয়ারা করে হাট নিলে নিয়েছি। এতে সমস্যা কী?’
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক পৌর প্রশাসক ও ইউএনও মাহমুদুল হাসান বলেন, নিয়মের মধ্য থেকেই হাটটি ইজারা দিয়েছেন। যদি কেউ বাইরে সমঝোতা করেন, তাহলে তাঁদের কিছুই করার থাকে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৪৫ লাখ টাকা ভাগ পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবিবি থেকে বদলি হয়েছি। তবে এ রকম কথা আমিও শুনতে পাচ্ছি। তবে টাকার কথা একদমই সঠিক নয়।’
এদিকে জয়পুরহাট শহরের নতুনহাটটি ৮ কোটি ৮৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৮ টাকায় ইজারা পেয়েছেন শামস মতিন নামের এক ব্যক্তি। এর আগে ২০২৪ সালে জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়ালাকে ২ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার ১১১ টাকায় হাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ইজারামূল্য একলাফে সাড়ে ৬ কোটি বেড়েছে।
জয়পুরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আবু জাফর মো. রেজা বলেন, হাটবাজার ইজারায় কোনো সিন্ডিকেট হতে দেওয়া হয়নি। উন্মুক্ত ডাকের কারণে ইজারামূল্য একলাফে তিন গুণ বেড়েছে। এত দিন উন্মুক্তভাবে হাটটি ইজারা হতে দেওয়া হয়নি। জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, ‘শহরের নতুনহাটের ইজারা মূল্য ৬ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। হাট ইজারায় অনিয়মের অভিযোগ পাইনি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন ড ক ট কর হ ট র ইজ র ইজ র ম ল য হ ট ইজ র ব এনপ র প রসভ র দরপত র ইজ র য় হয় ছ ল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী
অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।
গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।
আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগেগতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।
ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’
সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।
আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে