হামাসকে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ দিলেন ট্রাম্প
Published: 6th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের উদ্দেশ্যে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ বা ‘শেষ সতর্কতা’ জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সতর্কবার্তায় তিনি হামাস নেতাদের গাজায় আটক থাকা সব জিম্মিদের মুক্তি দিতে এবং গাজা ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এই হুমকিটি এমন এক সময়ে এলো যখন হোয়াইট হাউজ ১৯৯৭ সালের পর প্রথমবারের মতো মার্কিন-ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরো পড়ুন:
হামাসের সঙ্গে গোপন বৈঠক ট্রাম্প প্রশাসনের
ভারতীয় পণ্যেও শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের
হোয়াইট হাউজ আলোচনার বিষয়টি বুধবার বিকেলে নিশ্চিত করার কয়েক ঘণ্টাই পরেই হামাসকে ‘লাস্ট ওয়ানিং’ দিলেন ট্রাম্প।
ট্রুথ সোশ্যালে দীর্ঘ একটি পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, “আমি ইসরায়েলকে কাজ শেষ করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা পাঠাচ্ছি, যদি আপনি আমার কথা মতো কাজ না করেন, তাহলে একজন হামাস সদস্যও জীবিত থাকবে না।”
ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরো বলেছেন, “জিম্মিদের মুক্তি না দিলে চড়া মূল্য দিতে হবে”। তবে তিনি ইসরায়েলকে কি ধরনের সহায়তা পাঠাচ্ছেন তা নির্দিষ্ট করে বলেননি।
পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, “সব জিম্মিদের এখনই মুক্তি দিতে হবে, পরে নয়। যাদের হত্যা করেছেন তাদের সবার মরদেহ অবলিম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে, অন্যথায় সবকিছু শেষ।”
ট্রাম্প আরো বলেছেন, “এটি আপনাদের জন্য শেষ সতর্কতা! (হামাসের) নেতৃত্বের জন্য এখন সময় এসেছে গাজা ত্যাগ করার। আপনাদের জন্য এখনও এই সুযোগটি রয়েছে।”
গাজার বেসামরিক নাগরিকদেরও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। পোস্টে তিনি বলেছেন, “এছাড়াও, গাজার জনগণের কাছে (আমার বার্তা): আপনাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে, কিন্তু আপনারা যদি জিম্মিদের আটকে রাখেন তাহলে তেমনটি হবে না। যদি আপনারা তেমন কিছু করেন, তাহলে আপনি মৃত! স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিন।”
বিবিসি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় আটক মার্কিন জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি বৃহত্তর চুক্তির লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জিম্মি বিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহেলার সাম্প্রতিক সময়ে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বুধবার সর্বপ্রথম এ তথ্য প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ আলোচনা ‘অভূতপূর্ব’ ঘটনা। কারণ দেশটি এর আগে কখনো সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেনি। ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী দলটিকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায়’ রেখেছে মার্কিন সরকার।
ফিলিস্তিনের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, হামাস এবং একজন মার্কিন কর্মকর্তার মধ্যে দুটি সরাসরি বৈঠক হয়েছে।
এই আলোচনার লক্ষ্য হলো হামাসের কাছে বন্দি থাকা মার্কিন জিম্মিকে মুক্ত করা। এছাড়া সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। যেটির লক্ষ্য হলো সব জিম্মিকে মুক্ত করা এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র এক্সিওসকে জানিয়েছে, আলোচনা চললেও হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো ধরনের চুক্তি এখনো হয়নি।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বল ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫